ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হবিগঞ্জে ৪ আ.লীগ নেতাকে অব্যাহতি, ১৪ নেতার পদত্যাগ

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
🕐 ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২২

হবিগঞ্জে ৪ আ.লীগ নেতাকে অব্যাহতি, ১৪ নেতার পদত্যাগ

বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় হবিগঞ্জের ৪ সিনিয়র নেতাকে স্বীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ওই ৪ ত্যাগী নেতারা হলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু সাধারণ সম্পাদক, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের ও বানিয়াচঙ্গ উপজেলা আওযামীলীগের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান।

এদিকে ৪ নেতাকে অব্যাহতির খবর প্রকাশের পর পরই হবিগঞ্জ পৌরসভা ওয়ার্ড কমিটির ১৪জন নেতা একযোগে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এনিয়ে হবিগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

শনিবার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু জাহির এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৪ নেতার অব্যহতির কথা জানানো হয়।

একই সাথে হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. আব্দুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ অধিকারী শংকরকে হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার আলীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আঙ্গুর মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের নেতৃত্বে আসন্ন হবিগঞ্জ পৌর, চুনারুঘাট ও বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

অব্যহতি পাওয়া নেতারা বলছেন, ২০১৯ সালে দলের হাই কমান্ড থেকে ক্ষমা পাওয়ার পরেও ২ বছর পর তাদেরকে অব্যহতি দেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। অথচ একই অপরাধ করে জেলা কমিটির সহ সভাপতির পদে একজন বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তারা এই বিষয়টিকে জেলা সভাপতির ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও ‘একচোখা নীতি’ বলে অভিযোগ করেছেন।

জেলা আওয়ামীলীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হবিগঞ্জ পৌরসভার গত নির্বাচনে মেয়র পদে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একই শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন খান ও চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় তাদেরকে স্ব স্ব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

অব্যহতি পাওয়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম বলেন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ গঠনের পর থেকে বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদুল হকের মতো একজন ক্ষনজন্মা মানুষকে পরাজিত করে সেদিন আমি জয়ী হয়েছিলাম। এ বিজয় আওয়ামীলীগের। তারপরেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওযায় দলের হাই কমান্ড থেকে আমাকে শোকজ করা হয়। আমি লিখিতভাবে ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোন কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবো না জানিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি ২০১৯ সালের ২১অক্টোবর এক চিঠিতে ক্ষমা প্রদর্শনের কথা জানান।

২ বছর পর কেন অব্যাহতি দেয়া হলো এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি জেলা যুবলীগের সভাপতির পদে আগ্রহী হওয়ায় জেলা আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতা ও তার কয়েকজন অনুসারী তা মেনে নিতে পারছেন না। ওই শীর্ষ নেতা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বকে তার হাতের মুঠোয় রাখতে চান। আমি কেন্দ্রিয় নেতা জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও আহমদ হোসেনের সাথে সাক্ষাত করে বিষয়টি অবগতি করেছি। তাঁরা সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেছেন। কিন্তু এর আগেই জেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক আমাদেরকে অব্যাহতি দেয়া দুঃখজনক। অথচ জেলা কমিটির সহ সভাপতি সজিব আলী গত ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই সুবিদপুর ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন।তাকে এখনও স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে।

চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের ও বানিয়াচঙ্গ উপজেলা সাধারন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ক্ষমা পাওয়ার পরেও কেন অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কিছুই জানি না।

৪ নেতাকে অব্যহতি প্রসঙ্গে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ কামরুল বলেন, একই অপরাধে কেই পদ থেকে অব্যহতি পাবে আর কেউ পুরস্কার পাবে এ কেমন বিচার। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও যারা আওযামীলীগের জেলা কমিটিতে স্থান পেয়েছে তাদেরকেও অব্যহতি দেয়া হউক।তিনি বলেন, এসব কর্মকান্ড দলকে দুর্বল করবে।

যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী বলেন, কিছু দিন পরেই সম্মেলনের মাধ্যমে মেয়াদোর্ত্তীন পৌর ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে। বর্তমান কমিটিতে যারা বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল এমন ৪ নেতার নাম উল্লেখ করে কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন অব্যহতি দেয়ার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী সজিব আলীর নাম না বলায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রবিবার হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড শাখার সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক (১৪জন) একযোগে পদত্যাগ সম্পর্কে তিনি বলেন, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যাজনিত কারন দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, অব্যাহতি পাওয়া চার নেতাই আওয়ামী লীগের সক্রিয় ও দলের দুঃসময়ের কান্ডারী। তারা ছাত্র জীবন থেকে দলের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু বৃন্দাবন সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস। এছাড়া হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।মোতাচ্ছিরুল ইসলাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। দলকে শক্তিশালী করার পেছনে তার যতেষ্ট অবদান রয়েছে।

বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন খান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহেরও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে।

 

 
Electronic Paper