ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নাচোল বিদ্রোহের নেপথ্যে

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ২:২০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৮

নাচোলের চণ্ডীপুর গ্রামে ছিল সাঁওতাল নেতা ও প্রথম সাঁওতাল কমিউনিস্ট মাতলা মাঝির বাড়ি। সাঁওতালদের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। নাচোল এলাকায় মিত্র পরিবারের অনেক জমিজমা ছিল। রমেন্দ্র মিত্রের ঠাকুর্দার আমলে এ বরেন্দ্রভূমি চাষাবাদের জন্য সাঁওতালদের এনে বসতি স্থাপন করা হয়। ইলা মিত্র ও রমেন্দ্র মিত্র এ মাতলা মাঝির গোপন আশ্রয়ে থেকে চণ্ডীপুর গ্রামে এক শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন। মাতলা মাঝির বাড়িটি ছিল এ আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়।

মুসলীম লীগ সরকারের দমন নীতি ও শহরের মধ্যবিত্ত নেতাদের আপোসমুখিতার কারণে যে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়েছিল, কমরেড ইলা মিত্র ও রমেন্দ্র মিত্রের পৃথক নেতৃত্বে নাচোল ও তার আশপাশের অঞ্চলে তার জের ধরে শুরু হলো এক নতুন আন্দোলনের। ১৯৪৮ সালে ইলা মিত্র ছিলেন অস্তঃসত্ত্বা। সন্তান প্রসবের জন্য তিনি গোপনে কলকাতায় যান। পুত্র সন্তান জন্মের মাসখানেকের মধ্যেই ছেলেকে শাশুড়ির কাছে রামচন্দ্রপুর হাটে রেখে তিনি আবার ফিরে আসেন নাচোলে।
১৯৪৯ সালে তাদের নেতৃত্বে হাজার হাজার ভূমিহীন কৃষক সংগঠিত হয়। সবাই মিলে জোতদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে জোতদার, মহাজনদের দল। এ বছর কৃষকের ধান জোতদারদের না দিয়ে সরাসরি কৃষক সমিতির উঠানে তোলা হয়। ফলে কোথাও কোথাও সংঘর্ষ দেখা দেয়। নাচোলে সাঁওতাল ও ভূমিহীনদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এক শক্তিশালী তীরন্দাজ ও লাঠিয়াল বাহিনী। ইলা মিত্র ও রমেন্দ্র মিত্রে ছিলেন নেপথ্যে।
৫ জানুয়ারি, ১৯৫০ পুলিশ বাহিনীর একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল কনস্টেবল নাচোলের চণ্ডীপুর গ্রামে আসে। গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে পুলিশ বাহিনীকে পাল্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে উম্মত্ত গ্রামবাসী ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করে। এ ঘটনার পর নাচোলের চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার দুই দিন পর ৭ জানুয়ারি শুরু হলো পুলিশের প্রতিশোধ। দুই হাজার সেনা কাছাকাছি রেলস্টেশনের কাছে উপস্থিত হয়ে অভিযান শুরু করে। ১২টি গ্রাম ঘেরাও করে তছনছ করে, ঘরবাড়ি ধ্বংস করে, চারদিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে অনেক গ্রামবাসীকে। নারীদের ওপর যৌন অত্যাচার এমনকি শিশুদের ওপরও নির্যাতন করে।
অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে তীর ধনুকে সজ্জিত সাঁওতাল, হিন্দু ও মুসলিম কৃষকদের বেশিক্ষণ যুদ্ধ চালানো সম্ভব ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামবাসী পিছপা হতে শুরু করে। যে দিক পারলেন গা ঢাকা দিলেন। গ্রামবাসী সরে যাওয়ার পর আন্ডার গ্রাউন্ডের নেতাদের অবস্থান বের করা সহজ হয়ে যায়। রমেন্দ্র মিত্র ও মাতলা মাঝি পালিয়ে ভারতে চলে যান। ইলা মিত্র ৭ জানুয়ারি সাঁওতাল বেশ ধারণ করে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভারত সীমানা পার হওয়ার প্রস্তুতিকালে ইলা মিত্র ও তার সঙ্গীরা রোহনপুর রেলস্টেশনে ধরা পড়ে যান। তাদের ধরে আনা হয় নাচোল স্টেশনে। পুলিশ শুরু করে পাশবিক অত্যাচার। ইলা মিত্র ও তার সাথীদের উপর্যুপরি নির্যাতন চালানো হচ্ছিল।
কারণ যেভাবেই হোক স্বীকার করাতে হবে পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবল হত্যার পেছনে তাদের ইন্ধন ও পরিকল্পনা ছিল। নাচোল স্টেশনে ইলা মিত্রর সাথীদের মধ্যে আনুমানিক ৫০ থেকে ১০০ জন পুলিশি নির্যাতনে মারা যান।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper