ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি বাঙালির তীর্থ

মৃত্তিকা দেবনাথ
🕐 ১:৩৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২০

কলকাতার ৬ নম্বর দ্বারকানাথ লেনের জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়ে বাঙালির ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, দার্শনিক মহাপুরুষ। ফলে সাধারণ লাল দালানের বাড়িটি হয়ে উঠেছে বাঙালির অসাধারণ তীর্থস্থান। এখানে তিনি হেঁটেছেন, খেলেছেন, আবৃত্তি করেছেন, দিয়েছেন নাটকের মহড়া। আবার এখানেই গান-কবিতা-উপন্যাস লেখায় মগ্ন হতেন। প্রবেশপথে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তোরণ রয়েছে। বাড়ির অন্যপাশে রয়েছে ঐতিহ্যের লাল তোরণে লেখা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। তবে রবীন্দ্রভারতী গেট হল প্রধান ফটক। সেখান দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই পাবেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য।

তার পাশ মাড়িয়ে আপনাকে দোতলায় উঠতে হবে। বাড়ির স্থাপত্যশৈলী মুগ্ধ করবে। দরজায় পিতলের কারুকাজ, সিঁড়ি, ভেতরের ঘরগুলোতে প্রকাশ পায় ঠাকুরবাড়ির রুচিবোধের পরিচয়। বাড়িতে পায়চারি করতে করতে পুরো বাড়িতেই পাবেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের হালকা সুর। সেই সুরের মূর্ছনায় উপলব্ধি করবেন কবির উপস্থিতি। ফলে পুরো সময়টাই একটা মোহ, আর আবেশে মোহিত হয়ে থাকতে হবে আপনাকে। জুতা খুলে নগ্ন পায়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে শুরুতেই পাবেন কবিগুরুর খাবার ঘর।

এরপর শয়ন কক্ষ। এই ঘরে কবি শুয়ে কাটাতেন জীবনের শেষ সময়টা। ঠিক এর পাশের একটি কক্ষে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। মৃত্যুর সাতদিন আগে ১৯৪১-এর ৩০ জুলাই এ বাড়িতেই কবি তার শেষ কবিতা, ‘তোমার সৃষ্টির পথ’-এর ডিক্টেশন দিয়েছিলেন। ঘরটি থেকে বের হলে যে ছবিটি আপনাকে আবেগাপ্লুুত করবে, সেটি কবির মহাপ্রয়াণে শোকযাত্রার ছবি।

কলকাতার সকল সড়ক, মহাসড়ক, অলিগলির পথ যেন মিশেছিল শোকযাত্রায়। সেদিনের মানুষের এমনই তীব্র স্রোত ছিল, কবির সন্তান ঠিক সময়ে শ্মশানে পৌঁছাতেই পারেননি। সেসব ছবি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গল্প শোনাবে আপনাকে। উপরের ঘরগুলোতে রয়েছে কবির ব্যবহৃত পোশাক, আরাম কেদারা, বইপত্র, বিলেত থেকে আনা নানা জিনিসপত্র। রয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের ছবি এবং নানা জানা-অজানা তথ্য। বিভিন্ন নাটকে যেসব পোশাক পরে তিনি অভিনয় করতেন, তাও রয়েছে সেখানে।

চোখে পড়বে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘুমানোর ঘরের সঙ্গে ধ্যানের ঘরটি। একটি ঘরে রয়েছে রবি ঠাকুরকে নিজ হাতে লেখা মৃণালিনী দেবীর চিঠি, তার ওপর মৃণালিনী দেবীর একটি বড় ছবি টানানো। এই ঘরেই মৃণালিনী দেবীর শেষশয্যা পাতা হয়েছিল। ঘরটির ঠিক পেছনে রয়েছে খুব সাদামাটা একটা ঘর। পশ্চিমে একটি বেলজিয়াম আয়নার ড্রেসিং টেবিল, শেলফে সাজানো আছে রূপার বাক্স, রবীন্দ্রনাথের রূপার গ্লাস এবং কয়েকটি বিলেতি শোপিস।

তাছাড়া লম্বা একটি ঘরে দেখতে পাবেন রবি ঠাকুরের কলম। যে কলম দিয়ে তিনি রচনা করেছেন হাজারো অমর সৃষ্টি। একটি ঘরের দেয়ালজুড়ে বড় বড় ছবি বাঁধানো। এখানে পর্যায়ক্রমে প্রিন্স দ্বারকানাথ থেকে রবীন্দ্রনাথের ছবি পর্যন্ত রয়েছে। সামনের বারান্দায় বিশেষ টেবিলে কাচে ঘেরা রয়েছে একটি ট্রেনের রেপ্লিকা। শান্তিনিকেতন থেকে শেষ এই ট্রেনে করে কবি জোড়াসাঁকোয় এসেছিলেন। পুরো বাড়িজুড়েই রয়েছে রবি ঠাকুরের স্মৃতিচিহ্ন। চারপাশ দালানে ঘোরানো বাড়ির মাঝে উদোম উঠোন রয়েছে। তীর্থস্থান ভ্রমণে এসে এই উঠোনে ছবি না তুলে কিন্তু ফিরে যাবেন না। তাছাড়া মূল বাড়ির সামনের অংশ এবং ঠাকুরের মূর্তির ছবি তুলতে পারেন।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper