ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

১৫ দিনে ৬৪টি জেলা ভ্রমণ

খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২০

তখন তাম্মাত খুব ছোট। বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে তিনি দেখলেন, এক বৃদ্ধ সাইকেল চালিয়ে দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোট্ট তাম্মাতের মনে দৃশ্যটা গেঁথে যায়। মনে মনে ভাবলেন, বড় হয়ে তিনিও দেশ ভ্রমণে যাবেন সাইকেলে। সাইকেল নিয়ে পরিবার থেকে দূরে যেতে দিতে চাইত না।

কিন্তু সাইক্লিংয়ের প্রতি তাম্মাতের অসীম ভালোবাসা, ভালোলাগা। লুকিয়ে লুকিয়ে রাতে সাইকেল নিয়ে বের হতেন। ২০১৭ সালে ৬৪ জেলা ভ্রমণেও রাতের আঁধারে লুকিয়ে বের হন। যেন বাসার কেউ টের না পায়। লুকিয়ে সাইকেল চালানো সেই তাম্মাতের নামে পাশে এখন অসংখ্য রেকর্ড শোভা পাচ্ছে। মাত্র ১৫ দিনে দেশের ৬৪টি জেলা ভ্রমণ করেছেন। তার নাম তাম্মাত বিল খয়ের। জন্ম গোপালগঞ্জ হলেও থাকেন চট্টগ্রামে। পড়াশোনা করছেন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে, গণিত বিষয়ে। বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেয়ামত আলী সিকদার। ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে তাম্মাত সবার ছোট। তাম্মাত বলেন, শুরুতে পরিবার বাধা দিলেও এখন তারা সহযোগিতা করে।

বাবা, মা যখন আমার সফলতার খবর পড়েন। তখন তাদের চোখে-মুখে আনন্দ খেলা করে। আমার তখন খুবই ভালো লাগে। তরুণদের জন্য তাম্মাতের ঘটনা শিক্ষণীয়। তিনি বলেন, আপনার সব স্বপ্নে পরিবার কখনো আপনাকে প্রথমে সাপোর্ট দেবে না। তার মানে এই না যে হাল ছেড়ে দিতে হবে। আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকলে সফলতা আসবে। পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গিও তখন পাল্টে যাবে।

তাম্মাত নতুন আরও যে রেকর্ড করেছেন তা হলো সবচেয়ে কম সময়ে সাইকেলে ১০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি, (৪ দিনে), সবচেয়ে কম সময়ে সাইকেলে ২০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি, ( ৮ দিনে), সবচেয়ে কম সময়ে সাইকেলে ৩০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি, (১২ দিনে), ১৪ দিন ২০ ঘণ্টা ২৩ মিনিটে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা সাইকেলে পাড়ি, সবচেয়ে কম সময়ে সাইকেলে ৩৯৭০.৭ কিলোমিটার প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি, (১৫ দিন ১৭ ঘণ্টা ৯ মিনিটে)।

এ ট্র্রিপে মোটরবাইকে করে তাম্মাতের পাশে থেকে দুই বন্ধু সাপোর্ট দেয়। এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তাম্মাত ২৫ দিনে পুরো দেশ ভ্রমণ করেন। তাম্মাত আসলে একজন পুরোদস্তুর অ্যাথলেট। দৌড়, সাঁতার, সাইক্লিং, ট্রেইল রান, ক্লাইম্বাথনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার দক্ষতা রয়েছে। এজন্য ক্রীড়া জগতের অনেকে তাকে ‘স্পিডস্টার’ বলে থাকে। সবচেয়ে কম সময়ে পায়ে হেটে তাম্মাত টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া গিয়েছেন। ২০১৮ সালে মাত্র ২৪ দিনে পায়ে হেঁটে তিনি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যান। গত তিন বছরে প্রায় ম্যারাথন, ডুয়াথলন, ট্রায়াথলন, সাইকেল রেসসহ ৫০টির মতো প্রতিযোগিতায় তাম্মাত অংশ নেয়। তাম্মাত জানালেন, এর মধ্যে প্রায় ৪০টিও বেশি প্রতিযোগিতায় তিনি চ্যাম্পিয়ন হন।

শুধু সাইক্লিং নয়। তাম্মাত জনকল্যাণেও কাজ করেন। তিনি বিদ্যালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন বাক্স রাখার বিষয়ে প্রচারণা চালান। তাম্মাত বলেন, ‘পিরিয়ড প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনের একটা সাধারণ অধ্যায়। তবে আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার কারণে এটা অনেক মেয়ের জন্য জীবনের কালো অধ্যায়।’ স্কুলে ইমার্জেন্সি স্যানিটারি প্যাড বাক্স স্থাপনের জন্য তাম্মাত স্কুল কর্তৃপক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন। তাম্মাত বিল খয়ের বলেন, ‘দেশের প্রতিটি স্কুলে ইমার্জেন্সি স্যানিটারি প্যাড বক্স স্থাপনে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ চাই। পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন গোঁড়ামি ও অসচেতনতার ফলে পিরিয়ড নিয়ে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি কিংবা ভোগান্তিতে পড়তে হয় ছাত্রীদের।’

তাম্মাত বিন খয়ের স্বপ্ন দেখেন আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার। যদিও এটা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। কারণ আয়রনম্যান প্রতিযোগিতার ব্যাপ্তি প্রায় ১৭ ঘণ্টা। এর মধ্যে ৩.৮ ঘণ্টা সমুদ্রে সাঁতার কাটতে হয়। দৌড়াতে হয় ৪২ কিলোমিটার। পাশাপাশি সাইকেল চালাতে হয় ১৮০ কিলোমিটার। প্রচ-ভাবে মানসিক, ফিজিক্যালি শক্ত সমর্থ অ্যাথলেটরা এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকে বলে তাম্মাত জানান।

বাংলাদেশের মানুষ অতিথিপরায়ণ। কোথাও গেলে তারা আপ্যায়ন করতে চায়। সে জায়গায় দর্শনীয় স্থাপন দেখতে বলে। বিখ্যাত খাবার খাওয়াতে চায়। এ সব তাম্মাতের খুব ভালো লাগে বলে জানান। ভ্রমণে মানুষের বাড়িতে, হোটেলে থেকেছেন তিনি। তাম্মাত বলেন, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। খুব কাছে থেকে দেখেছি স্বপ্ন সত্য হয়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper