ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি

বঙ্গবন্ধু যখন স্কুলে পড়তেন

খন্দকার মাহমুদুল হাসান
🕐 ১:১০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২০

বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চে, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে। যদিও তখনকার বাংলায় শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ছিল না, শিক্ষিতের হারও ছিল নগণ্য, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পরিবারে শিক্ষার চর্চা ছিল। পরিবারে শিক্ষাদীক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রবণতা ছিল। শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা হত। সেই ধারাবাহিকতাতেই বঙ্গবন্ধুকে শৈশবেই বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়। তিনি প্রথম যে বিদ্যালয়ে ভর্তি হন সেটি ছিল গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটির অবস্থান ছিল টুঙ্গীপাড়ায়। এটি একটি মিডল ইংলিশ বা সংক্ষেপে এমই স্কুল ছিল। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতার নাম খান সাহেব শেখ আব্দুর রশিদ। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট দাদা এবং ওখানকার প্রথম ও একমাত্র ইংরেজি বিদ্যালয়ও ওটাই ছিল। কাজেই তার পরিবারের শিক্ষা বিস্তারে অবদান ছিল।

 

আর সেই শিক্ষা ছিল আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। তার বয়স যখন সাত বছর তখন তিনি প্রথম ভর্তি হন স্কুলে। সেটা ছিল ১৯২৭ সাল। তারা ছিলেন ছয় ভাই-বোন। চার বোন, দুই ভাই। তিনি ছিলেন তৃতীয়। বাবা শেখ লুৎফর রহমান চাকরি করতেন। বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলায় তার বাবা গোপালগঞ্জ দেওয়ানি আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন। চাকরির প্রয়োজনে তাকে মহকুমা শহর গোপালগঞ্জেই থাকতে হত। এতে অনেক রকম অসুবিধে হত বলে তিনি পরিবারের সদস্যদের একসময় গোপালগঞ্জে নিয়ে এলেন। বঙ্গবন্ধু তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ১৯২৯ সালে বঙ্গবন্ধু ভর্তি হলেন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে।

এটি তার জীবনের দ্বিতীয় স্কুল। এই স্কুলে তিনি ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। স্কুলটিতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বেরিবেরি রোগ হল। এতে তার হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে গেল। তাই উন্নত চিকিৎসা তার একান্ত দরকার হয়ে পড়ল। উন্নত চিকিৎসার জন্য বাবা তাকে নিয়ে গেলেন তখনকার বাংলার রাজধানী কলকাতায়। সেখানে চিকিৎসা চলল দীর্ঘমেয়াদে। ফলে দু’বছর পড়ালেখা বন্ধ রইল। এল ১৯৩৬ সাল। বঙ্গবন্ধুর বাবা বদলি হয়ে মাদারীপুরে গেলেন। বঙ্গবন্ধুও বাবার সঙ্গে মাদারীপুরে গেলেন।

তাকে সেখানে ভর্তি করা হল মাদারীপুর হাই স্কুলে। এটা তার তৃতীয় স্কুল। এখানে পুনরায় সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর ঘটল আরেকটা বিপর্যয়। চোখের কঠিন ব্যাধি গ্লুকোমায় আক্রান্ত হলেন তিনি। মহাসমস্যার সৃষ্টি হল। আবারও দরকার হল উন্নত চিকিৎসার। তাকে নিয়ে যাওয়া হলো কলকাতায়। চিকিৎসা চলল।

একসময় সুস্থ হলেন, তবে চোখ থেকে চশমা আর নামল না। কলকাতা থেকে চোখের চিকিৎসা শেষে বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন বাবার কর্মস্থল মাদারীপুরে। ততদিনে সহপাঠী বন্ধুরা পড়াশোনায় এগিয়ে গেছে। তারা উঠে গেছে ওপরের ক্লাসে। এ স্কুলে ভর্তি হলে বঙ্গবন্ধুকে বন্ধুদের চেয়ে নিচের ক্লাসে পড়তে হত। এমন বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করলেন বাবা। তিনি তাকে গোপালগঞ্জে নিয়ে গেলেন। ১৯৩৭ সালে ভর্তি করা হল গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে। এ ছিল মথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুল।। এটা তার জীবনের চতুর্থ ও শেষ স্কুল। এ স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন দ্বিতীয় বিভাগে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবনে বিঘ্ন ঘটেছিল।

মাদারীপুরে অবস্থানকালে অনেকদিনই তিনি স্কুলে যেতে বা পড়াশোনা করতে পারেননি। তখন ছিল স্বদেশি আন্দোলনের যুগ। কিশোর বঙ্গবন্ধু আন্দোলনকারীদের অনেক সভায় যোগ দিতেন। ইংরেজদের পছন্দ করতেন না। যেহেতু আন্দোলনকারীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে ছিলেন তাই বঙ্গবন্ধু তাদের পছন্দ করতেন। স্কুলজীবনে খেলাধুলা করতেন। ভালো ফুটবল খেলতেন। সমবয়সী ছেলেদের নিয়ে একসঙ্গে মিলে সমাজের উন্নতির চেষ্টাও করতেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের ছাত্র থাকাকালে মুসলিম সেবা সমিতির কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তার শিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ এ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধু এ সমিতির সম্পাদকও হন।

এভাবেই পড়ালেখার পাশাপাশি অনেক কিছুর সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন তিনি। স্কুলে পড়ার সময় বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২) এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর (১৮৯২-১৯৬৩) সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তারা তার বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হন। সে বছরই তিনি যোগ দেন নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে। কাজেই তার বিদ্যালয় জীবন ছিল ঘটনাবহুল।
[email protected]

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper