ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বইমেলা : দেশে ও বিদেশে

বহির্বিশ্বে বাংলা

শওকত হোসেন লিটু
🕐 ৯:১০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০

জ্ঞানের আধার বই। এর বিকল্প নেই। সম্প্রতি ইন্টারনেটের কল্যাণে সেলফোনে বই পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে জানতে হলে লাইব্রেরিতেই আসতে হয়। বই সংগ্রহ করতে হয়। যে জাতি জ্ঞানে ও শিক্ষায় বড়, সে জাতি পৃথিবীতে তত বেশি সমৃদ্ধ। বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এখানে দেশীয় লেখকরা বহুমুখী বিষয়ে বই লিখছেন।

বিদেশি ভাষা থেকে বাংলাভাষায় বই অনুবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশের লেখকরাও ইংরেজি এবং বিশ্বের অন্যান্য ভাষাতেও লিখছেন, প্রকাশ করছেন প্রকাশকরা। এ দিক দিয়ে বলা যায়, প্রকাশনার দিক দিয়ে গত শতকের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বাংলা প্রকাশনা অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে।

কয়েক দশকে বাংলা ভাষায় বইয়ের প্রকাশনা সমৃদ্ধ, উন্নত ও মানসম্পন্ন হয়ে এগিয়ে গেলেও বহিবির্শ্বে খবরটি পৌঁছে দেওয়ার কাজটি যথেষ্ট হচ্ছে বলে মনে হয় না। আমি দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতি বছর আগরতলায় ভারতীয় বইমেলাতে আমার পারিজাত প্রকাশনীর বাংলা বই নিয়ে হাজির থাকছি।

ইতোমধ্যে বিশ্বের বৃহৎ ‘ফ্রাঙ্কফুট বুক ফেয়ার’-এ অংশগ্রহণ করেছি। লন্ডন বুক ফেয়ারেও অংশগ্রহণ করেছি। কলকাতা বুক ফেয়ারেও গিয়েছি। কিন্তু এসবে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে খুব বেশি আশাপ্রদ ফলাফল জমা পড়েনি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের দেশে বইমেলা ও অন্যান্য প্রদর্শনীর আয়োজন করে এবং নিজেদের দেশের পণ্য, বই ও অন্যান্য উৎপাদনের প্রচারণা চালায়। আমাদের দেশের মাত্র এক মাসের ফেব্রুয়ারির বইমেলায় ত্রিশ-চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। বাংলা একাডেমির প্রতি বছরের বই বিক্রির পরিসংখ্যান থেকে এটি সহজেই জানা যায়। বাংলা ভাষার বিশ্বের অষ্টম ভাষা হিসেবে উত্তরণ ঘটেছে।

বিশ্বে এখন অনেক পাঠক বাংলা বই পড়তে এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে বাংলা বইয়ের কোন বিশাল প্রদর্শনী বা প্রচারণা সে পরিমাণে চালানো হচ্ছে না।

এমনকি বাংলাদেশ পর্যটন বিভাগ জাপানে, যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্বের অনেক দেশে সরকারি উদ্যোগে দেশের পর্যটন শিল্পের সুন্দর স্থানগুলোকে তুলে ধরলেও বিদেশে বাংলা ভাষার বইমেলার তেমন কোনো আয়োজন করছে না। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ভালো বইগুলো ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় অনুবাদের জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কয়েক বছর আগে ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলেও তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।

বিদেশিরা কখনো কখনো বাংলাদেশে এলেও, বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ভালো বইগুলো দেখলেও এর অনুবাদ করার সহজ পদ্ধতি খুঁজে পাচ্ছে না। গুগলেও বাংলার সহজ অনুবাদপদ্ধতির সংযোগ সাধন করার নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।

এবার মুজিববর্ষ পালন করা হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের ১০০ বছর পার হতে চললেও তার সম্পর্কে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বইয়ের বিদেশের মাটিতে কোনো প্রদর্শনী বা মেলার আয়োজন আমার জানামতে এখনো হয়নি।

বর্তমানে দেশে অনেক ভালো প্রকাশনী সংস্থা গড়ে উঠেছে। অনেক সুন্দর বই তারা প্রকাশ করছেন। এগুলোর মুদ্রণ, বাঁধাই অন্য যে কোনো দেশের সঙ্গে তুলনীয়। সরকারের উচিত বিদেশের মাটিতে বছরে তিন-চারবার বাংলা ও বাংলাদেশের বইয়ের মেলার আয়োজন করা। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বইগুলোর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করার জন্য বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা সমিতি ও অন্যান্য সংস্থাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

প্রতি বছর অনেক জাঁকজমকের সঙ্গে ভাষা দিবস, ভাষার মাস পালন করি কিন্তু নিজেদের বইগুলো বিশ্বের মানুষকে পড়ার সুযোগ করে দিতে না পারলে যথার্থ সার্থকতা অর্জন দুরূহ হবে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper