ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গত দশকে আলোচিত

বিবিধ ডেস্ক
🕐 ৩:৫০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২০

গত দশ বছরে বিশ্ববাসী নতুন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা, বৈশ্বিক নানারকম সমস্যায় একতাবদ্ধ আন্দোলন, মধ্যপ্রাচ্যে সংকট, ইভোলা ভাইরাস, করোনা ভাইরাসের মতো ঘটনাগুলো এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। গত দশকের তেমন আলোচিত কিছু ঘটনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

করোনা ভাইরাস
করোনা ভাইরাস নির্দিষ্ট কোনো ভাইরাস নয়। বরং এটি একটা ভাইরাস পরিবারকে বোঝানো হয়, যাতে অসংখ্য ভাইরাস আছে। তবে এ পরিবারের মাত্র ছয়টি ভাইরাসই মানুষকে সংক্রমণ করতে পারত। নতুন ভাইরাস নিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়াল সাতে। নতুন ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘২০১৯ নভেল করোনা ভাইরাস বা এনসিওভি।
এ পর্যন্ত চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২৫ জনে। যে সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত চীনে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৮ জন।
চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর থেকেই গোটা চীনে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। এমনকি চীনের বাইরে দশটিরও বেশি দেশে এই ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে- জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডা। আক্রান্তদের সিংহভাগ ব্যক্তিরই চীনে, বিশেষ করে উহান শহরে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিল। চীনে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে এখন পর্যন্ত প্রায় ২,০০০ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। তবে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ এবারই প্রথম নয়। চীনেই ২০০২ সালে আরেকটি করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছিল। এর নাম সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম বা সার্স করোনা ভাইরাস। এতে ৮,০৯৮ জন আক্রান্ত হয় এবং ৭৭৪ জন মারা যায়। ২০০৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি আর পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ২০১২ সালে সৌদি আরবে আরেকটি করোনা ভাইরাস ছড়ায়, যার নাম ছিল মিডল ইস্ট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রম বা মার্স করোনা ভাইরাস। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২,৫০০ জন আক্রান্ত হয়ে ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়। এরা প্রত্যেকেই ফুসফুসজনিত রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।
তাই শুধু চীন নয়, সমগ্র বিশ্বই এ ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে চীনসহ অন্যান্য রাষ্ট্র ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিহত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকের পর মন্ত্রী ও কর্মকর্তাসহ নিজের কার্যালয়ে করোনা ভাইরাস বিশেষ এক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে যেন প্রবেশ করতে না পারে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর দেখা পাওয়া যায়নি।

ইবোলা ভাইরাস
২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বকে ভয়াবহভাবে নাড়া দিয়ে যায় ইবোলা ভাইরাস। শুধু পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ২ বছরের ব্যবধানে ২৮,৬৫২ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়, যাদের অর্ধেকের বেশি তখন মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১৯৭৬ সালে কঙ্গোতে সর্বপ্রথম এই সংক্রামক ব্যাধি দেখা যায়। এরপর সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন সময় এটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে গোটা আফ্রিকায়।

একসময় আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছিল এই ইবোলা ভাইরাস। এর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলেও আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়ে বেঁচে ফেরার হার খুবই কম। আর এই কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর কঙ্গো এবং এর পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে ইবোলার ভ্যাকসিন বিতরণ করে যাচ্ছে।

তবে ইবোলার সিংহভাগ ঝড় বয়ে যায় আফ্রিকা মহাদেশের ওপর দিয়ে। ১৯৯৪ ও ’৯৬ সালে গ্যাবনে জোড়া আঘাত হানে ইবোলা; আক্রান্ত মানুষের অর্ধেকের বেশিই মারা যায় এর প্রকোপে। ১৯৯৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে শতকরা ৮১ ভাগ ইবোলা আক্রান্ত রোগী চলে যায় না ফেরার দেশে। ২০০৩ সালে কঙ্গোতে দু’বার হানা দেয় ইবোলা; মেরে ফেলে ৮০ শতাংশেরও বেশি আক্রান্ত মানুষকে। ২০১৪ সালে ইবোলা তার আন্তঃমহাদেশীয় যাত্রা শুরু করে। সে বছর ইবোলা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র (আক্রান্ত চারজনের মধ্যে একজন মারাও যায়), যুক্তরাজ্য ও স্পেনে। ২০১৫ সালে ইতালিতেও নিজের উপস্থিতি জানান দেয় ইবোলা। এখন পর্যন্ত এশিয়াতে ইবোলার প্রকোপ ধরা পড়েনি। তবে বাংলাদেশি এক প্রজাতির বাদুড়ে জায়ারে ও রেস্টন ইবোলা ভাইরাসের বিপরীতে এক ধরনের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। এ থেকে বিজ্ঞানীদের আশংকা যে, এশিয়াতেও ইবোলা ভাইরাসের বাহক বাদুড় থাকতে পারে।

প্রকৃতি আসলে মানুষের বন্ধু। তবে আমরা প্রকৃতির সঙ্গে মিত্রতা করতে পারিনি। আর পারিনি বলেই আমাদের এত এত ভোগান্তি। আমাদের চারপাশের প্রতিবেশ এত এত কলুষিত। মানুষের অবিমৃষ্য আচরণ আর অন্যায় বিচরণ এই পৃথিবীকে ধীরে ধীরে করে তুলছে বসবাসের জন্য চরম প্রতিকূল। হয়তো বা ইবোলা ভাইরাস কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের সমৃদ্ধির সোপান। হয়তো বা অপেক্ষাকৃত পশ্চাদপদ আফ্রিকার জনগণ উন্নত বিশ্বের তথাকথিত মানুষের কাছে গিনিপিগ তুল্য। তারপরও মানবতার প্রত্যাশা, আফ্রিকার দুঃখ ইবোলা ভাইরাস এক সময় মানুষের কাছে পদানত হবে; যেমন হয়েছে গুটিবসন্ত।

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী আফ্রিকানদের গড়া আন্তর্জাতিক সংগঠন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে শুরু হয় এর কার্যক্রম।
তবে বৈষম্যের প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত নয় সংগঠনটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশে কৃষ্ণাঙ্গ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের নাগরিক অধিকার অর্জনের ব্যাপারে সোচ্চার তারা। গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন পটভূমি অবশ্য খুবই বেদনাদায়ক।
২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন নাগরিক জর্জ জিমারম্যানের গুলিতে খুন হয় ১৭ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর ট্রায়ভন বেঞ্জামিন মার্টিন। অতঃপর ২০১৩ সালে তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #BlackLivesMatter নামক একটি প্রতিবাদ কার্যক্রম শুরু করেন।
অ্যালিসিয়া গার্জা, প্যাট্রিস কুলার ও ওপাল তোমেটির সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া সেই প্রতিবাদী সংগঠনটি বর্তমানে প্রায় ৪৪টি দেশে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সংগঠনটি কার্যক্রম শুরু করার পরের বছর ফার্গুসনের শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসনের হাতে খুন হয় ১৮ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইক ব্রাউন। এই হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের স্বজনরা ওই তিন বিপ্লবী নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খবর পেয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবারো আন্দোলনের ডাক দেন তারা। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ৬০০ জন লোকের সমন্বয়ে ফার্গুসন ও সেন্ট লুইসে আন্দোলন শুরু করে সংগঠনটি।
অতঃপর আরও ১৮টি শহরে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন। আর এভাবেই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার হ্যাশট্যাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন ওই তিনজন নারী।

হাইতিতে ভূমিকম্প
গত দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছিল ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। উত্তর আমেরিকার দ্বীপরাষ্ট্র হাইতিকে নিঃস্তব্দ করে দেওয়া ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলের মাত্রা ছিল ৭.০। ১২ জানুয়ারি স্থানীয় সময় বিকেল ৪:৫৩ মিনিটে হাইতির রাজধানী পোর্ট প্রিন্সে ১৫ কিলোমিটারজুড়ে এটি সংঘটিত হয়। এর ক্ষয়ক্ষতি জানার আগে ২০ জানুয়ারি আবারও ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয় দেশটি। তবে দ্বিতীয়বারের ভূমিকম্পটি আগের চেয়েও দ্বিগুণ এলাকাজুড়ে ক্ষতিসাধন করে। এই ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে যায় দেশটির রাজধানীসহ একাধিক উপশহর। মানুষজন যে যেরকম অবস্থায় ছিল সেরকম অবস্থাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হন।
২০১১ সালে হাইতি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৩,১৬,০০০ লোক নিহত হয়েছে বলে বিবৃতি দেয়। ইন্টারনেট ও সকল প্রকার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়া দেশটির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল জাতিসংঘ ও বিশে^র আরও অনেক দেশ। তবে এই ধ্বংসলীলা কাটিয়ে উঠতে এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছে হাইতি। ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী তখনও প্রায় ২ লাখ নাগরিক বাসস্থানহীন জীবনযাপন করছে। আর সংবাদমাধ্যমের মতে, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। ঘটনার দ্বিতীয় দিন ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০ জন ডাক্তার ও ১০ জন সহযোগীর সমন্বয়ে ৩০ সদস্যের মেডিকেল টিম পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।

ব্রেক্সিট
নিঃসন্দেহে গত দশকের অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ব্রেক্সিট। ২০১৬ সালে অভিবাসী সংকট চলাকালে ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ইংল্যান্ডের আলাদা হওয়ার পক্ষে রায় আসে।
ব্রেক্সিটের পক্ষে ৫২ শতাংশ ভোট পড়ায় সে সময় পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিটবিরোধী প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। মূলত এই ভোটের পরেই ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিবেশ পুরোপুরি পাল্টে যায়। ক্যামেরনের বিদায়ের পর ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন থেরেসা মে। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে সমস্ত কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া সহজ ব্যাপার নয়। থেরেসা মে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের চেষ্টা করলেও বার বার পেছাতে থাকে এর সময়সীমা।
ব্যর্থতার দায় নিয়ে গত বছর পদত্যাগ করেন থেরেসা মে। অতঃপর নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়ে বরিস জনসন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে বেশ তড়িঘড়ি শুরু করেন। তার তৎপরতায় ইতোমধ্যেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে একমত হয়েছে ব্রিটেন।
গত ২৪ জানুয়ারি ৬০০ পৃষ্ঠার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে উভয় পক্ষ। মূলত এই চুক্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইউরোপের অন্যান্য দেশে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরকিদের ভবিষ্যৎ, দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এখন দেখার বিষয় এই বিচ্ছেদের পর ব্রিটিশদের অগ্রযাত্রা কেমন হয়।

ওয়াল স্ট্রিট দখল করো
নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ব্রডওয়ে থেকে শহরের সাউথ স্ট্রিট পর্যন্ত বিস্তৃত অর্থনৈতিক এলাকাকে বলা হয় ওয়াল স্ট্রিট। গত দশকের সর্বাধিক আলোচিত আন্দোলন সংঘটিত হয় একে ঘিরে। ২০১১ সালের অক্টোবরে পুঁজিবাদবিরোধী হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ ব্যানারে নিউইয়র্ক সিটির অর্থনৈতিক অঞ্চলের রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করে। ধনীদের কর প্রদানে অপারগতা, দিন দিন আরও ধনী হওয়া এবং বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একতাবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামে কতিপয় যুবক।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সে সময় মার্কিন সরকার সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে সমন্বয়হীন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ধনীদের স্বার্থ হাসিল করে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে একতরফা সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু গণতান্ত্রিক সমাজে মানুষ অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধাচরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনিভাবে পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধে তিলে তিলে গড়ে ওঠা ক্ষোভ একসময় বিশাল আন্দোলনে প্রণিত করে মার্কিনীদের।
যদিও প্রথম দিকে এই আন্দোলনের গতিপথ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে ব্রিটিশ পত্রিকাগুলোয় বেশ সমালোচনা হয়। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই যখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তখন সবার সামনে আন্দোলনকারীদের দাবির যৌক্তিকতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। পুঁজিবাদী শ্রেণি বাদে অধিকাংশ মার্কিন নাগরিকই এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় নিজেদের কাজকর্ম বাদ দিয়ে দূর-দূরান্তের রাজ্য থেকে অনেকে নিউইয়র্ক সিটিতে এসে আন্দোলনে শামিল হন। তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে একসময় ছেলে-বুড়ো সবাই একাত্মতা প্রকাশ করেন। আর এভাবেই কয়েক মাস ধরে নিউইয়র্ক সিটিতে পুঁজিবাদবিরোধী ঐতিহাসিক এই আন্দোলনের পটভূমি রচিত হয়।

সন্ত্রাসী হামলা
মধ্যপ্রাচ্যের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে বিশ^জুড়ে চলমান জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে। আইসিস-এর পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালায় কতিপয় বিপথগামী ব্যক্তি। ২০১৩ সালে বোস্টনে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই সন্ত্রাসী হামলা। এরপর ক্রমান্বয়ে প্যারিস, লন্ডন ব্রিজ, বার্সেলোনা, ফ্লোরিডা, টেক্সাসের মতো উন্নত শহরেও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
যদিও মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোর চলমান সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে বলে দাবি হামলাকারীদের। হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম পুরো বিশ্বে উদ্বেগের জন্ম দেয়। স্বয়ং বাংলাদেশকেও ছাড়েনি সন্ত্রাসীরা। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে কয়েকজন দেশি-বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে হত্যা করে কয়েক জঙ্গি সদস্য। এর ছয়দিন পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতেও জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর আরও অর্ধশত দেশে ঘটা এসব সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলা করাটা ছিল গত দশকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু
২০১১ সালের ২ মে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী। পাকিস্তানের এবোটাবাদে পলাতক অবস্থায় বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়। নাইন ইলাভেনের এক দশক পর তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে প্রতিশোধের ইঙ্গিত দিয়েছিল তৎকালীন ওবামা প্রশাসন। এ ছাড়াও বিন লাদেনের সংগঠন আল কায়েদা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।
মার্কিন সেনারা তাকে হত্যার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সমুদ্রে সমাহিত করে। বিন লাদেনের নিহত হওয়ার সংবাদে গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। হামলা সম্পর্কিত কোনো ফুটেজ প্রকাশ না করায় তার মৃত্যুর সংবাদটি অনেকে বিশ্বাস করতে চায়নি। পরবর্তীতে অবশ্য ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে তার মৃত্যুর খবরটি প্রমাণ করা হয়েছিল। মার্কিনীদের হাতে বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর আল কায়েদার কার্যক্রম ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসে।

মার্কিন নির্বাচন
এ যাবতকালের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিঃসন্দেহে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে রিপাবলিক পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর তাকে নিয়ে বেশ হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকলেও নির্বাচনের দিন অবধি বোঝার উপায় ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ দৃশ্যপট সে সময় কেমন ছিল। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন ওবামা প্রশাসনের পরিচিত মুখ হিলারি ক্লিনটনই নির্বাচনে জয়লাভ করবেন। কিন্তু ঘটল উল্টো ঘটনা। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করার পাশাপাশি অভিবাসী এবং বহিরাগতদের জন্য কঠোর আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। ডেমোক্র্যাটদের শাসনামলে ২০১১ সালে ওয়াল স্ট্রিটের আন্দোলনের মতো ঘটনা ঘটার পর ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রিপাবলিকানদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে দেয়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper