প্রতিবাদ মুখর পৃথিবী
মুনতাজার আল জায়েদি
বিবিধ ডেস্ক
🕐 ২:১৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
বিশ্বজুড়ে গণবিক্ষোভে ফুসছে বঞ্চিত মানুষ। হংকং থেকে চিলি, ইরান, ইরাক থেকে লেবানন, কাতালোনিয়া, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া- হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ জানাতে, বিক্ষোভে অংশ নিতে রাস্তায় নেমেছে। তাদের দাবি, বিক্ষোভের ধরন এবং কারণ হয়তো ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু হাজার হাজার মাইল দূরের এসব দেশের বিক্ষোভকারীরা কিন্তু একে অন্যকে অনুপ্রাণিত করেছেন। এসব বিক্ষোভে অনেক ক্ষেত্রেই কোনো নেতা ছিলেন না। কিছু কিছু বিক্ষোভকারী তাদের দেশে বিক্ষোভের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।
১৪ ডিসেম্বর ২০১৮। বাগদাদে ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। ২৯ বছরের তরুণ মুনতাজার আল জায়েদি তখন ইরাকের আল বাগদাদিয়া টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। জায়েদি তার দুই পায়ের জুতা খুলে প্রেসিডেন্ট বুশ বরাবর নিক্ষেপ করেছিলেন। বুশ ঝট করে চেহারা সরিয়ে নেওয়ায় জুতা তার মুখে লাগেনি। দু’বারই একই অবস্থা। জুতা মারার সময় জায়েদি আরবিতে বলেছিলেন, ‘কুকুর! তোমার বিদায়ী চুমু। এটা ইরাকি বিধবা ও এতিমদের পক্ষ থেকে।’
এই ঘটনার সংবাদ ও ভিডিও বিদ্যুৎ গতিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঘটনার পরপরই জায়েদিকে নিরাপত্তারক্ষীরা গ্রেফতার এবং মারধর করে। পুলিশের মারে তার দাঁত পড়ে যায়; পাঁজরের হাড় ভাঙে, পায়ে ডাণ্ডার বাড়িতে যখম হয়ে যায়। জায়েদি ও কালো রঙের মোকাসিন জুতা বীর ও বীরগাথায় পরিণত হয়। জুতা পরপর দু’বার নিক্ষেপ করেন জায়েদি। যা ছিল যে কোনো মারণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।
জায়েদি এমন অস্ত্র নিক্ষেপ করে প্রমাণ করলেন, প্রেসিডেন্ট বুশ আসলে কত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি এবং তার বক্তব্য কতটা সঠিক! তিনি পাদুকা ‘অস্ত্র’ সম্পর্কে সজাগ ছিলেন বলে আক্রান্ত হননি। এর আরো একটি কারণ রয়েছে। ষাটের দশকে তৎকালীন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ জাতিসংঘে এ অস্ত্র প্রয়োগ করে ধিকৃত হয়েছিলেন।
বাগদাদের সে ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বুশ অবসর নিয়েছিলেন। ওই সময় ওভাল অফিস থেকে জানানো হয়েছিল, ইরাকে থাকা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট বুশ আর কোনো প্রেস কনফারেন্স করবেন না। তবে জরুরি কোনো কারণ ঘটলে মসজিদের ভেতর বক্তব্য রাখতে পারেন। আমরা সবাই জানি, মসজিদে যারা ঢোকেন তাদের পা খালি থাকে।