নোবেল পরিবার
মেরি কুরি ও পিয়েরে কুরি
স্বামী-স্ত্রী
বিবিধ ডেস্ক
🕐 ২:০০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৯, ২০১৯
একই পরিবারের একাধিক মানুষ নোবেল পাওয়ার প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১৯০৩ সালে। স্ত্রী মেরি কুরির সঙ্গে তেজস্ক্রিয়তার ওপর গবেষণার জন্য যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করে স্বামী পিয়েরে কুরি। মেরি কুরিই প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যিনি বিজ্ঞানের দুটি ভিন্ন শাখায় দুবার নোবেল জেতেন। মেরি কুরি ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর পোল্যান্ডের ওয়ার্সাতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯১ সালে ২৪ বছর বয়সে বড় বোন ব্রোনিস্লাভাকে অনুসরণ পড়তে যান প্যারিসে। সেখানেই তার পরবর্তী বৈজ্ঞানিক কাজ পরিচালিত হতে থাকে। ১৯০৩ সালে স্বামীর সঙ্গে পদার্থ বিদ্যায় এবং এককভাবে ১৯১১ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার জেতেন।
প্যারিসে এসে মেরির সঙ্গে পিয়েরের পরিচয় হলো। যদিও পিয়েরে বড় কোনো ল্যাবের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন না, তবুও তিনি মেরিকে কিছু জায়গা খুঁজে দিয়েছিলেন। সেখানেই মেরি তার গবেষণা আরম্ভ করেন। এক সময় দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই বিয়েও ছিল তাদের দুজনের মতোই অনাড়ম্বর। ছিল না কোনো ধর্মীয় আচার ব্যবহার। সাধারণত পাশ্চাত্যের মেয়েরা সাদা গাউন পরে বিয়ে করে কিন্তু মেরি তার বদলে পরেছিলেন গাঢ় নীল রঙের পোশাক।
এই পোশাকটি পরেই ল্যাবে কাজ করতেন মেরি। মেরি আর পিয়েরে যেখানে গবেষণা করতেন, সেটি ছিল না কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার। সেখানে না ছিল ভালো ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, না ছিল পানি আটকানোর ব্যবস্থা। উপরন্তু কুরি দম্পতি জানতেন না যে, তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে থাকলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই তারা বছরের পর বছর অরক্ষিত অবস্থায় তেজস্ক্রিয় মৌল নিয়ে কাজ করে গেছেন।
১৮৯৮ সালে মেরি আবিষ্কার করেন ‘থোরিয়াম’ মৌলটিও তেজস্ক্রিয়। মেরির গবেষণায় মুগ্ধ হয়ে স্বামী পিয়েরেও স্ফটিকের ওপর তার নিজস্ব গবেষণা বাদ দিয়ে মেরির গবেষণায় যোগ দেন। ১৮৯৮ সালের জুলাই মাসে কুরি দম্পতি একটা পেপার পাবলিশ করে জানান, তারা ‘পিচব্লেন্ড’ থেকে নতুন একটা তেজস্ক্রিয় মৌলের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এর নাম তারা দিলেন ‘পোলোনিয়াম’। নামটা এসেছে মেরির জন্মস্থান পোল্যান্ড থেকে। দুর্ভাগ্য যে, পোল্যান্ড তার কৃতিসন্তানকে যথাযথ সম্মান দিতে পারেনি। একই সালের ডিসেম্বর মাসে তারা ঘোষণা দেন দ্বিতীয় তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কারের কথা! এবার মৌলটির নাম দেওয়া হয় রেডিয়াম। ১৮৯৮ থেকে ১৯০২ পর্যন্ত মেরি আর পিয়েয়ে তেজস্ক্রিয়তার ওপর মোট ৩২টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত করেন।
১৯০৩ সালে মেরি তার পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং তাদের দুজনকে লন্ডনের ‘রয়াল ইনস্টিটিউশন’-এ আমন্ত্রণ জানানো হয় তেজস্ক্রিয়তার ওপর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। কিন্তু কী অসভ্যতা দেখুন! নারী বলে মেরিকে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো না। পিয়েরে একাই কথা বললেন।
১৯০৩ সালে রয়াল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্স ঘোষণা দেয় যে, তেজস্ক্রিয়তার ওপর অসাধারণ গবেষণার জন্য ওই বছরের পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল যাচ্ছে হেনরি বেকুয়েরেল, পিয়েরে কুরি আর মেরি কুরির কাছে।