ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রহস্য ও বিস্ময়ের আমাজন

বিবিধ ডেস্ক
🕐 ১:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯

আমাজন জ্বলছে। আগুনের বিস্তৃতি হাজার হাজার মাইল। বিশ্বজুড়েই সচেতন মহল এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। যে বৃক্ষরাজি পৃথিবীর মোট অক্সিজেন চাহিদার ২০ শতাংশ জোগান দেয়, তার পুড়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য বড় হুমকি। অথচ গত এক দশক ধরেই কমবেশি দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুসে’। নয়টি দেশে ছড়িয়ে থাকা এ বন নিয়ে রহস্য, বিস্ময় আর কৌতূহলের শেষ নেই।

অবস্থিতি
আমাজন নদীর অববাহিকায় অবস্থিত অ্যামাজনিয়া বা আমাজন জাঙ্গল নামে পরিচিত এই বনভূমি দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় বেশির ভাগ অংশজুড়ে বিস্তৃত। মোট ৭০ লাখ বর্গ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকাই আমাজনের দখলে। আমাজন বন এতটাই বড় যে, যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডের মতো ১৭টি দেশের সমান এর আয়তন। অংশীদার নয়টি দেশ-ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কলোম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম। তবে সিংহ ভাগের অবস্থিতি ব্রাজিলে। আমাজন বনের জীবনীশক্তি হলো আমাজন নদী, যা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। প্রায় ১১০০’র বেশি উপনদী নিয়ে আমাজন নদী বিস্তৃতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


ইতিহাস
আমাজন বনের সৃষ্টি হয়েছিল ইওসিন যুগে। সেটা কম করে হলেও ৩ হাজার বছর আগেকার কথা। বিশ্বব্যাপী যখন গ্রীষ্মম-লীয় তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং আটলান্টিক মহাসাগরের বিস্তৃতির ফলে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর আবির্ভাব ঘটে, তখন আমাজনের নিষ্কাশন অববাহিকা এবং মহাদেশের মধ্যভাগ বিভক্ত হয় ‘পুরুস আর্ক’ দ্বারা। পূর্ব দিকের পানি প্রবাহিত হতো আটলান্টিকে এবং পশ্চিমের পানি প্রবাহিত হতো আমাজনাস অববাহিকা হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে। আন্দিজ পর্বতমালার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি অববাহিকার সৃষ্টি হয় যার নাম ‘সলিমোয়েস বেসিন’। আর এই অববাহিকা সৃষ্টির কারণে পুরুস আর্ক ভেঙে যায় এবং পূর্ব দিকের প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়।

আমাজন নদী অববাহিকার এই পরিবর্তন প্রমাণ করে, গত ১২ হাজার বছরে বিভিন্ন কারণে আমাজন রেইন ফরেস্টেও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। ‘আইস এজ’-এর সময় ‘সাভানা’ বা নিষ্পাদপ প্রান্তরের কারণে রেইন ফরেস্টগুলো কোথাও কোথাও ‘দ্বীপের’ মতো করে বিভক্ত হয়ে যায় যার ফলে সেখানে থাকা জীববৈচিত্র্যের মাঝেও বিভাজন ঘটে। ‘আইস এজ’ শেষ হয়ে গেলে বিভাজিত অংশগুলো পুনরায় এক হয়ে যায় এবং বিভাজিত প্রজাতিগুলোও আলাদাভাবে সেই পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে আমাজন বনের কী পরিমাণ পরিবর্তন হয়েছিল তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, আমাজন বিভক্ত হয়নি, বরং উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে বিক্ষিপ্তভাবে বৃদ্ধি পায় যেমনটা বর্তমানে দেখা যায়। তবে এই বিতর্কের শেষ কোথায় তা বলা কিছুটা মুশকিল।

তবে পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে তাকালে সবুজে আচ্ছন্ন সবচেয়ে বড় ভাগটি আমাজনের। গরম আবহাওয়াচ্ছন্ন এই রেইন ফরেস্ট মোট নয়টি দেশজুড়ে বিস্তৃত। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগে ছড়িয়ে রয়েছে বনটি। বনের প্রায় ৬০ শতাংশ রয়েছে ব্রাজিলে। এ এমন এক রহস্যে ঘেরা বন যার রহস্যের শেষ সীমায় এখনো পৌঁছতে পারেনি মানুষ। দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশই হলো এই দুর্গম আমাজন বন। পৃথিবীজুড়ে রেইন ফরেস্টের যত আয়তন, তার অর্ধেকটাই আমাজন। বিস্ময়কর এই বনের আয়তন যেমন বিশাল তেমনি বিশাল এই বনের প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য। আমাজন বনের গহীনে মানুষের চলাচল নেই। তবে আমাজনের জেগে থাকা সবচেয়ে বড় শহরটি রয়েছে ব্রাজিলে। ব্রাজিলের মানাস শহরটিতে দুই লাখ মানুষ বসবাস করেন। বলা যায়, আমাজন বেসিনে এটাই সবচেয়ে বড় শহর। আমাজনের ২.১ মিলিয়ন বর্গ মাইলের বেসিন অঞ্চল বিশ্বের নবম ক্ষুদ্র দেশের আয়তনের সঙ্গে সমতুল্য।


প্রাণীবৈচিত্র্য
গরম আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতার কারণে এ বনে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের বৈচিত্র্যময় সমাহার ঘটেছে। এখানে আছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৫ লাখ প্রজাতির কীট-পতঙ্গ, ১ হাজার ২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব-অণুজীব। গবেষকরা শুধু আমাজনের ব্রাজিল অংশেই ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৪৩টি অমেরুদণ্ডী প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। আমাজনের প্রাণীবৈচিত্র্যের ছোট একটি উদাহরণ পেলেই চমকে উঠতে হয়, আমাজনে পেরুর অংশের একটি গাছে ৪৩ হাজার প্রজাতির পিঁপড়ার সন্ধান মিলেছে। সমগ্র ব্রিটেনেও এত প্রজাতির পিঁপড়ার দেখা পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যত পথ্য আমরা জানি, তার প্রায় ৩৭ শতাংশ আসে আমাজনের বৃক্ষরাজি থেকে। এখানকার প্রাণীবৈচিত্র্য অতুলনীয়। এ বনের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাগুয়ার, গোলাপি ডলফিন, তামানডুয়া, টাপির, মানাতি, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, বাঁদুড় ইত্যাদি।

পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঈগল, টুকান, হোয়াটজিন, দ্রুতগামী হামিং বার্ড এবং আরও নানান পাখি। পৃথিবীর সব পাখির এক-পঞ্চমাংশ এ বনের অধিবাসী। মাছের মধ্যে আছে মাংসাশী লাল পিরানহা, বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক ইল মাছ ইত্যাদি। উভচর প্রাণীর মধ্যে বিস্ময় জাগাবে লাল চোখের গেছো ব্যাঙ। আছে পয়জন ফ্রগ। রঙিন এই ব্যাঙের ছোঁয়াতেই বিষক্রিয়ায় জীবন হারাতে পারে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ। তা ছাড়া রয়েছে কুমির, অ্যালিগেটর, কচ্ছপ প্রভৃতি। এখানকার ইকোসিস্টেম লাখো বছর ধরে টিকে আছে।

আমাজনের অ্যানাকোন্ডা নিয়েও নানা রকমের মিথ রয়েছে। মানুষ গিলে ফেলা সাপের কথা উঠলেই দৈত্যাকার অ্যানাকোন্ডার কথা মনে পড়ে। কিন্তু বাস্তবে মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করে এই দৈত্যাকার সাপ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের এই সাপ আমাজনের আতঙ্ক। আমাজনের গ্রিন অ্যানাকোন্ডার ওজন প্রায় ১৫০ থেকে ২২৭ কেজি। লম্বায় ২৭ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। শীতল রক্তবিশিষ্ট এই প্রাণীটি রাতে শিকারে বের হয়। অ্যানাকোন্ডার তেমন বিষ নেই। এ ছাড়া আমাজনে রয়েছে ব্ল্যাক কেইম্যান কুমির। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুমির এটি। দৈর্ঘ্যে ৯ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা ব্ল্যাক কেইম্যানের ওজন হতে পারে প্রায় ৪০০ কেজি। আমাজন নদীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ গোলাপি ডলফিন। গোলাপি রঙের ডলফিন মিঠাপানির সবচেয়ে বড় সাইজের ডলফিন।

প্রায় সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় ফুট লম্বা এই গোলাপি ডলফিন। এদের মস্তিষ্কের আয়তন মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে শতকরা ৪০ ভাগ বেশি বলে গবেষকদের কাছে গোলাপি ডলফিনের আলাদা গুরুত্ব আছে। আমাজনের অন্যতম প্রাণী হলো পিরানহা। আকারে ছোটখাটো হলেও মাংসাশী পিরানহা খুবই হিংস্র। একঝাঁক পিরানহা যখন একসঙ্গে নদীতে সাঁতরে চলে, তখন তাদের ধারালো দাঁত যে কোনো সাইজের প্রাণীকে মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারে। পিরানহা মাছের চোঁয়াল এবং দাঁত এতটাই শক্ত যে আমাজনের আদিবাসীরা এদের দাঁত দিয়ে হাতিয়ার তৈরি করে। মাত্র ১৮ ইঞ্চি লম্বা পিরানহার প্রায় ৬০ রকমের প্রজাতি শুধু আমাজন নদীতেই দেখা যায়।


সংক্ষেপে
নিউইয়র্ক শহরে ১২ বছরে যত পানি ব্যবহৃত হয় আমাজন নদীতে তার চেয়েও বেশি পানি প্রবাহিত হয় একদিনে। গোটা পৃথিবীর পরিচ্ছন্ন পানির ২০ ভাগ বয়ে চলে এই নদীতে।

আমাজনে আছে ৩০০০ প্রকারের ফল। তবে খাওয়ার যোগ্য ফল আছে মাত্র ২০০ প্রকারের।

বলা হয়, আমাজন একটি দৈত্যাকৃতি ফলের বাগান, যা বিকশিত হয়েছে ৩০০০ বছর আগে।

পৃথিবীর অক্সিজেনের ২০% আসে আমাজন বন থেকে।

৩০০ পাউন্ড ওজনের আরাপাইমাম মাছ বাস করে আমাজনে। এর গায়ের চামড়া বর্মের মতো শক্ত, যার কারণে সে নিরাপদ থাকে মাংসাশী পিরানহার কামড় থেকে।

সাহারা মরুভূমি থেকে প্রতি বছর ৪০ মিলিয়ন টন বালি উড়ে আসে আমাজনে!

আমাজনে এমন অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী আছে বহির্বিশে^র সঙ্গে যাদের কোনো সংযোগ নেই।


নদী
আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। আমাজন নদীকে যদি বলা হয় বনের ফুসফুস তাহলে কোনো অর্থেই তা অত্যুক্তি হবে না। আমাজন নদী বয়ে গেছে আমাজন বনের বুক চিরে। দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর আন্দিজ পর্বতের নেভাদো মিসমি নামক চূড়া থেকে এই নদীর উৎপত্তি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। আর প্রস্থ কোনো কোনো স্থানে ১০ কিলোমিটার। দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বত থেকে শুরু হয়ে পাঁচটি দেশজুড়ে বিস্তৃত আমাজন নদী আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে মিলিত হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো নদীর তুলনায় বেশি পানি এই নদীতে বয়ে যায়। আমাজন নদী যেখানটায় সাগরের সঙ্গে মিশেছে সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৪.২ মিলিয়ন ঘন ফুট পানি সাগরে নামে। বর্ষা মৌসুমে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭ মিলিয়ন ঘন ফুট। আমাজনের নদীতে এক দিনে ১৮ হাজার কিউসেক লিটার বেশি পানি প্রবাহিত হয়। আমাজন নদীর প্রাণী-বৈচিত্র্য আরেক আশ্চর্যের!

এই নদীতেই দেখা মেলে লম্বায় সাড়ে চার মিটারের চেয়েও দীর্ঘ ফ্রেশ ওয়াটার ফিশ, বুল শার্ক, ক্যাট ফিশ, ইলেকট্রিক ইল আর ভয়াবহ রাক্ষুসে মাছ পিরানহা। আমাজন নদী থেকে এত পরিমাণে সুমিষ্ট পানি সমুদ্রে গিয়ে মেশে যে প্রায় ১০০ মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের পানি কম লবণাক্ত থাকে। পৃথিবীর মোট ২৫ শতাংশ স্বাদু পানি আসে আমাজন থেকেই। আমাজন নদীর মুখ এতই বিশাল, যার জন্য এর নিকটবর্তী দ্বীপ মাজারিও ধীরে ধীরে ডুবে যায়। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য হলো, মাজারিও আকৃতিতে প্রায় সুইজারল্যান্ডের সমান ছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদীর প্রবাহ পথটি উল্টে গেছে। একটা সময় থেকে আমাজন নদী পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হচ্ছে। ১০ মিলিয়ন বছর আগে আমাজনের বেসিন তৈরি হয়েছিল অন্য একটি নদীর দ্বারা যা পশ্চিমের দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তরাংশের আন্দিজে একটি বিশাল লেকে মিলিত হতো। তবে বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞানীরা আমাজন নদীর নিচে আরও একটি নদীর খোঁজ পেয়েছেন! প্রস্থে তা আমাজনের চেয়ে দ্বিগুণ বড়। আমাজন অববাহিকায় নদীর ৪ কিলোমিটার গভীরে এই নদীটি বহমান। নাম রিও হামজা।


নৃগোষ্ঠী
আধুনিক সভ্যতা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন আমাজনে বসবাস করা আদিবাসী নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আমাজনের গহিনে নাকি মানুষখেকো মানুষের বসবাস। এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি আছে। তবে একথা সত্যি যে, মানুষের অজানা অনেক নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে আমাজনে। আমাজনের বলিভিয়া অঞ্চলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্থ হার্টের মানুষরা বসবাস করেন। ধারণা করা হয়, আমাজনে প্রায় ৪০০-এর বেশি আদিবাসী গোত্রে ভাগ হয়ে অন্তত ২ লাখ মানুষের বসবাস। এদের সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। কিছু নৃগোষ্ঠী যাযাবর প্রকৃতির। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে এদের যোগাযোগ তেমন একটা নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ গোত্রের আদিবাসীর নিজস্ব ভাষাও রয়েছে।


চলছে ধ্বংসের উৎসব
আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থান, ক্রমাগত বিরূপভাবে পরিবর্তনশীল বৈশি^ক জলবায়ু, মানুষের করাল আঘাতসহ নানা কারণে ধ্বংস হচ্ছে আমাজন। গত ৪০ বছরে আমাজনের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ২০০৪ সালে আমাজনের ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার বন উজাড় হয়েছিল, যা একটি রেকর্ড। সয়া এবং গম চাষ আমাজনের রেইন ফরেস্ট উজাড়ের জন্য অনেকটা দায়ী।

শহর গড়ে তুলতে ৪০০ হেক্টর জমি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল আমাজনের। আমাজনের ভেতরে সোনার খনি খুঁজে বেড়ায় সংঘবদ্ধ চোরাকারবারিরা। শত শত বছর ধরে আমাজন এই সোনা সন্ধানী চোরাকারবারিদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। প্রতিদিনই আমাজনকে ধ্বংস করে চলেছে মানুষ। প্রতিদিন, প্রতি মিনিটে ১৫০ একর এবং বছরে ৭৮ মিলিয়ন একর করে ধ্বংস হচ্ছে আমাজন।
গত তিন সপ্তাহ ধরে সে ধ্বংসযজ্ঞ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। ধ্বংস হচ্ছে পৃথিবীর ফুসফুস বলে পরিচিত আমাজন বন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ববাসী।


আবহাওয়া
রেইন ফরেস্ট আমাজনে মাত্র দুটি ঋতু রয়েছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষা। গ্রীষ্মপ্রধান এই বনে ছয় মাস গ্রীষ্ম ও বর্ষা থাকে। এই বনে গুমোট গরম আবহাওয়া কখনোই সরে যায় না। প্রায় সবসময় ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা থাকায় এই বনে পথচলা খুবই কষ্টের। এ ছাড়া এখানকার আর্দ্রতা থাকে ৭৭ থেকে ৮৮ শতাংশ। যে কারণে অল্পতেই হাঁপিয়ে যান বনে প্রবেশকারীরা। আমাজনে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়- এমনটি ভাবলে ভুল হবে। বরং রেইন ফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত এবং গরম আবহাওয়ার কারণে। আমাজনে রয়েছে ফুটন্ত নদী। এই রহস্যময় নদীর পানির তাপমাত্রা ৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পানি এত গরম যে তাতে মানুষ মারা যেতে পারে।


উদ্ভিদ-প্রকৃতি
আমাজনের প্রাণীবৈচিত্র্যের পাশাপাশি উদ্ভিদ লক্ষণীয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমাজনের গাছের প্রজাতির সংখ্যা এবং বৈচিত্র্য অনেক বেশি হওয়ায় এদের তালিকা তৈরি করতে প্রায় তিনশ বছর লেগে যাবে। এরই মধ্যে জাদুঘরে রাখা ৫ লাখেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গাছের প্রায় ১২ হাজার প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা হয়, গাছের আরও প্রায় চার হাজার বিরল প্রজাতি আবিষ্কারের এবং বর্ণনা আকারে লিপিবদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

আমাজনে দেখা মিলবে মাংসখেকো গাছের। অনেকেই এ ধরনের গাছকে মানুষখেকোও মনে করেন। এই গাছের আঠায় প্রজাপতি, ফড়িংয়ের মতো ছোট প্রাণীরা আটকে যায়। তখন গাছের পাতা ঢেকে গিলে নিতে শুরু করে। আমাজনে শুধু ভয়ঙ্কর প্রাণী আর গাছের দেখাই মিলবে না, মিলবে চোখ ধাঁধানো ফুলগাছেরও। তেমনি একটি গাছ ‘লবস্টার ক্ল ফ্লাওয়ার’। এই ফুলটি লম্বায় দেড় থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর একেকটি পাতা ৬ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এ ছাড়া আমাজন অর্কিডের দিক থেকেও বেশ সমৃদ্ধ। এ বনে ৩ হাজারেরও বেশি প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। এ বনে আছে রাবার গাছ।

আমাজনের সবচেয়ে দামি গাছগুলোর মধ্যে এটি একটি। আমাজনের রাবার গাছগুলো ১০তলা দালানের সমান উঁচু হয়ে থাকে। চকো-বীন বা চকলেট উৎপাদনকারী গাছেরও ঠিকানা আমাজন। আমাজনের গভীরে আছে কফি গাছ। দৈত্যাকার পদ্মের দেখা মিলবে এই বনে। ভিক্টোরিয়া আমাজোনিকা আমাজনের এক বিস্ময়। প্রায় ৩ ডায়ামিটারের এই পদ্ম শুধু আমাজনের গহিনেই দেখা মেলে। রয়েছে পাসিফ্লোরা। এটি এক ধরনের ফ্রুট ফ্লাওয়ার। প্রতি বছর এ ফুল গাছ প্রায় ২০ ফুট পর্যন্ত বাড়ে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper