বিশ্বকাপ ফাইনালের কাব্য
বিবিধ ডেস্ক
🕐 ১:৪৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০১৯
বিশ্বকাপ মানেই উন্মাদনা। আর খেলাটা যদি হয় বিশ্বকাপের ফাইনাল, তাহলে তো কথাই নেই। দীর্ঘ প্রায় দেড় মাসের লড়াই শেষে আরেকটি ফাইনালের দ্বারপ্রান্তে ক্রিকেট বিশ্ব। এর আগে এগারোবার স্বপ্নের ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছেন অধিনায়করা। কেমন ছিল সেসব ফাইনালের কাব্যগাথা? কেমন ছিল ট্রফি হাতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের চিত্র? ট্রফির খুব কাছে গিয়ে সেটি ছুঁয়ে না দেখার বেদনায় কীভাবে নীল হয়েছেন হেরে যাওয়া দলটি। স্মৃতি হাতড়ে রোমাঞ্চকর সেই গল্পগুলো তুলে আনা হয়েছে আজকের বিবিধ-তে
ক্যারিবীয়দের অমর ইতিহাস
১৯৭৫
ওয়ানডে ক্রিকেটই তখন হাঁটি হাঁটি পা করছে। এই টুর্নামেন্টের আগে মাত্র ১৮টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছে দুনিয়ায়। ঠিক এই সময়ই বৈশ্বিক একটা প্রতিযোগিতা করে মূলত বাণিজ্য বৃদ্ধি ও খেলার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর স্বপ্নে শুরু হয়ে গেল বিশ্বকাপ। তখন ক্রিকেটের সবকিছুই ইংল্যান্ডকেন্দ্রিক; তাই এমন একটি আয়োজন শুরু করতে স্বাগতিক বাছাইয়ে খুব একটা ভাবনা-চিন্তা করতে হয়নি আয়োজকদের। ইংল্যান্ডের ৬টি ভেন্যুতে ১৯৭৫ সালের ৭ জুন শুরু হয়ে গেল বিশ্বকাপ।
৮ দলের এই টুর্নামেন্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রুডেন্সিয়াল অ্যাসিউরেন্স কোম্পানির নামে নামকরণ করা হলো প্রুডেন্সিয়াল কাপ! তখনকার ৬টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কা ও ইস্ট আফ্রিকা অংশ নিলো বিশ্বকাপে। প্রতিটি ম্যাচ ছিল ৬০ ওভারের। প্রথম রাউন্ডে আটটি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেললো। গ্রুপের সেরা দুটি করে চার দল এলো সেমিফাইনালে। আর ফাইনালে অনুমান মতোই বাজিমাত করল ক্লাইভ লয়েডের প্রবল পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
অপ্রতিরোধ্য ক্লাইভ লয়েড
১৯৭৯
দ্বিতীয় বিশ্বকাপটিকে প্রথম সংষ্করণের প্রতিলিপি। এবারও ইংল্যান্ডে খেলা, আট দলের টুর্নামেন্ট, ছয়টি ভেন্যুতে খেলা, এবারও পৃষ্ঠপোষক প্রুডেন্সিয়াল এবং এবারও ক্লাইভ লয়েডের হাতে ট্রফি। পার্থক্যটা কোথায়? পার্থক্য বুঝতে হলে সে সময়ের ক্রিকেট রাজনীতিতে ফিরে যেতে হবে।
ক্যারি পেকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের দাপটে তখন বিশ্ব ক্রিকেটের মূল প্রতিষ্ঠানমুখিতা কেপে গেছে। সেই সময়ে এই বিশ্বকাপটি ছিল আইসিসির অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা।
১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলীয় ব্যবসায়ী ক্যারি পেকার তখনকার আইসিসির সঙ্গে প্রবল মতোবিরোধের জের ধরে আয়োজন করেন ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট। আইসিসির নিষেধাজ্ঞার হুমকি ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও তখনকার দিনের এই ‘আইসিএল’-এ যোগ দেন বিশ্বের নামকরা সব ক্রিকেটার।
আইসিসির সাদা পোশাক ও লাল বলে দিনের আলোয় ‘ম্যাড়মেড়ে’ ওয়ানডের বিপরীতে ক্যারি পেকার সামনে নিয়ে আসনে মোড়ক ভাঙা ঝা চকচকে এক ক্রিকেটের প্রদর্শনী। এই অবস্থায় আট টেস্ট খেলুড়ে দেশকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হল দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এর মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত আইসিসিই টিকে গেছে।
অঘটনঘটনপটিয়সী
১৯৮৩
নাটকীয়তা দিয়েই শুরু হলো তৃতীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের যাত্রা। ‘বি’ গ্রুপের প্রথম দুই ম্যাচেই দুই হট ফেবারিট অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিলো যথাক্রমে দুই আউট সাইডার জিম্বাবুয়ে ও ভারত। বলা যায়, ১৯৮৩ বিশ্বকাপের নাটকীয়তার এই শুরু। একেবারে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত এই ‘অঘটনপর্ব’ চলেছে।
খেলা শুরু হতেই আবিষ্কার হলো, চমকের পর্বটা আসলে খেলার মাঠেই অপেক্ষা করছে। অস্ট্রেলিয়াকে জিম্বাবুয়ে প্রথম ম্যাচ হারানোর ভেতর দিয়ে দলটির অনেকটা বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিলো; শেষ পর্যন্ত প্রথম পর্ব পার হতে পারলো অজিরা। আর ভারত গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে চলে গেল সেমিফাইনালে। গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জীবনমরণ ম্যাচে অধিনায়ক কপিল দেবের অবিশ্বাস্য ১৭৫ রানের ইনিংস ভারতকে টেনে তুললো। আর ফাইনাল দেখল বিশ্বকাপ ইতিহাসের তখন পর্যন্ত সবচেয়ে অকল্পনীয় ঘটনা ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরে গেল ভারতের কাছে; বলা ভালো হেরে গেল তারা মদনলাল ও মহিন্দর অমরনাথের বিস্ময়কর বোলিংয়ের কাছে। এই বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানরা দারুণভাবে ফিরে এলেন।
অস্ট্রেলিয়ার উত্থান
১৯৮৭
খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করল ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এর আগের টানা তিনটি বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছে ইংল্যান্ডে। ১৯৮৭-তে প্রথমবারের মতো সমুদ্র পার হয়ে চতুর্থ আসরটি বসল ভারত ও পাকিস্তানে। শুধু ভেন্যুতেই নয়, আয়োজনের আরও অনেক দিকেই লাগলো পরিবর্তণের ছোয়া।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো এখনকার পরিচিত আকার, মানে ৫০ ওভারের ওয়ানডে ক্রিকেট শুরু হলো এই বিশ্বকাপে। অনেক নাটকীয়তা সত্ত্বেও দুই স্বাগতিক প্রতিবেশীকে ছিটকে দিয়ে ফাইনালে চলে গেল অ্যাশেজ জুটি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের জন্য স্বপ্নটা ছিল, নিজেদের দেশের বাইরের প্রথম আসরের ট্রফিটা ঘরে তুলে তিনবারের হাহাকার ঘোচানো। আর অস্ট্রেলিয়ার বিগত সোনালি প্রজন্মের জন্য এটা ছিল প্রয়োজন। দুইয়ে মিলে বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল দেখা গেল। ইংল্যান্ডকে ৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ট্রফি স্পর্শ করল অস্ট্রেলিয়ানরা।
আহ আনপ্রেডিক্টেবল
১৯৯২
রঙিন পোশাক, ফ্লাড লাইটের আগেও টুকটাক পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন ওয়ানডেতে চালু হয়েছিল। তবে ১৯৯২-এর বিশ্বকাপেরই প্রথমবারের মতো আইসিসি পুরোপুরি এই পথে পা বাড়াল। সেই সঙ্গে খেলোয়াড়দের জার্সির পেছনে নাম লেখা, সাদা বল, ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশন এবং দুই প্রান্তে দুই নতুন বল মিলিয়ে একেবারে আজকের দিনের ক্রিকেট ডানা মেলল ১৯৯২ বিশ্বকাপে এসে। খেলার আইনকানুনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনটা এলো বৃষ্টি আইন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হয়েছিল সেবারই। বর্ণবাদের অভিযোগে নিষিদ্ধ থাকা ক্রিকেটের এই দাপুটে দলটি ১৯৯১ সালে আইসিসির অনুমতি পেল আবার ক্রিকেট খেলার।
ফলে তাদের জায়গা দিতে বিশ্বকাপের ফরম্যাটে ব্যাপক রদবদল আনতে হলো। রাতারাতি ৯ দলের এই টুর্নামেন্টকে এক গ্রুপের প্রথম পর্বে পরিণত করা হলো; যেখান থেকে সেরা চার দল খেলল সেমিফাইনালে। এই সেমিফাইনালেই ভুতুড়ে বৃষ্টি আইনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আফ্রিকানদের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ১ বলে ২২ রান! ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের সুবিধা নিয়ে ইয়ান বোথাম ও মার্ক গ্রেট ব্যাচরা এক মারকাটারি ব্যাটিং উপহার দিলেন প্রথম ১৫ ওভারে। যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেল ইমরান খানের উদ্ভাবনী ও আকর্ষণীয় নেতৃত্বে ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম-উল হক, মুশতাক আহমেদদের গল্পগাথা। যে গল্প দিয়ে একমাত্র ট্রফিটি ঘরে তুলে ফেলল এই দলটি।
লঙ্কাকাণ্ড!
১৯৯৬
তখনো পর্যন্ত প্রথম ১৫ ওভারে ৫০ থেকে ৬০ রান হওয়াটাকেই যথেষ্ট বলে মনে করা হতো। সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভারত, কেনিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লঙ্কান দলটি প্রথম ১৫ ওভারে তোলে যথাক্রমে ১১৭, ১২৩ ও ১২১ রান। সেমিফাইনালে ইডেন গার্ডেন তো বটেই গোটা ভারতকেই কাঁদিয়ে ছাড়ে শ্রীলঙ্কা।
এক লাখ দর্শকের সামনে প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা করে আট উইকেটে ২৫১। আর ৩৫তম ওভারে মাত্র ১২০ করতেই আটটি উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। এরপর হতাশ সমর্থকদের ‘বোতল-হামলা’য় প্রায় ২০ মিনিটের মতো বন্ধ থাকে ম্যাচ।
পুনরায় খেলা শুরু হলেও দর্শকদের থামিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড তাই বাধ্য হয়েই শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করে দেন। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের ফাইনালে শ্রীলঙ্কা টসে জিতে নেয় বোলিং। মার্ক টেলরের ৭৪ রানের ইনিংসে ভর করে সাত উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া করে ২৪১ রান। জবাবে মাত্র ৪২ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে লঙ্কানরা। এরপরই দৃশ্যপটে হাজির হন অরবিন্দ ডি সিলভা। তার অপরাজিত ১০৭ রানের কল্যাণেই শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেয় কোনো স্বাগতিক দেশ।
চমকে দেওয়া বাংলাদেশ
১৯৯৯
তিনটি আসর পর বিশ্বকাপ আবারও ফিরে এলো ইংল্যান্ডে। এখানেও চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। তবে বাংলাদেশ এই বিশ্বকাপকে মনে রাখে অন্য একটা কারণে। সেবারই যে প্রথম বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে খেলে ফেলল আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বাংলাদেশ। প্রথম অংশগ্রহণে হতাশ কিন্তু করেনি বাংলাদেশ। প্রথম দুই খেলায় নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারে তারা। তবে তৃতীয় ম্যাচে আইসিসির সহযোগী সদস্য হিসেবে তখনকার সতীর্থ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পায় প্রত্যাশিত জয়।
আগে ব্যাটিং করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৫ রান তোলে বাংলাদেশ। মিনহাজুল আবেদীনের অপরাজিত ৬৮ রান ইনিংসটি টেনে নেয় অত দূর। এরপর স্কটল্যান্ডকে ১৬৩ রানে অলআউট করে ২২ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের প্রথম জয়। দ্বিতীয় জয়টি আরও বিখ্যাত। গ্রুপের শেষ ম্যাচে তখনো পর্যন্ত অপরাজিত পাকিস্তানকে যে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ! ম্যান অব দ্য ম্যাচ খালেদ মাহমুদ সুজন।
অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়া
২০০৩
১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপরে কেবল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপেই ফাইনালে দেখা যায়নি দলটিকে। এরপর ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে টানা চারটি বিশ্বকাপের আসরে ফাইনালে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। এক অর্থে তাই ২০০৩ সালের বিশ্বকাপটাকে বলা যায় অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য বিস্তারের আরেকটি ধাপ।
বিশ্বকাপে তাদের সামনে প্রায় কোনো দলই দাঁড়াতে পারেনি। প্রায় এক তরফা লড়াইয়েই আবারও বিশ্বকাপটা নিজেদের করে নেয় তারা। আর সেই আধিপত্যের বড় একটা নজির দেখা যায় ফাইনালেই। সেবার প্রথমে ব্যাট করে ৩৫৯ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপের ফাইনালে এখন পর্যন্ত এটাই কোনো দলের দলীয় সর্বোচ্চ রান। এর চাপে ভেঙে পড়ে ভারত। ৩৯ ওভার এক বলে অল আউট হওয়ার আগে ভারত করতে পারে মাত্র ২৩৯ রান। বড় জয় নিয়েই বিশ্বকাপটা নিজেদের করে নেয় দলটি।
বাংলাদেশের আগমনী বার্তা
২০০৭
২০০৭ বিশ্বকাপ অনেক কারণেই ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বিশ্বকাপের অভিযাত্রা, আয়ারল্যান্ডের কীর্তি, বব উলমারের মৃত্যু, দর্শক বিতর্ক, ভারত-পাকিস্তানের প্রথম পর্ব থেকে বিদায় এবং আম্পায়ারিং কেলেঙ্কারি। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এই বিশ্বকাপ বাংলাদেশের বড় হয়ে ওঠার বিশ্বকাপ।
একঝাঁক তরুণ তুর্কি নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে খবর পেয়েছিল, দলের সবার প্রিয় বন্ধু, ক’দিন আগেও দলের সদস্য থাকা মানজারুল ইসলাম রানা আর নেই। এই শোককে অমিত শক্তিতে পরিণত করে ভারতকে বলে কয়ে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর বারমুডার বিপক্ষে জয়ের ভেতর দিয়ে সুপার এইটে পা রাখে বাংলাদেশ। সুপার এইটে তখনকার বিশ্বসেরা দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আরেক পশলা বিস্ময় উপহার দেয় হাবিবুল বাশারের দল। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ তিনটে হেরে না গেলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত ছিল। তবে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে, কিংবদন্তিদের বাড়িতে বিশ্বকাপের এই আগমনটা সুখকর হয়নি।
বিভিন্ন ভেন্যুও নিরাপত্তার বাড়াবাড়ির কারণে দর্শক খরা নিয়ে খোদ ভিভ রিচার্ডস সমালোচনা করেছিলেন। এই বিশ্বকাপের তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো, ফরম্যাটের কারণে ভারতের আগে আগে বিদায়ের কারণেই এই ফরম্যাট পরে রাতারাতি বদলে ফেলা হয়!
শচীনের শাপ মোচন
২০১১
লাহোরে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের ওপর বোমা হামলার জের ধরে পাকিস্তান হারায় তাদের আয়োজক হওয়া যোগ্যতা। তাদের যে ১৪টি ম্যাচ আয়োজনের কথা ছিল সেসব পরে ভাগাভাগি হয়ে যায় বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে। মনোরম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পর্দা ওঠে বিশ্বকাপে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একইভাবে দাপট দেখিয়ে যায় ভারত। শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপও জিতে নেয় ভারত। ফাইনালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো স্বাগতিক কোনো দেশ নিজেদের সমর্থকদের সামনে তুলে ধরে বিশ্বকাপ।
শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয় ছয় উইকেটের ব্যবধানে। ব্যাট-বলের অনন্য পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স দেখান যুবরাজ সিং। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার তার হাতে। বিদায় বেলায় থাকা ব্যাটিং কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারও গোটা ক্যারিয়ারের একমাত্র অপ্রাপ্তি মুছে ফেলেন ট্রফি ছুঁয়ে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের জন্য টুর্নামেন্টটা হয়ে আছে হতাশার এক ইতিহাস হয়ে। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ছয়টি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জিতেছিল সাকিব আল হাসানের দল। সমান ম্যাচ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজও। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যথাক্রমে ৫৮ ও ৭৮ রানে অল আউট হওয়ার স্মৃতি। নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে শেষ আটে চলে যায় ক্যারিবীয়রা।
পাঁচ-পাঁচটি ট্রফি!
২০১৫
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৫ আইসিসি কর্তৃক পরিচালিত ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার একাদশ আসর। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ মার্চ, ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড - যৌথভাবে আয়োজন করে। এ আসরে সর্বমোট ৪৯টি খেলা অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার খেলাটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়।
২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলে আয়োজক দুই স্বাগতিক দল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ২৯ মার্চ, ২০১৫ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল ম্যাচটি। ফাইনালে ব্ল্যাক ক্যাপদের ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে উপর্যুপরি পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে নেয় অজিরা। এ খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে প্রায় ৯৩,০১৩ জন দর্শক উপস্থিত ছিলেন। যা অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট খেলায় দর্শক সমাগমের এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে।