মুক্তিযুদ্ধের যত জাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:৪৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০১৯
একাত্তরের মার্চ ছিল এক গৌরবগাথার মাস। এই মাসের ২৫ তারিখ থেকে লেখা শুরু হয়েছিল এক অমর মহাকাব্য, যার নাম বাংলাদেশ। এ মাসেই বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেসব প্রতিরোধের গল্প নিয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর। একেকটি জাদুঘর আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে একাত্তরের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোয়-
১৯৯৬ সালের ২২শে মার্চ উদ্বোধন হওয়া এই জাদুঘরে প্রায় দশ হাজারের অধিক নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে অথবা আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে নিজস্ব জমিতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে এই জাদুঘরের নিজস্ব ভবন। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সুদৃশ্য ভবনটির দ্বিতীয় তলায় উঠতেই চোখে পড়বে ছাদের সঙ্গে টাঙানো একটি যুদ্ধবিমান। নাম ‘হকার হান্টার’। আসন একটাই, চালকের। ভেতরে প্রস্তুত থাকত কামান, মিসাইল ও বোমা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই হকার হান্টার যুদ্ধবিমানটি পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য ত্রাস হয়ে উঠেছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এই যুদ্ধবিমান দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বেশকিছু ঘাঁটি। সিঁড়ি বেয়ে ওপরের তলায় উঠতেই বিশাল করিডোরে দেখা যাবে শিখা চির অম্লানের। চারপাশে পানি আর মাঝখানে শহীদের স্মৃতি নিয়ে জ্বলছে শিখা।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগে জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সেটা ছিল মার্চের ২২ তারিখ। ৫ সেগুন বাগিচার ছোট্ট দোতলা বাড়িটিতে। মুক্তিযুদ্ধের অনেক দুর্লভ বস্তু আছে এই জাদুঘরে। তবে প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পর আগারগাঁওয়ের নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ১৬ এপ্রিল ২০১৭ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। তিনিই ২০১১ সালের ৪ মে ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে নির্মাণকাজের সূচনা করেছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও ইতিহাস তুলে ধরতে অনন্য পরিকল্পনায় সাজানো হয়েছে জাদুঘরের গ্যালারিগুলো। প্রতিটি গ্যালারিও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী নানান স্মারক। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ নানা ডকুমেন্ট। একই সঙ্গে রয়েছে নানা স্মারক ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তুলে ধরার ব্যবস্থা। মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, মরণপণ যুদ্ধ করেছেন, তাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জাদুঘরে রয়েছে নানা স্মারক ও নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দুর্লভ আলোকচিত্র, চিঠিপত্র, ভিডিও চিত্র, দলিল, স্মৃতিচিহ্নের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিটি গ্যালারি সাজানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এখানে প্রায় ২৫ হাজার নিদর্শন রয়েছে। গ্যালারিগুলোতে ঘুরে ফিরে তা দেখা যাবে। এছাড়া রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। অডিও-ভিডিও ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নানা নিদর্শন।
নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় জানাতে জাদুঘরে রয়েছে ইন্টার অ্যাকটিভ স্পেস ও ওপেন এয়ার থিয়েটার। এছাড়া রয়েছে তিনটি সেমিনার হল ও ২৫০ আসনের একটি অডিটরিয়াম। তাতে মুক্তিযুদ্ধ-ভিত্তিক নাটক, চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও অন্যান্য পারফর্মিং আর্ট প্রদর্শন করার ব্যবস্থা ছাড়াও নানা আয়োজন।