দর্শনের সারাৎসার
বাঙালি দর্শন
তৌফিকুল ইসলাম
🕐 ৫:২৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
জ্ঞানের আদি ও ধ্রুপদী বিষয় হিসেবে দর্শনচর্চার প্রয়োজনীয়তা এবং বর্তমান বিশ্বের প্রাসঙ্গিকতার উপলব্ধি থেকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো ২০০২ সালে বিশ্ব দর্শন দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ব দর্শন দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবস উপলক্ষে দর্শনের সারাৎসার খোঁজ করেছেন তৌফিকুল ইসলাম
বাঙালির চিন্তা-চেতনা, যুক্তি-তর্কে, ভাবে-বিশ্বাসে ও বিচার-বিশ্লেষণে প্রবহমানকালের সূত্র ধরে গড়ে উঠেছে এক অনন্য মনন বৈশিষ্ট্য যা বাঙালির দর্শন হিসেবে খ্যাত। ড. আব্দুল হাই ঢালী তার ‘বাংলাদেশ দর্শন’ বইয়ে বলেন, প্রাক-বৈদিক চিন্তাধারা, বৈদিক চিন্তাধারা, বেদ বিরোধী চিন্তাধারা, ইসলামী চিন্তাধারা, দেশজ মরমীতত্ত্ব এবং পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষ বিচারধর্মী চিন্তাধারার সমন্বয়ে যে দার্শনিক ভাবধারা গড়ে উঠেছে তাই বাঙালির দর্শন।
বাঙালির দর্শন সম্পর্কে অনেকে নৈরাশ্যজনক কথা বলে থাকেন। অনেকের মতে, বাঙালির ধর্মকর্মে ঐতিহ্য আছে, বর্ণাঢ্য কাব্য সাহিত্য ও শিল্পকলা আছে; কিন্তু উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কোনো দর্শন নেই। বাঙালি সংকর জাতি। জলবায়ুগত কারণে বাঙালি মাত্রই আবেগপ্রবণ, জীবন বিরাগী, কর্মবিমুখ ও পরলোকমুখী। তাছাড়া দর্শন চর্চার জন্য যে দৃঢ় মানসিকতা ও যুক্তিনিষ্ঠতা থাকা দরকার বাঙালির তা নেই।
এই অভিযোগের পেছনে যে কিছুটা সত্যতা আছে তাকে একবারে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। কারণ, জলবায়ুগত কারণেই হোক, আর রক্তসঙ্কর জাতি বলেই হোক, বাঙালির মনে হৃদয়াবেগ একটু বেশি প্রশ্রয় পেয়েছে বটে। কিন্তু তাই বলে বাঙালির সাহিত্যে দার্শনিক মনোবৃত্তির উপস্থিতি অস্বীকার করারও কোনো যুক্তি নেই। যেহেতু বাঙালির দর্শন একটি প্রাচীন দর্শন এবং এ দর্শনে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে বিভিন্ন মতের উদ্ভব হয়েছে, তাই বাঙালির দর্শনের কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
বাঙালি দর্শনের মূলনীতি : পৌরণিক উপকথা, ধর্ম ও দর্শন এ তিনটি বিষয় একসাথে চলে, এদেরকে একত্রে সমঅবয়ব বলা হয়। বাঙালির দর্শনকে ধর্ম থেকে আলাদা করা যায় না। এ প্রসঙ্গে ক্ষিতি মোহন সেন বলেন, ‘এখানে ধর্মে ও দর্শনে হরিহর আত্মা, দর্শনে কাব্যে গলাগলি।’