ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিশ্চিহ্ন ঢালচর, চর আবদুল্লাহ

রফিকুল ইসলাম মন্টু
🕐 ৬:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৮

’৭০-এর ওই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ভেসে গিয়েছিল ভোলা জেলার সর্বদক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার ছোট্ট সম্ভাবনাময়ী দ্বীপ ঢালচর। ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ দ্বীপটিতে তখন কেবল জনবসতি শুরু হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ সেখানে ঘর বাঁধতে শুরু করেন। অনেকে গরু-মহিষ চড়াতে ওই চরে মৌসুমভিত্তিক অবস্থান করতেন। প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের তোড়ে পানি বাড়তে থাকে।

মানুষ তখন অসহায় হয়ে পড়েন। একটিমাত্র দোতলা ভবনে আশ্রয় নেন কিছু মানুষ। বন-জঙ্গলের কারণে দূরের মানুষরা আশ্রয়ে আসতে না পেরে ভেসে যায় সবাই। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতির দ্বীপ ইউনিয়ন চর আবদুল্লাহর ব্যাপক ক্ষতি হয়, প্রাণ হারান বহু মানুষ। অনেক পরিবার একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়।
ঢালচরের একমাত্র পাকা ভবনে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে যাওয়া বাসিন্দা ইউসুফ আলী পাটোয়ারী এখনো সেখানে বসবাস করছেন। বয়স ৬৬ বছর। ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ে ছিলেন ১৬ বছরের কিশোর।
সেদিনের ভয়াল চিত্র তুলে ধরে তিনি জানালেন, সে প্রলয়ের কথা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। কীভাবে যে বেঁচে আছি আল্লাহই জানেন। ঘূর্ণিঝড়ের দুই বছর আগে বড় ভাইয়ের সঙ্গে এই চরে আসি। ঘূর্ণিঝড়ের আগের দিন দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে প্রবল বেগে বাতাস আসে, পানি বাড়তে থাকে। কিছু মানুষ পাকা ভবনে আশ্রয় নিতে পারলেও অনেকেই সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। পাকা ভবনের বাইরে থাকা মানুষদের সবাই ভেসে গেছে।
শুধু মানুষ নয়, শত শত মহিষ, গরু পানির প্রবল তোড়ে ভেসে যায়। ঢালচরের বাসিন্দা ৯৫ বছর বয়সী আমিন উদ্দিন বলছিলেন, আমাদের তো আল্লায় বাঁচাই রাখছে।
চরফ্যাশনের কুলসুমবাগ গ্রামে ৭২ বছর বয়সী হাসান আহাম্মদের সঙ্গে আলাপকালে উঠে আসে ঢালচরের ভয়াল চিত্র। চরফ্যাশনে বাড়ি থাকলেও গবাদিপশু ও জমি দেখাশুনা করতে ঢালচরে থাকতেন হাচান আহাম্মেদের বাবা মৌলভি মন্তাজ উদ্দিন, বড় ভাই হোচেন আহাম্মদ ও ছোট ভাই নূর মোহাম্মদ। প্রবল ঝড়ের তোড়ে মহিষ-গরু, অন্য সম্পদসহ তারা সবাই ভেসে যায়।
এদিকে হাচান আহাম্মেদ নিজেও পড়েছিলেন প্রবল ঝড়ে। পাঁচ দিন পরে বাবা-ভাইদের খোঁজে ঢালচরে যান হাচান। কাউকেই আর খুঁজে পাননি। ওখানে গিয়ে জানতে পারেন, অধিকাংশ মানুষ, গবাদিপশুসহ সবকিছু ভেসে গেছে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper