প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
রফিকুল ইসলাম মন্টু
🕐 ৬:৪২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৮
দ্বীপ জেলা ভোলার তজুমদ্দিনের শশীগঞ্জের বাসিন্দা মিজানুর রহমান নজু, যার বয়স এখন ৬০ বছর। ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। হাকিমুদ্দিন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, পানির প্রবল তোড়ে ঘর ভেসে যাওয়ার পর একটি আমগাছ ধরার সুযোগ পাই। ওই আমগাছে থাকা ৭ জন প্রায় ২ ঘণ্টা পানির সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন।
ভোরে আমগাছ থেকে নেমে আর বাড়িঘর চিনতে পারছিলেন না। নিথর দাঁড়িয়ে থাকেন। দু’এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাড়িঘর দেখতে পাননি। তিনি বলেন, আমাদের কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিল না। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাননি। আশ্রয়ের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বেড়িবাঁধ থাকলেও তা ধসে গিয়ে পানি প্রবেশ করে। কীভাবে যে সেই বিপদ সামাল দিয়েছি, তা জানি না। আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতে হয়েছে।
এ ছাড়া রাতভর গাছে ঝুলে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচেছেন ভোলার চরফ্যাশনের দৌলতপুরের পিয়ারা বেগম। তার কোলে থাকা প্রায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশুসন্তান ইয়াসিন মোহাম্মদ এখন সাংবাদিক ও সংগঠক। পিয়ারা বেগম বলেন, এক হাতে গাছের ডাল, অন্য হাতে শিশু। এভাবে গাছের ডালে ঝুলেছি সারা রাত। একদিকে নিজের জীবন, অন্যদিকে শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা। বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগে কি না, সেটাও বড় চিন্তা। আল্লায় বাঁচিয়ে রেখেছে। পিয়ারা বেগম বলেন, আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কোথাও আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই বলে আমরা ঘরেই থাকার সিদ্ধান্ত নেই। ওদিকে পানিও বাড়তে থাকে। চোখের সামনে দেখি, আমাদের সামনে বড় বিপদ। কোথায় যাব, ভাবতে পারি না। প্রথমে ঘরের মাচায় উঠি। পানি ওঠে সেখানে। এরপর ঘরের চালায় উঠি। চালা ধরে কিছুক্ষণ থাকার পর পানিতে ভাসিয়ে নেয় চালা। এরপর চালার ওপরই ভাসতে থাকি।