বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প
শরিফ সিকদার
🕐 ৩:৩৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
কালের বিবর্তনে বর্তমানে বাজারের সিলভার ও প্লাস্টিক নানা জাতীয় সামগ্রীর দাপটে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীদের মাটি দিয়ে তৈরি করা জিনিসপত্র প্রায় বিলুপ্তির পথে। কুমাররা প্রথমে ভূমি থেকে মাটি সংগ্রহ করে হাত ও পায়ের সাহায্যে কাঠের পিটনা দিয়ে থেতলে পাত্র তৈরির উপযুক্ত করে তোলে।
মাটিকে প্রস্তুত করে পাত্রের আকার ও আকৃতি সম্পন্ন করে। তারপর সূর্যের তাপে পাত্রটিকে শুকানো এবং সবশেষে তা আগুনে পুড়িয়ে তাতে রঙ লাগানো হয়। তারপর কুমার সম্প্রদায় মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের মাটির পাত্র।
তারমধ্যে মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগের মতো ব্যবহার করছে না মানুষ। এ কারণে কুমারদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। কাপাসিয়া উপজেলা আড়াল, কড়িহাতা, ঘোষাবর, তরগাঁও, কামরা, টোক মৃৎশিল্পীরা এখন বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের ঘরে এখন চলছে হাহাকার। সামান্য আয়ে চলছে না তাদের সংসার। কুমারদের মাটি দিয়ে তৈরি করা জিনিস বর্তমানে প্লাস্টিক, সিলভার ও এলুমনিয়াম তৈরি সামগ্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার কারণে অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে উপজেলা প্রায় শতাধিক কুমার পরিবার।
সরেজমিন কুমারপাড়ায় দেখা গেছে, কুমার পরিবার-পরিজনের দুঃখের করুণ কাহিনী। কুমারদের অভাব অনটনের কারণে তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে হিমশিম খাচ্ছে। আবার অনেকে অভাবের কারণে লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে।
আড়াল গ্রামের পালপাড়া পমিলা রানী পাল মাটি দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির ফাঁকে ফাঁকে বলছিলেন ‘এখন আর আগের মতো আমাগো কুমার পাড়ার আয়-রোজগার নেই। আগে আমরা চরকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করতাম। কিন্তু এখন চরকা ব্যবহার করা হয় না। কারণ চরকা দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করে ভালো দাম পাওয়া যায় না। তাছাড়া এখন আমাদের মাটি ও লাকড়ি কিনে আনতে হয়। শুধু পেটে-ভাতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।’
সুমন্ত পাল বলেন, আমাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে আমি এখন মোবাইল সার্ভিসিং কাজ করি। কারণ বাপ-দাদার পেশা আগের মতো আয় রোজগার হয় না।