ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বন্যায় দুর্ভোগ চরমে

খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ৯:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০১৯

বন্যায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দুই-এক জায়গায় পানি কমলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিস্তারিত জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-

রাঙ্গামাটি : কাপ্তাই লেকের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পয়েছে। বাঁধের ১৬টি গেইটের সবকটিই খুলে দেয়া হয়েছে । ফলে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া, রাউজান উপজেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাজবাড়ী : বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি। এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। আবাদী জমি ও বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

বান্দরবান : গত ৮দিন ধরে সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর গতকাল থেকে আবার চালু হয়েচে। জেলার সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারনে জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। বান্দরবান পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডসহ ৭টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গিয়ে ধসে পড়ে সড়ক, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ঘরবাড়িসহ ফসলের।

ইসলামপুর (জামালপুর) : বন্যা কবলিতরা এ উপজেলায় উলিয়া বাজার পাইলিং বাঁধ, ঘরের চাল, বিভিন্ন উচুঁ জায়গায় ও ব্রিজের উপর গবাধী পশুসহ খোলা আকাশে নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ঘরে পানি উঠায় চকিতে বসে আছেন তিনি।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : পানিবন্দি শত শত পরিবারের মধ্যে এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। তবে টিকে থাকার জন্য সেখান মানুষ জানিয়েছেন ‘আমরা ত্রাণ চাই না। বীজ ও চারাসহ জরুরি ভিত্তিতে কৃষি পূণর্বাসন চাই।’ কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক জানান, ৫২ মে.টন চাল বরাদ্দ হয়েছে।

লালমনিরহাট : রেললাইনে বন্যার পানি ওঠায় গাইবান্ধা-বগুড়া হয়ে ঢাকা রুটে লালমনিরহাটের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাত হোসেন জানান, লাইনে পানি উঠে যাওয়ায় করতোয়া, পদ্মরাগ, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, দোলনচাঁপা ও বগুড়া এক্্রপ্রেসসহ পাঁচটি ট্রেন গাইবান্ধা, বাদিয়াখালি ও বোনারপাড়া স্টেশনে আটকা পড়েছে। বন্যার পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত লালমনিরহাট-গাইবান্ধা-বগুড়া রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

নেত্রকোণা : অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলের কারণে নেত্রকোনা জেলার আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ত্রাণ দিতে এসে ফটোসেশনে ব্যাস্ত থাকেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিগণ রাস্তার পাশে এলাকা বা মহল্লায় বিতরণ করে চলে যায়। কিন্তু গ্রামের ভিতরে কেউ যায় না। বন্যায় ইতিমধ্যে জেলার কলমাকান্দা, দূর্গাপুর, বারহাট্টা, পূর্বধলা, আটপাড়া ও নেত্রকোণা সদরসহ ২২ ইউনিয়নের ২৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার।

চকরিয়া (কক্সবাজার) : উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার শতাধিক সড়ক, উপ-সড়ক ও বেঁড়িবাধ ভেঙে গেছে। অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বন্যার ফলে ৪০ কোটি ৫৫লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতির তালিকা চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছেন।

সুনামগঞ্জ : পৌরসভার বড়পাড়া বস্তি এলাকা, পশ্চিম হাজীপাড়া , নবীনগর, এলাকায় মানেবতর জীবনযাপন করছেন অর্ধশতাধিক পরিবার। বড়পাড়া সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন ১৮ পরিবার। সেখানে আজও কোন সহায়তা দেওয়া হয়নি। আশ্রয় নেওয়া লোকেরা বিশুদ্ধ পানি ও সেনিটেশন সংকটে ভোগছেন।

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : উপজেলা রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে শহরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা অফিস আদালত, রৌমারী হাট-বাজারসহ গ্রামগঞ্জে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়াও রাজিবপুর উপজেলা অফিস আদালত, রাজিবপুর হাট-বাজার বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপঙ্কর রায় বলেন রৌমারী উপজেলা রক্ষা বেড়িবাঁধ মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাঁধটি ভেঙে যায়। উপজেলা শহরসহ ৬টি ইউনিয়নে প্রায় নব্বই ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে জেলা পরিষদের বিকল্প রিং বাঁধের ৮০ মিটার ধসে পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৭শতাধিক পরিবার। এর ফলে কাজীপুর-ধুনট আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা ডুবে গেছে। কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, বাঁধ ধসে পাশের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ে।

মান্দা (নওগাঁ) : নওগাঁর মান্দায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে খেতের ফসল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুশফিকুর রহমান জানান, বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে মোমবাতি, খাবার স্যালাইনসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হবে।

জলঢাকা (নীলফামারী) : উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছে ভাবনচুর, হলদী, বান পাড়া, মুন্সিপাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, গোপালঝাড় ভাটির চর, বিএসসি পাড়া, হারাগাছ বান পাড়া ও আলসিয়া পাড়া বাধের পারসহ নিম্নাঞ্চলের ১১ হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশী মানুষ। পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটায় নদীর বুকে বসবাসকারী বন্যাকবলিত পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

ডিমলা (নীলফামারী) : ডিমলা উপজেলায় ৯০০ একর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। এর মধ্যে ২২৫ বিঘা জমির ফসল সম্পন্ন রূপে ক্ষতি হয়েছে। বসতঘর বিলিন হওয়া ৪৮ পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে ৫ হাজার করে ২ লাখ ৪০ হাজার ও বন্যার পানিতে ভেসে আসা সাপের কামড়ে মারা যাওয়া পূর্ববাইশপুকুর গ্রামের গৃহবধু মোর্শেদার (৩০) পরিবারকে ১০ হাজারসহ মোট আড়াই লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার এসব নগদ অর্থ বিতরন করেন।

কুড়িগ্রাম : ঘরে শুকনো খাবার নেই। নেই রান্নার খড়িও। নলকুপ তলিয়ে থাকায় মিলছে না বিশুদ্ধ খাবার পানি। টয়লেট ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে বিড়ম্বনা। এ চিত্র এখন কুড়িগ্রামের ৪ শতাধিক চরাঞ্চলসহ জেলার ৫৬ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক পরিবারের। এসব পরিবারের প্রায় সোয়া ৬ লাখ মানুষ তাদের গবাদি পশুসহ অবর্ণনীয় কষ্টে দিন পার করছেন। এদের বেশির ভাগ মানুষই বন্যার থৈ থৈ পানির মাঝে বাড়িতে নৌকায় ও ঘরের ভিতর মাচান উঁচু করে অতি কষ্টে দিন-রাত যাপন করছেন। শুকনো খাবারের তীব্র সংকটে পড়েছেন পানির মাঝে বসবাসকারী পরিবারগুলো।

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) : গত কয়েকদিনে যমুনা ধলেশ্বরী নদীর পানি অব্যাহত ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নাগরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে রাস্তার পাশে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে এখন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে।

শিবচর (মাদারীপুর) : পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে শিবচরের চরাঞ্চলের ৩টি ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গন আগ্রাসী রূপ ধারন করেছে। ভাঙ্গনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে অর্ধশত ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আধুনিকতার ছোয়া পাওয়া চরাঞ্চল পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে গ্রাস হয়ে যাচ্ছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে রয়েছি। এখানে ত্রাণ তৎপরতা শীঘ্রই শুরু করা হবে।

 
Electronic Paper