ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা
খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ৯:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৯
টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের নদী-নদীতে হুহু করে বাড়ছে পানি। এ অবস্থা চলতে থাকলে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষগুলো ভয়াবহ বন্যাকবলিত হবে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। কোথাও কোথাও অপরিবর্তিত থাকলেও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত ঘরবাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। বিস্তারিত জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-
বান্দরবান : টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সাংগু এবং মাতামহুরী নদীতে পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের কয়েক শত ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণে বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সড়কে পানি জমে গেছে। সাংগু নদীর পানির বৃদ্ধি পেয়ে বান্দরবান পৌর শহরের ইসলামপুর, উজানী পাড়া, মেম্বারপাড়া, বালাঘাটাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় লোকজন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। এছাড়া সদর উপজেলা ও লামা পৌর এলাকা, আলীকদম সদর, নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বান্দরবান-কেরানিহাট সড়কের বাজালিয়া নামক স্থানে সড়কে পানি ওঠায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ গত চারদিন ধরে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন জানান, অবিরাম বৃষ্টির কারণে বান্দরবানে পাহাড়ি ঢল আর নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আকার ধারণ করেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের নিরাপদ আশ্রয়, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গঙ্গাচড়া (রংপুর) : তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল শুক্রবার বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ডালিয়া সেতুর সবগুলো স্লুইচগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। তিস্তা বেষ্টিত ইউনিয়নগুলোর চর এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গিয়ে পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে পুকুর, খামারের মাছ ও আবাদি ফসল তলিয়ে গেছে। গবাদি পশু-পাখি ও ছোট শিশু এবং বৃদ্ধ মানুষ নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবারের প্রধান নারী-পুরুষরা। বিশুদ্ধ পানি ও রান্নাকৃত খাবার সমস্যা কারণে অনেকে শুকনো খাবার, আবার কেউ আত্মীয়দের দেওয়া খাবার খাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও উঠেছে পানি। পানিবন্দি মানুষগুলো ভেলায় চলাচল করছে।
এদিকে, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পানিবন্দি এলাকা গত বৃহস্পতিবার পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। তিনি দ্রুত এসব মানুষকে সহায়তার আস্বাস দেন।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, কোলকোন্দ ইউনিয়নে পশ্চিম চিলাখাল চর, চিলাখালচর, মটুকপুরচর, খলাইরচর, বিনানিবা চর, সাউদপাড়া বাঁধের ধার, উত্তর কোলকোন্দ বাঁধের ধার, কুড়িবিশ্বা বাঁধের ধারসহ নিম্নাঞ্চলের এক হাজার ৫০০ পরিবার, মর্নেয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ নিম্ন এলাকার এক হাজার পরিবার, লক্ষ্মীটারীর বাঘেরহাট, টাউরাশের চর, ইশরকুলচর, কলাগাছি চর ও বাঁধের ৮০০ পরিবার, নোহালী ইউনিয়নের চর নোহালী, বাঘডোহরা চরের সাত ও আট নম্বর ওয়ার্ড, বৈরাতি বাঁধের ধারের ৫০০ পরিবার, আলমবিদিতরের হাজীপাড়া, ব্যাংকপাড়া ও বাঁধের ধারের ৩০০ পরিবার, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের ধামুর, বোল্লার পাড় ও গান্নার পাড় বাঁধের ধারের ৪০০ পরিবার এবং গজঘণ্টা ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি ৮৫০ জনের মাঝে চিড়া, মুড়ি, গুড়, দেয়াশলাই ও মোমবাতি বিতরণ করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট (সিলেট) : বন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে গোয়াইনঘাটের পিয়াইন ও সারী নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নেই পানি বেড়ে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলার পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, আলীরগাঁও, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ি, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও হাওর, বাওর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে রয়েছে কয়েক হাজার পানিবন্দি মানুষ। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেটের বৃহত্তর দুটি পাথর কোয়ারি বন্ধু রয়েছে।
উপজেলার লাখেরপাড় এলাকার বাসিন্দা ব্যবাসয়ী সামাদ আহমেদ জানান, কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তÍঘাটে পানি উঠার ফলে এক ধরনের ভোগান্তিতে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে প্রয়োজনীয় আরও ত্রাণসামগ্রীর জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বার্তা পাঠানো হবে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, সবজিসহ আমন বীজতলা।
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদি পাড়া, গারুহারা, ভগবতিপুর, কালির আলগা, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চরবাগার কুটি, চর গুজিমারী, বাবুর চর, গাবুরজানসহ ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার বিভিন্ন ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোর ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদিয়া পাড়া গ্রামের এরশাদুল হক জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হু হু করে বাড়ছে। তীরবর্তী ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গত ৩০ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চকরয়িা (কক্সবাজার) : উপজলোর ১৮টি ইউনয়িনের অন্তত ১২টি ইউনিয়ন বন্যার তলিয়ে গেছে। এছাড়াও পৌরসভা এলাকার বেশরিভাগ ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজলোর দুই লাখ মানুষ। মাতামুহুরী নদীর পানি গত বৃহস্পতবিার রাত ৮টা পর্যন্ত বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষেণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবলোয় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী র্কমর্কতা (ইউএনও) নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) : নাগেশ্বরী উপজেলার দুধকুমর, গঙ্গাধর, সংকোষসহ ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চল। প্লাবিত হয়েছে উপজেলার কচাকাটা, বামনডাঙ্গা, কেদার, বল্লভের খাষ, কালিগঞ্জ, নুনখাওয়া নারায়াণপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলসহ চরাঞ্চল।
কচাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল জানান, কচাকাটা ইউনিয়নের গঙ্গাধর এবং সংকোষ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শৌলমারী, ধনিরামপুর, তরিরহাট এলাকা প্লাবিত হয়ে চরবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাত হোসেন জানান, দুধকুমর নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত চারটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গাধরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নারায়ণপুর ইউনিয়নটি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৬.০৫ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। দুধকুমর, গঙ্গাধর এবং সংকোষ নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। প্রতিদিনই যমুনা নদীতে বাড়ছে পানি। সেইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে ভাঙনের তীব্রতা। প্রতি দিনই বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও গাছপালা। যমুনায় অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে অভিযোগ ভাঙনকবলিতদের। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। বাঐখোলা বাঁধসহ বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপথ। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে নদীপাড়ের আট গ্রামের মানুষের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে, ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের কবলে পড়েছে কাজীপুর উপজেলার বাহুকা, সিংড়াবাড়ি, বাঐখোলা ও পাটগ্রাম এলাকা। প্রতিদিন ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাঐখোলা বাঁধসহ এসব এলাকার জনপথ। যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মধ্যে রয়েছে গান্দাইল, রতনকান্দি ও শুভগাছা ইউনিয়নের বাহুকা, বাঐখোলা, পূর্ব খুশকিয়া, পাটাগ্রাম, কুড়ালিয়া, সিংড়াবাড়ি, চিলগাছাসহ নদী তীরবর্তী আট গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। অব্যাহত ভাঙনে এসব এলাকার ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বাঐখোলা বাঁধের আধা কিলোমিটারসহ অর্ধশত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অপরদিকে এনায়েতপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায়ও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা, ওমর আলী, আব্দুর রাজ্জাক ইয়াছিন আলী বলেন, গত কয়েক দিনে বাঐখোলা, শুভগাছা গুচ্ছগ্রাম, পাটগ্রাম, পূর্ব খুকশিয়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি ও বেশকিছু বৈদু্যুতিক খুঁটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। বাঐখোলা বাঁধের প্রায় আধা কিলোমিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ভাঙনের কারণ হতে পারে। ৮০ থেকে ৮৫ কিলোমিটার নদীপথ আছে। তার মধ্যে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ৩৫ কিলোমিটার নদী ভাঙন রোধ করে ফেলেছি। আমাদের দুটি প্রকল্প চলমান আছে। এছাড়া কাজীপুরের বাঐখোলা, খুদবান্দি এবং এনায়েতপুরের ব্রহ্মণগাতী, হাটপাচিল এলাকায় ভাঙন রয়েছে। এখানে ভাঙন রোধে প্রকল্প তৈরি করে পাঠিয়েছি।
সিলেট : সিলেটের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দিনভর কখনও গুঁড়িগুঁড়ি আবার কখনও মুসলধারে বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, ধলাই, সারীগোয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকালে কিছুটা রোদের দেখা মিললেও সকাল ১০টার পর থেকে মুসলধারে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি আমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার. শেওলা পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের জকিগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০০ মিলিমিটার। এছাড়া সিলেটের কানাইঘাটে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
পীরগাছা (রংপুর) : রংপুরের পীরগাছায় অস্বাভাবিক হারে পানি বেড়েছে তিস্তার পানি। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিতসহ দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। তিস্তা নদীর ভাঙনে পাঁচটি গ্রাম, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ এবং একটি ক্লিনিক হুমকির মুখে পড়েছে। চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন হুমকির মুখে। ভাঙন দূরত্ব কমতে কমতে এখন বিদ্যালয়টি নদীর মুখে। আর মাত্র ৪০ ফুট অংশ ভাঙলেই তিস্তায় তলিয়ে যাবে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, নদী ভাঙন বিদ্যালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে যেকোনো সময় বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হাসান আলী জানান, প্রতি বছর নদী ভাঙনের ফলে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে। এ অঞ্চলে গত পাঁচ বছরে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমিসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ জানান, বন্যার কারণে সদ্য রোপণ করা আউশ ও আমন বীজতলাসহ প্রায় ১৫ হেক্টর জমির রবি শস্য পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করা হবে।
নীলফামারী : তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীবেষ্টিত প্রায় ১৫টি গ্রামের ১০ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে গত বৃহস্পতিবার পানি সকাল থেকে বৃদ্ধি পেয়ে রাতে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে। গতকাল শুক্রবার পানি কিছুটা কমলেও সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৯টায় বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে তিস্তার পানির বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। এদিকে অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বুড়ি তিস্তা, দেওনাই, চাড়ালকাটা, ধাইজান, খড়খড়িয়া যমুনেশ্বরীসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
নেত্রকোণা : টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয়বারের মতো বাড়তে শুরু করেছে নেত্রকোণার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টাসহ সব নদ-নদীর পানি। সেই সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত চারদিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় বাড়িঘর, নদ-নদী ভাঙন ও বাড়তে শুরু করেছে সোমেশ্বরী, কংস, উব্দাখালী, ঘোমাই, মগড়াসহ সবকটি নদ-নদীর পানি।
সুনামগঞ্জ : অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ছয় উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট, জনপদ, হাট-বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ঢল ও বর্ষণে জেলার আটটি উপজেলার ২০০ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। অবস্থার উন্নতি হলে আবার পাঠদান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান।
এদিকে সবগুলো প্রধান নদ-নদীসহ সীমান্ত নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত চার দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।