ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বানের জলে ঈদ আনন্দ ম্লান

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৯:৪৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০১৮

গত ১২ জুন থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে সিলেটের জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার শতাধিক গ্রামে ছিল না ঈদের আনন্দ। বন্যার পানি মাড়িয়ে ঈদুল ফিতরের জামাত আদায়ে সীমাবদ্ধ ছিল তাদের ঈদ। বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত থাকায় ছিল না ফিরনি ও সেমাইয়ের কোনো আয়োজন।

অন্যদিকে, কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরি-কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধের  ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দুই উপজেলার ৪২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করলেও ঈদুল ফিতরের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিলেট : পাহাড়ি ঢলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন, গোয়াইনঘাটের দুটি, কানাইঘাট পৌরসভাসহ আটটি ইউনিয়ন, জকিগঞ্জের তিনটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ। পাহাড়ি ঢলের ফলে পরিবারগুলোতে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে পড়ে।  জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌধুরী তোফায়েল বলেন, ‘এবার হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ঈদেও কষ্ট করেছেন। পানিবন্দি মানুষের মনে ঈদ আনন্দ ছিল না।’
গোয়াইনঘাট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে উপজেলার পূর্ব জাফলং ও আলীরগাঁও ইউনিয়নের লোকজন ঈদে বেশ কষ্টে ছিল। পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসামপাড়া, সানকিভাঙ্গা, নবমখণ্ড, বাউরভাগ হাওড়, ভিত্রিখেল হাওড়, আলীরগাঁও ইউনিয়নের তিতকুলি হাওড়, নাইন্দার হাওড়, গোপীগাঁও হাওড়, রাজবাড়িকান্দি গ্রামগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা জানান, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিনি দুর্যোগপূর্ণ এলাকার মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌরসভাসহ উপজেলার নয়টি ইউপিতে ১২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ফেনী : জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে থেকে বানভাসি মানুষের জন্য শুকনো এবং রান্না করা খাবার সরবরাহ করলেও দূর্গত এলাকার মানুষ চায় স্থায়ী বাঁধ। তারা জানান, পাহাড়ি ঢলে তাদের ভিটেমাটি সব নিয়ে যায়, যেসব ঘর টিকে আছে তার আসবাবপত্র ও খাবার জলে ভেসে নিদারুণ কষ্টে জীবন কাটছে তাদের।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বন্যায় তাদের ঘরবাড়ি, হাঁস-মুরগি, গরু ছাগলসহ সব ধরনের গবাদি পশু ও খাবারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ছে। ভেসে গেছে পকুরের মাছ ও জমির ফসল। চিঁড়া-মুড়ির সাময়িক সহযোগিতা নয়, প্রয়োজন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী পরশুরাম উপজেলার ২০ গ্রামে ২২ পরিবার ও ফুলগাজী উপজেলার ১৯ গ্রামে তিন হাজার ৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই দুই উপজেলার সর্বমোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৩১ হাজার।
জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় বলেন, ‘ফুলগাজী ও পরশুরামের মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি কমছে এখন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিন-রাত কাজ করছেন এবং তদারকি করছেন। আমরা এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ঢেউটিন দিয়েছি, ঋণ মঞ্জুর করেছি। বরাদ্দ করা হয়েছে দুই টন চাল। চাহিদা পেলে আমরা আরও কার্যক্রম শুরু করব। প্রতিনিয়তই আমরা খবর নিচ্ছি।’

 
Electronic Paper