ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রোগাক্রান্ত প্রকৃতিতে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ, বেহাল দশা নার্সারি ব্যবসায়

অসীম চৌধুরী, রংপুর
🕐 ১:৪১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩

রোগাক্রান্ত প্রকৃতিতে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ, বেহাল দশা নার্সারি ব্যবসায়

আমরা আধুনিক সমাজের মানুষ একমুঠো সবুজের ছোঁয়া চাই, পাওয়া হয় না সহজে। এখন না আছে বৃক্ষ, না আছে ছায়ার শীতলতা। আজ থেকে একযুগ আগেও গাছের সমারোহ ছিলো চোখে পড়ার মতো। শহর কিংবা গ্রামের আশপাশের পিচঢালা রাস্তা ও মেঠোপথ ছিলো গাছে ঢাকা। ছায়ায় নিচে পরম ভালো লাগায় পথিক চলতো। মনে হতো, গাছগুলোর জন্মই হয়েছে পথিকদের প্রশান্তি দেয়ার জন্য৷ পথচারীরা ভালোবাসার উঞ্চ আদরে গাছের প্রতি যত্নবান থাকতো৷ গাছের পরিচর্য়াও করতেন অনেকে৷ আবার অনেক গাছ অনাদরে-অবহেলায় থেকেও মানুষকে প্রমান্তি দিয়ে যেতো ।

 

শহর, নগর, গ্রাম প্রতিটি স্হানে তাকালে দেখা যায়, প্রতিদিনই একটু একটু করে রোগাক্রান্ত হচ্ছে। গাছ উপড়ে দিয়ে চলছে ইট পাথরে পরিবেশ ‘সুন্দর’ করার প্রতিযোগিতা। যার ফলে বাড়ছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ সবুজের সংকট। একারণেই প্রকৃতি ক্রমাগত হয়ে উঠছে রূঢ়, কর্কশ, প্রাণহীন।

নগরায়ন ও উদাসিনতার এই প্রস্তর-কঠিন আঘাতে প্রকৃতি বলে যেন কিছুই নেই আর! চারদিকে রুঢ় উত্তাপ, ঘামে জবজব বিরক্তি। প্রতি বছর সরকারিভাবে বৃক্ষ রোপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও বছরে কী পরিমাণ বেক্তিগত গাছ কাটা হচ্ছে তার কোনও হিসাব কারও কাছেই নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাছ লাগাতে বা কাটতে কারও কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। সঙ্গত কারণে এই হিসাব রাখারও কেউ নেই। পরিবেশ রক্ষায় সরকার মাটির উপরিভাগ কেটে যত্রতত্র পুকুর খনন বন্ধ করেছেন। পুকুর খনন করতে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
আবার জলাশয় ভরাট করতে হলেও একইভাবে প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। গাছ কাটার ক্ষেত্রেও এমন কোন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা গেলে অকারণে নিধনের হাত থেকে জীবন বেঁচে যেত অনেক বৃক্ষের। যাতে পরিবেশের টেকসই উন্নতি হতো।

বৃক্ষ নিধনের চলমানতা অপরদিকে রোপনে উদাসিনতার প্রভাব পড়েছে নার্সারি খাতে। ক্রেতা শুন্যতায় লোকসান গুনছেন নার্সারি ব্যবসায়িরা। সরজমিন পরিদর্শনে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বড়ঘাট সংলগ্ন 'ভাই ভাই নার্সারি' গেলে নার্সারি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, ব্যবসায় চরম মন্দা চলছে।

শ্রমীকদের মজুরি দিতে পারছিনা। হাটগুলোতে এখন আর গাছ বেশি বিক্রি হয় না। নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি করতে না পারায় অধিকাংশ বীজতলায় অনেক চারার বয়স পার হয়ে গেছে। এখন তিনি অবশিষ্ট চারাগুলো কম দামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের কথা ভাবছেন। তবুও মিলছে না গ্রাহক।

এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ময়নুল ইসলাম জানালেন, বৃক্ষ আমাদের প্রকৃতির ফুসফুস। আমাদের বৃক্ষরোপনে আগ্রহী হতে হবে। আমি সবসময়ই বিভিন্ন সভা সেমিনারে বৃক্ষরোপনে উৎসাহ প্রদান করে আসছি। আগামীতে বৃহত্তর বৃক্ষমেলার আয়োজনের মাধ্যমে জনগনকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক মো: মিজানুর রহমান বলেন, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সকল জাগতিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত গাছপালা, পশুপাখি অতি আহরণের ফলে জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

বর্তমানের উৎপাদন পদ্ধতি এবং ভোগবাদী জীবনযাপন অব্যাহত থাকলে ধরিত্রীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা অচিরেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। আমাদের সকলকেই তাই প্রতিবেশ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে এখনই এগিয়ে আসতে হবে।

নার্সারি ব্যবসার দূর্দশা সম্পর্কে তিনি আরও জানান, প্রতিবছর সরকারিভাবে বৃক্ষ রোপণের নির্দেশনা রয়েছে, সেই লক্ষ প্রতিবছর পূর্ণ হয় কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেক্তিগত উদ্যোগ কমে গেছে। সেজন্য বর্ষা মৌসুম ছাড়া নার্সারি গুলোকে কঠিন সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
মোঃ অসীম চৌধুরী

 
Electronic Paper