ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভাগ্য খুলছে পাঁচ মুখের

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০১৮

দরজায় কড়া নাড়ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নভেম্বরের শুরুতেই ঘোষণা হতে পারে তফসিল। সময় যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ততই বাড়ছে জল্পনা-কল্পনা। সৌদি আরব সফর শেষে গত পরশু গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর নতুন করে এ বিষয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা।

নির্বাচনকালীন সরকারে বর্তমান মন্ত্রিসভার আয়তন খুব একটা কাটছাঁট হচ্ছে না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট না করলেও নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে বলে নতুন ইঙ্গিত করেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী স্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকারের আকার বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে খুব একটা ছোট হচ্ছে না। একেবারে কম গুরুত্বপূর্ণ, বিতর্কিত ও বয়সের কারণে অসুস্থ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারেন। তাদের শূন্যস্থানে যুক্ত হতে পারেন নতুন মুখ। অপেক্ষাকৃত তরুণ ও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কয়েকজন এমপির এ ক্ষেত্রে ভাগ্য খুলতে পারে। এ তালিকায় ডা. দীপু মনি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ  নির্বাচনকালীন সরকারে নতুন মুখ হিসেবে যুক্ত হতে পারেন।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তরুণ ও নারী নেতৃত্বের প্রতি বেশি আস্থাশীল। এ ক্ষেত্রে এমন মুখকে তিনি বেছে নিতে চান যার প্রতি জনগণের অভিযোগ নেই, দলের ভেতর কোনো অন্তর্কোন্দলে লিপ্ত নন, স্থানীয় ও কেন্দ্রে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন। নির্বাচনকালীন সরকারে আলোচনায় নতুন যে ৫ মুখের নাম শোনা যাচ্ছে তারা এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ছোট আকারের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল। ‘সর্বদলীয় সরকার’ নামে ওই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদের নেওয়া হয়। বিএনপিকে সেখানে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তারা সেটা প্রত্যাখ্যান করে। ওই মন্ত্রিসভায় নতুন ঠাঁই পাওয়া মন্ত্রীদের বেশ কয়েকজন পরবর্তী মন্ত্রিসভাতেও মন্ত্রী হন। স্বল্প পরিসরের ওই মন্ত্রিসভা সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে।
দশম সংসদ নির্বাচনের আদলে এবারেও ছোট আকারের নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে বলে এ বছরের প্রথম দিকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাও নানা সময়ে একই ধারণা দেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ছোট আকারের নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে ক্ষমতাসীনরা। তারা মনে করছেন, সরকারের আকার ছোট করলে উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা আসবে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দলীয় কোন্দল দলটিতে তুঙ্গে। প্রতি আসনেই ৫-৬ জন সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন আওয়ামী লীগের। অনেক মন্ত্রী-এমপির সঙ্গেই স্থানীয় নেতাদের বিরোধ রয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে শেষমুহূর্তে বাদ পড়লে স্থানীয় পর্যায়ে তারা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন। আর এ কারণেই নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে না।
আগামী ২৬ অক্টোবর (শুক্রবার) আওয়ামী লীগের যৌথসভা। ওয়ার্কিং কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি ও পার্লামেন্টারি কমিটির যৌথ সভাতেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গতবার আমাদের দেশে বিষয়টা ভিন্ন ছিল, মন্ত্রিসভার সাইজ ছোট হয়ে গিয়েছিল, ভিন্ন প্রেক্ষাপট ছিল, বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয় ছিল, পার্লামেন্টে ছিল। এবার সাইজ ছোট হলেও দু-একজন যুক্ত হতে পারে, এ অবস্থায় থাকলেও দু-একজন যুক্ত হতে পারে।’ নতুন মুখের বিষয়ে তিনি বলেন, রুলিং পার্টি থেকে আসতে পারে, মেইন অপজিশন পার্টি থেকেও আসতে পারে। সম্ভবত মেইন অপজিশন পার্টি থেকে আসতে পারে। আমার ধারণা থেকে বলছি, গ্যারান্টি দিয়ে বলছি না।’
নির্বাচনকালীন সরকারে যুক্ত হতে পারেন এমন নতুন মুখের মধ্যে অনেকটাই এগিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য। দলীয় কর্মসূচিতে সরব উপস্থিতির পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তার বড় ভূমিকা রয়েছে। নিজের সংসদীয় এলাকায় তিনি নিয়মিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। তার বাবা এম এ ওয়াদুদ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে একজন। পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে তিনি দলীয় প্রধানের কাছে গ্রহণযোগ্য।
আওয়ামী লীগের তরুণ নেতাদের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গত কয়েক বছর ধরেই দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। দিনাজপুর-২ আসন থেকে পরপর দুবার নির্বাচিত এ নেতা কেন্দ্রে ও নিজ নির্বাচনী এলাকায় সমানভাবে গ্রহণযোগ্য। দলের তরুণ নেতাদের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা আছে। আগামী নির্বাচনে যেহেতু তরুণ ভোটাররা জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর হবেন, তাই তরুণদের আশা-আকাক্সক্ষা ধারণ করতে পারেন এ রকম নেতাকে নির্বাচনকালীন সরকারে রাখতে চাইছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। এসব বিবেচনায় খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নতুন মুখ হিসেবে যুক্ত হতে যাচ্ছেন।
ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাক্যাণ্ডের সময় তার বাবা শেখ ফজলুল হক মণি ও মা আরজু মণিকে হত্যা করে ঘাতকরা। তরুণ এ আইনজীবী আওয়ামীপন্থী আইনজীবী নেতাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। রাজধানীর ধানমন্ডির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধি হয়েও দলীয় বিরোধ অনেকটাই কমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এলাকার উন্নয়নেও তার অবদান রয়েছে। সাবেক বিচারপতি এস কে সিনহাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকার যে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল সেখান থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে আইনজীবীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া স্বচ্ছ ইমেজের জন্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার তার প্রতি নমনীয় মনোভাবও রয়েছে।
জাসদ সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতারও যুক্ত হতে পারেন নির্বাচনকালীন সরকারে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে ১৪ দলীয় জোটে বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে জাসদের। বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচারণার ক্ষেত্রে শিরীন আখতার জোট ও জাসদের অন্যতম কাণ্ডারি। নিজের সংসদীয় এলাকাতেও গত ৫ বছরে প্রভূত উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়া নারীর ক্ষমতায়নেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু রাজনীতি ও সরকারে নারী নেতৃত্বের আরও বেশি অংশগ্রহণ চান সেহেতু নির্বাচনকালীন সরকারে শিরীন আখতার আসার সম্ভাবনা প্রবল।
গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচনকালীন সরকারে প্রধান বিরোধী দল থেকে কাউকে রাখা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে আলোচনায় আসছে কাজী ফিরোজ রশীদের নাম। ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ রশীদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং রওশনপন্থী অন্যতম নেতা। এর আগে, নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টি থেকে আরও দুই-তিনজনকে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন রওশন এরশাদ।

 
Electronic Paper