শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন আজ
প্রেরণাদীপ্ত ইতিহাস
শফিক হাসান
🕐 ১২:০০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০১৮
বিশিষ্ট চিকিৎসক সামন্ত লাল সেনের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন ঘটতে যাচ্ছে। আজ বুধবার উদ্বোধন করা হবে ‘শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’-এর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের অদূরে চানখাঁরপুলে গড়ে তোলা হয়েছে এ ইনস্টিটিউট। এর মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরেকটি গর্বিত ও প্রেরণাদীপ্ত ইতিহাসের জন্ম দিলো বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে স্থাপিত এ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে-এ ইনস্টিটিউটকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে আনন্দমুখর পরিবেশ। সংশ্লিষ্টরা উদ্বোধনকে ঘিরে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। গতকাল দুপুরে ইনস্টিটিউটের গেটে জটলা পাকিয়ে থাকা মানুষকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মেটাল ডিটেক্টরে চেক করিয়ে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন।
গেটের বাইরে ছাড়াও ভবনের বিভিন্ন তলায় অবস্থান করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পথচারী ও উৎসুক জনতাও উঁকিঝুঁকি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে চতুর্দিকে দেখা গেছে সাজ সাজ রব। আরও আগেই ঢামেকের আউটডোর থেকে জরুরি বিভাগের আশপাশের রাস্তার ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ভাসমান হকার ও অস্থায়ী দোকানপাট। জানা যায়, এ ইনস্টিটিউটের তিন তলাবিশিষ্ট বেজমেন্ট (মাটির নিচে) রয়েছে। গাড়ি পার্কিং, রেডিওলজিসহ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগ রাখা হচ্ছে সেখানে। ৫০০টি শয্যা, ৫০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), ১২টি অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভবনটি ভাগ করা হয়েছে তিনটি ব্লকে। এক দিকে থাকবে বার্ন ইউনিট, অন্যদিকে প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট, অন্য ব্লকে একাডেমিক ভবন। প্রথমবারের মতো সরকারি হাসপাতালে যুক্ত হচ্ছে হেলিপ্যাড সুবিধা।
অগ্নিদগ্ধ রোগীর পরিমাণ ব্যাপক আকার দাঁড়িয়েছে গত একদশক ধরে। নানাভাবে অগ্নিদগ্ধ হওয়া মানুষ এত দিন ঢামেকের অন্তর্ভুক্ত একটি অংশ বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিতেন। গ্রামগঞ্জের অনেকেই মেয়েদের মুখে এসিড ছুড়ে মারে, শত্রুতার জেরেও এমনটি করে কেউ কেউ। এসিডের ব্যবহার সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ হলেও তা বন্ধ করা যায়নি। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাসে আগুনসন্ত্রাসের জন্ম দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নানা ধরনের রোগী এসে ভিড় করত ঢামেকের বার্ন ইউনিটে। যেহেতু দেশের অন্য কোথাও পরিপূর্ণ কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান নেই। রোগী অনুপাতে বেড কম থাকায় বিকল্প পন্থা খুঁজেছেন বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, সারা দেশের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জাতীয় প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আজ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে তার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটির।
এ বিষয়ে তিনি খোলা কাগজকে বলেন, শুরুতে আমি ৫টি বেড নিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। সেটা পর্যায়ক্রমে ১০০ থেকে ৩০০ ও শেষে ৫০০ বেডে রূপ নেয়। যেহেতু বাংলাদেশে অসংখ্য মানুষ নানা কারণে পুড়ে যায়, তাদের জন্য বড় একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। এ জন্য আমাদের জনবল তৈরি করতে হবে। বার্ন রোগীরা যেন সুচিকিৎসা পায়, একজন বার্ন রোগীও যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় সেই স্বপ্ন থেকে প্রতিষ্ঠা করেছি ‘শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’।
খ্যাতনামা এ চিকিৎসক আরও বলেন, এখানে যুক্ত হচ্ছে হেলিপ্যাড। এর মাধ্যমে দ্রুত চিকিৎসা সম্পন্ন করা যাবে। তবে এটাই শেষ নয়। আরও অনেক কাজ বাকি। সারা দেশে বার্ন ইউনিট তৈরি করতে হবে। আশা করছি, সাধারণ মানুষও এ সুবিধার আওতায় আসবে। আগে শুরু হোক, তারপর আরও যা করা প্রয়োজন তা করার চেষ্টা করা হবে বলে মন্তব্য করেন রোগীবান্ধক এ চিকিৎসক।
একটি জাতীয় দৈনিকে এসিড সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণার উপদেষ্টা হিসেবে সামন্ত লাল সেন দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এসিডের অপব্যবহার রোধে দীর্ঘদিন ধরে তিনি সোচ্চার। এসিডদগ্ধ মানুষের সুস্থতা ও সুরক্ষায়, প্রান্তিক মানুষের প্রতি তিনি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন তা তুলনাহীন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিনিও চাইলে অনেকের মতো অর্থবিত্তের পেছনে দৌড়াতে পারতেন। কিন্তু তা না করে দাঁড়িয়েছেন নিগৃহীত মানুষের পাশে। একক প্রচেষ্টায় তাদের জন্য গড়ে তুলেছেন বিশে^ অনন্য একটি প্রতিষ্ঠান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৯১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দুই একর জমিতে ১৮ তলাবিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউট নির্মিত হয়েছে। শুরুতে বরাদ্দ ৫২২ কোটি টাকা থাকলেও নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়ায় ৯১২ কোটিতে।
২০১৬ সালের এপ্রিলে বিশেষায়িত এ ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এ ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ শুরু করে।