জন্মনিবন্ধন জটিলতায় শিক্ষাগ্রহণে অনিশ্চয়তা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০১, ২০২১
রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ভর্তি আবেদন। চলবে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভর্তিতে দরকার ডিজিটাল নিবন্ধন। আবার শিশু শিক্ষার্থীর ডিজিটাল নিবন্ধনের জন্য বাবা মায়ের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। এ নিয়ে ভর্তি জটিলতায় পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে শিশুর বয়স ৬ বছর পূর্ণ না হওয়াও একটি কারণ। সব মিলিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃচিন্তা ও সংশয়ে রয়েছেন অভিভাবকরা।
সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান অনলাইন কার্যক্রমে যুক্ত হলেও এক্ষেত্রে এক হাজারের বেশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় এ লটারিতে অংশ নেয়নি। এর মধ্যে ভিকারুননিসাসহ দেশের একাধিক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, বাচ্চারা ডিজিটাল নিবন্ধনের জন্য বাবা মায়ের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। এ কারণে অনলাইনে আবেদন করতে তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা। অথচ যদি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করা যেত তবে কোনো বিড়ম্বনায় থাকতো না।
রাজধানীতে ফুল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে বলেন, আমি সপরিবারে ঢাকায় বাস করলেও আমার গ্রামের বাড়ি যশোর। আমার স্ত্রীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ। এখন মেয়ের ডিজিটাল নিবন্ধন করতে আমাকে প্রথমে যশোর যেতে হবে আর আমার স্ত্রীকে যেতে হবে কিশোরগঞ্জ এরপর মেয়ের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন করা সম্ভব হবে। যা শুধুই সময়সাপেক্ষ নয় বিড়ম্বনারও বটে।
অভিভাবক মিনার আবেদিন এ বিষয়ে বলেন, করোনার কারণে গেল বছর আমার মেয়ে আয়শাকে স্কুলে ভর্তি করতে পারিনি। এবার সরকারের নতুন নিয়মে ভর্তি আবেদনই করতে পারছি না। আয়শা স্কুলে ভর্তি হতে পারবে কি না তা আমি বুঝতে পারছি না। শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনায় বলা হয়েছে প্রার্থীরা প্রাপ্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি আবেদনে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দের ক্রমানুসারে নির্বাচন করতে পারবে। ডাবল শিফটের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উভয় শিফট পছন্দ করলে দুটি পছন্দক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। একই পছন্দক্রমের বিদ্যালয় কিংবা শিফট দ্বিতীয়বার পছন্দ করা যাবে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. বেলাল হোসাইন এ প্রসঙ্গে বলেন, অনলাইনে আবেনের জন্য শিক্ষার্থীর ডিজিটাল সনদ লাগবে। সেটা যদি কারোও না থাকে বা এরজন্য কেউ যদি আবেদন না করতে পারে এইমুহূর্তে আমাদের কিছু করার নেই। এছাড়া সফটওয়ারগুলোও আমরা মেইনটেইন করি না। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের যে শর্ত দেয়া হয়েছে এটাতো তাকে মানতেই হবে। তবে যেসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ভর্তি লটারির বাইরে রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে এসব শিক্ষার্থী আশা করি অংশ নিতে পারবে।
অন্যদিকে সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে এসেছেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার সন্তানের জন্য ক্যাচমেন্ট এরিয়ার মধ্যে পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দের সুযোগ থাকলেও তিনি তার ক্যাচমেন্টে তিনটি ও অঞ্চলের বাইরে আরও দুটিতে আবেদন করে ফেলেছেন। এ কারণে তার আবেদনটি বাতিল হয়েছে কি-না তা জানতে এসেছেন।
এ বিষয়ে মাউশি কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে আবেদন করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কিছুই করার থাকে না। অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রমের কারিগরি সহায়তা দেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও বাংলাদেশ টেলিটক। এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রণালয় ও মাউশি সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবে। তার আবেদনটি বাতিল না হলেও তিনটি বিদ্যালয়ের লটারিতে তার সন্তানের নাম থাকবে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে লটারি পরিচালনা করবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবে। যা মনিটরিং করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।