ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ছয় অজ্ঞাতসহ সাত লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৮

নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকায় গতকাল রোববার সাত যুবকের লাশ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একসঙ্গে চারজন, রূপগঞ্জে একজন এবং রাজধানী ঢাকার দিয়াবাড়িতে দুজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধার হওয়া লাশগুলো গুলিবিদ্ধ ও মাথা থেঁতলানো ছিল। তাদের প্রত্যেকের বয়স ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে।

প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জানা গেছে আড়াইহাজারে পাওয়া এই চার যুবককে একই শটগানের গুলি দিয়ে মারা হয়েছে। তাদের মাথায় শটগানের গুলি পাওয়া গেছে। চারজনের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তার নাম লুৎফর রহমান মোল্লা (৩৭)। ঢাকার রামপুরার ওয়াপদা রোডে তার বাসা।
অপরদিকে দিয়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া লাশগুলো সম্পর্কে পুলিশ বলেছে নিহত ব্যক্তিদের কয়েকদিন আগে হত্যা করে কাশবনে ফেলে রাখা হয়েছে। লাশে পচন ধরেছে। রাজউকের উত্তরা আবাসিক এলাকার ১৬ নম্বর সেক্টরের ফাঁকা জায়গায় লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল ভোরে আড়াইহাজারের পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলিসহ দুটি পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। অপর যুবকের লাশ পাওয়া গেছে রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে। তার বয়স আনুমানিক (৪০)। তাকে হত্যার পর মুখের একপাশে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাঁচরুখী এলাকায় চারজনের লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। পরে বোঝা যায়, চার যুবকের মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ‘গ্যাংওয়ারে’ এ ঘটনা ঘটতে পারে।
গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আসাদুজ্জামান জানান, চারজনকে পেছন থেকে গুলি করে মারা হয়েছে। তিনজনের মাথায় একই শটগানের গুলি পাওয়া গেছে। গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত চারজনের মধ্যে পরিচয় মিলেছে লুৎফর রহমান মোল্লার।
একই জেলার রূপগঞ্জে এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কের কুশাব জামে মসজিদের পাশ থেকে গতকাল ভোর অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বয়স অনুমান করা হচ্ছে ৪০। হত্যার পর তার মুখের একপাশ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগি নিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে ওই যুবক। হত্যা করে তাকে সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, সকালে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে কুশাব জামে মসজিদের পাশে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পার্শ্ববর্তী কুশাব জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল মতিন জানান, ফজরের নামাজের আগেই সড়কে পুলিশের একাধিক গাড়ি ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। নামাজ শেষের পরপর কিছু পোশাকধারী পুলিশ সড়কটি বন্ধ করে দিয়ে মুসল্লিদের চলাচলে বাধা দেয়। এর কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে লাশটি পড়ে থাকতে দেখেন তারা। সকাল ৮টার দিকে অপর একদল পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জে আতঙ্ক
এদিকে নারায়ণগঞ্জে একইদিনে পাঁচ লাশের সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় গোটা জেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জে অজ্ঞাতনামা তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। পূর্বাচল উপশহরের কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোডের (৩০০ ফুট সড়ক) আলমপুর এলাকায় ১১ নম্বচর সেতুর নিচে পাওয়া গিয়েছিল ওই তিন লাশ। প্রথমে পরিচয় জানা না গেলেও পরে তাদের পরিচয় মেলে। নিহতরা হলেন- মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির বিক্রমপুর গ্রামের নূর হোসেন বাবু (২৯), ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের শিমুল আজাদ (২৬), রাজধানীর মুগদা এলাকার সোহাগ ভূঁইয়া (৩৪)।
তারা তিনজনই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গার্মেন্ট পণ্যের ব্যবসা করতেন। তাদের পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, সাদা পোশাকধারী কিছু লোক পুলিশ পরিচয়ে তাদের আটক করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যেকের বুকে ও মাথার একাধিক স্থানে গুলির চিহ্ন ছিল।
এর পর একই মাসের ২১ তারিখ রূপগঞ্জে একটি বিল থেকে অজ্ঞাতনামা (৩২) আরেক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হয়, দুর্বৃত্তরা ২-৩ দিন আগে তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বিলের পানিতে ফেলে রেখে যায়।
এর আগে ৩ মে রূপগঞ্জেই পাওয়া গিয়েছিল আরও এক অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ। উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাড়িয়াছনি এলাকার একটি খাল থেকে ওই লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করেছিল রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা সে যুবককে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খালের পানিতে ফেলে রেখে যায়। এভাবে একের পর এক অজ্ঞাতনামা লাশের ঘটনা নারায়ণগঞ্জবাসীকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে বলছে অনেকে।

 
Electronic Paper