ঘরে ফেরানোর কারিগর
সাইদ রহমান
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৮
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, দীর্ঘদিন ধরে দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জীবন লণ্ডভণ্ড দুর্ধর্ষ জলদস্যুদের কারণে। দস্যুদের ঘরে ফিরিয়ে ওই অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে কাজ করছেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সাইদ রহমান
এমন কাজে নিজেকে কেন জড়ালেন?
সাংবাদিক হিসেবে খবর জোগাড়ের বাইরেও মানুষের জন্য সবসময়ই আমি কিছু একটা করতে চাইতাম। ২০০৯ সাল, আমি তখন দেশ টিভির সাংবাদিক। মে মাসে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় আইলা ধ্বংস করে দিলো দক্ষিণ উপকূল। অন্য সাংবাদিকদের মতো আমিও গেলাম বাগেরহাটের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর একটি গাবুরায়। সাংবাদিকদের অবাক করে দিয়ে সেখানকার মানুষ জানালো, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি তারা কাটিয়ে উঠতে পারবেন কিন্তু তার চেয়েও মারাত্মক ঝড় তাদের জীবনকে লণ্ডভণ্ড করছে প্রতিদিন-তার নাম জলদস্যু। জোয়ারে মানুষের বাড়ি ডুবে গেছে, চারদিকে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন। কিন্তু সেটাকেও তারা বড় সমস্যা বলে ভাবছে না। তারা আমাকে বলল, আমরা আর পারছি না ভাই, যেভাবেই হোক জলদস্যু ঠেকানোর জন্য কিছু একটা করুন। সঙ্গে সঙ্গেই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এ নিয়ে কাজ করব।
এ কাজে ঝুঁকির বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
কাজটি অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমি ঝুঁকি মাপতে পারি। এ নিয়ে কাজ করতে করতে, এসব জায়গা সম্পর্কে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। যে কারণে এখন পর্যন্ত আমি বড় কোনো বিপদে পড়িনি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সরকার কিংবা জলদস্যু-কোনো পক্ষ থেকেই আমার এ পুরো কাজে কোনো লেনদেনের কারবার নেই। উভয়ের কাছে এ জন্য আমার অবস্থানটা অনেক ওপরে। এ পষ্ট অবস্থানের শক্তিটাই আসলে আমার বড় শক্তি। আমি র্যাবের সোর্স না, জলদস্যুদের ধরিয়ে দেব। আমি শুধু তাদের স্বাভাবিক জীবনে আসার সূত্রটা বলে দিই।
কাজটা নিশ্চয়ই সাংবাদিকতার চাইতেও বাড়তি কিছু...
আমি মনে করি, এটার সঙ্গে সংবাদিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার বাসার পাশে যদি একজন ভদ্র মহিলা এক্সিডেন্ট করেন, তাহলে আপনার কাজ হবে দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা। এখানে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা কিন্তু সাংবাদিকতা নয়, একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব। জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আমি যা করছি, সেটা এমনই একটি কাজ। আমি হয়তো ২০-২৫ জন লোককে শান্তির পথে ফিরিয়ে আনলাম তাতে নিরাপদ হয়ে গেল হাজার হাজার মানুষের জীবন।
ফিরে আসার পর জলদস্যুরা যদি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে তাহলে...?
এখানে কিন্তু কোনোপক্ষ থেকেই শর্ত নেই। এমন নয় যে কোনো জলদস্যু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর আবার দস্যুতায় ফিরে গেলে সরকার সেই দায় আমার ওপর চাপাবে। তবে এখন পর্যন্ত এমন কিছু ঘটেনি। তারপরও যদি তারা তাদের কমিটমেন্ট ভঙ্গ করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে হিসেবে ব্যবস্থা নেবে। বা আমি যদি সেরকম কিছু জানি, আমি নিজেই তাকে ধরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। এ কাজে আমিও কোনো কমিটমেন্ট করছি না, সেও করছে না। আমি শুধু বলছি, তুমি আস, তোমাকে নিরাপদ জীবন দেওয়া হবে। নিরাপদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করে জেলে যাবে, তারপর জামিনে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে।
এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা কতটুকু?
এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত না। পরিকল্পিত কিছু হয়নি, এটাই বাস্তবতা। তবে র্যাবের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয় সালেন্ডারের পর মামলা পরিচালনার জন্য। কিংবা যদি জেলে থাকতে হয়, তাহলে পরিবার ভরণপোষণের জন্য। এ ছাড়া মোবাইল ফোনও দেওয়া হয়। দুই ঈদেও সহযোগিতা করা হয়। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রী এক লাখ টাকা করে দেন পুনর্বাসনের জন্য। ইতিপূর্বে এক্সিম ব্যাংকও সাহায্য করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটা পরিকল্পনা কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীও নাকি বলেছেন, জলদস্যুদের স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য সরকার কিছু একটা করবে।