ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চাকরির আবেদনের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২১

চাকরির আবেদনের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা

করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল চাকরির পরীক্ষা। করোনার সংক্রমণ কমায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচল হওয়ায় ফের খুলেছে চাকরি পরীক্ষার দুয়ার। কিন্তু বেকার চাকরি প্রত্যাশীদের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে আবেদন ফি। বেশ কয়েকটি চাকরি পরীক্ষার ফি ঘেঁটে দেখা যায় বেসরকারির তুলনায় সরকারি চাকরির পরীক্ষার ফিই বেশি। আর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) তো একধাপ এগিয়ে।

এনটিআরসিএ'র এই ফাঁদে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। এরপরও মিলছে না বহুল কাক্সিক্ষত নিয়োগ। গত আড়াই বছরে প্রতিষ্ঠানটি একজনও নিয়োগ দিতে না পারলেও এ সময়ে বেকারদের কাছ থেকে আদায় করেছে ২০০ কোটি টাকার বেশি। আর এনটিআরসিএ এর সচিব ওবায়দুর রহমান বলছেন, মূলত সমন্বিত মেধা তালিকায় পিছিয়ে থাকা প্রার্থীদের জন্য এ সমস্যা হয়েছে। তবে এটি তাদের জন্য সুযোগও বটে।

শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, দফায় দফায় আবেদন ফি আদায় করে এনটিআরসিএ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এতে দেশের নিম্নবিত্ত পরিবারের উচ্চশিক্ষিত তরুণরা ঋণগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। একইসঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন এনটিআরসিএ এর একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, শিক্ষক নিয়োগে এখনো আইন তৈরি না হওয়ায় এই জটিলতা নিরসন করা যাচ্ছে না।

এনটিআরসিএ এর নিয়ম অনুযায়ী, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের বিপরীতে এন্ট্রি পর্যায়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক ও জাতীয় সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পেতে হয়। এরপর নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি বা সার্কুলারের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হয়। চূড়ান্ত ধাপে মেধা তালিকার শীর্ষ সারি থেকে শূন্যপদে একজন শিক্ষককে সুপারিশ করা হয়। তবে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হওয়ায় ভোগান্তি চরম মাত্রায় ঠেকেছে বলে অভিযোগ করছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

জানা যায়, ২০১৫ সালে ক্ষমতা পাওয়ার পর পূর্বের সনদধারীরা চাকরি পাওয়ার সুযোগ চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। এরপর হাইকোর্টে তারা একটি রিট করে। হাইকোর্টের আদেশে ১৫তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়ে একটি জাতীয় সমন্বিত মেধা তালিকা করা হয়। এই তালিকা ধরে ২০১৮ সালে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৪০ হাজার পদে নিয়োগ দেয় এনটিআরসিএ। এই নিয়োগের পরও একাধিক মামলা হয়। এ সময় ১৩তম পরীক্ষার প্রার্থীরা আরেকটি রিট করে আলাদা নিয়োগ দাবি করে। ২০২০ সালের মার্চে দেয়া এক রায়ে আপিল বিভাগ ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২ হাজার ২০৭ জনকে নিয়োগ সুপারিশের নির্দেশনা দেন।

২০১৫ সালের আগে যারা এনটিআরসিএ এর সনদ পেয়েছেন তারা মেধা তালিকায় একদম পিছিয়ে। ফলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে তারা শত শত বিদ্যালয়ের শূন্য পদে আবেদন করেও চাকরির সুপারিশ পাননি। কিন্তু প্রত্যেকে প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি ব্যয় করেছেন। আবার এসব প্রার্থীর আবেদনের বয়স সীমাও নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে তারা সরকারি চাকরিতে অবসরকালীন সময় পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ এর সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, এনটিআরসিএ এর এই নিয়োগ ব্যবস্থা খুবই জটিল। যা সমাধানের জন্য নতুন আইন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এনটিআরসিএ।

একাধিক আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৫তম পরীক্ষার আগে যারা সনদ নিয়েছেন তারা শুধু পাস করার জন্য পরীক্ষায় বসেছিলেন কারণ সে সময় ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ দিত। এখন যারা পরীক্ষায় বসছে তারা ভালো করছে। ফলে এই পিছিয়ে থাকা প্রার্থীরা নতুনদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। তারা বার বার আবেদন করেও চাকরি পাচ্ছে না।

এনটিআরসিএ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগ সম্পন্ন করার পর দীর্ঘ এই আড়াই বছরে আর কোনো নিয়োগ দিতে পারেনি। ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন আবেদনকারী ছিলেন ৮ লাখ ৭৬ হাজার। ৩৫০ টাকা ফি বাবদ আদায় হয়েছে ৩১ কোটি টাকা। ১৬তম আবেদনকারী ছিলেন ১১ লাখ ৭৬ হাজার, আবেদন ফি বাবদ আদায় ৪১ কোটি টাকা। ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষায় আবেদনকারী ছিলেন ১১ লাখ ৬৫ হাজার, আদায় হয়েছে ৪১ কোটি এবং তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য আবেদন পড়েছে ৯০ লাখ। ১১০ টাকা ফি বাবদ প্রায় ৯০ কোটি টাকারও বেশি।
এভাবে গত আড়াই বছরে প্রতিষ্ঠানটি বেকারদের কাছ থেকে আদায় করেছে ২০৩ কোটি টাকা। অথচ এই টাকা জোগাড় করতে নিয়োগ প্রত্যাশীদের আত্মীয় স্বজনের কাছে হাত পাততে হয়। কেউ কেউ সুদের ওপর ঋণ নিয়ে আবেদন করেন। দেখা যায় চাকরি না হলেও ঋণের কিস্তি ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে। এনটিআরসিএ-এর সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, মূলত সমন্বিত মেধা তালিকায় পিছিয়ে থাকা প্রার্থীদের জন্য এ সমস্যা হয়েছে। তবে এটি তাদের জন্য সুযোগও বটে।

 
Electronic Paper