ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দুর্গোৎসবের ইতিহাস

রায়হান উল্লাহ
🕐 ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০১৮

দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হলো হিন্দু দেবী দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দু সমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়।

দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালসহ ভারতীয় উপমহাদেশ এবং বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে এবং বাংলাদেশে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এমনকি ভারতের আসাম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মণিপুর এবং উড়িষ্যা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে।

সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচ দিন যথাক্রমে ‘দুর্গাষষ্ঠী’, ‘মহাসপ্তমী’, ‘মহাষ্টমী’, ‘মহানবমী’ ও ‘বিজয়াদশমী’ নামে পরিচিত।

বারো মাসে তেরো পর্বণ কথাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য প্রচলিত থাকলেও শারদীয় বা দুর্গাপূজাই বেশি আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয়। দেবী দুর্গা হলেন শক্তির রূপ, তিনি পরব্রহ্ম। অন্য দেব-দেবী মানুষের মঙ্গলার্থে তার বিভিন্ন রূপের প্রকাশ মাত্র। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে, দেবী দুর্গা ‘দুর্গতিনাশিনী’ বা সব দুঃখ-দুর্দশার বিনাশকারিণী।

পুরাকালে দেবতারা মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শরীর থেকে আগুনের মতো তেজরশ্মি একত্র হয়ে বিশাল এক আলোক পুঞ্জে পরিণত হয়। ওই আলোক পুঞ্জ থেকে আবির্ভূত এক দেবী মূর্তি। এই দেবীই হলেন দুর্গা। আদ্যাশক্তি মহামায়া অসুর কুলকে একে একে বিনাশ করে স্বর্গ তথা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে শান্তি স্থাপন করেন।

দেবী দুর্গা ত্রিনয়না বলে তাকে ‘ত্রৈম্বক্যে’ বলা হয়। তার বাম চোখ হলো বাসনা (চন্দ্র), ডান চোখ কর্ম (সূর্য) ও কেন্দ্রীয় চোখ হলো জ্ঞান (অগ্নি)। দুর্গার দশ বাহুতে যে দশটি অস্ত্র রয়েছে, সেই অস্ত্রগুলোও বিভিন্ন প্রতীকের ইঙ্গিতবাহী। হিন্দু শাস্ত্র মতে, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।

দুর্গাপূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তা জানা যায় না। ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল। সিন্ধু সভ্যতায় (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা) দেবীমাতা, ত্রিমস্তক দেবতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। দুর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী সে হিসেবে অথবা দেবীমাতা হিসেবে পূজা হতে পারে। তবে কৃত্তিবাসের রামায়ণে আছে, শ্রী রামচন্দ্র কালিদহ সাগর (বগুড়ার) থেকে ১০১টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে সাগরকূলে বসে বসন্তকালে সীতা উদ্ধারের জন্য প্রথম শক্তি তথা দুর্গোৎসবের (বাসন্তী পূজা বা অকাল বোধন) আয়োজন করেছিলেন। মার্কেন্ডীয় পুরান মতে, চেদী রাজবংশের রাজা সুরাথা খ্রিস্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে উড়িষ্যা) নামে দুর্গাপূজা প্রচলন করেছিল।

ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, মধ্য যুগে বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ১১শ শতকে অভিনির্ণয়-এ, মৈথিলী কবি বিদ্যাপতির দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনীতে দুর্গাবন্দনা পাওয়া যায়। বঙ্গে ১৪শ শতকে দুর্গাপূজার প্রচলন ছিল কি না, ভালোভাবে জানা যায় না। ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। ১৬১০ সালে কলকাতার বারিশার রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। ১৭৯০ সালের দিকে এই পূজার আমেজে আকৃষ্ট হয়ে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার গুপ্তি পাড়াতে ১২ জন বন্ধু মিলে চাঁদা তুলে প্রথম সর্বজনীন আয়োজন করে বড় আকারে দুর্গা উৎসব।

আধুনিক দুর্গাপূজার প্রাথমিক ধাপ ১৮ম শতকে নানা বাদ্যযন্ত্র প্রয়োগে ব্যক্তিগত, বিশেষ করে জমিদার, বড় ব্যবসাযী, রাজদরবারের রাজ কর্মচারী পর্যায়ে প্রচলন ছিল। পাটনাতে ১৮০৯ সালের দুর্গাপূজার ওয়াটার কালার ছবির ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে।

উড়িষ্যার রামেশ্বরপুরে একই স্থানে ৪০০ শত বছর ধরে সম্রাট আকবরের আমল থেকে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। ১৯১০ সালে সনাতন ধর্ম উৎসাহিনী সভা ভবানীপুরে বলরাম বসু ঘাট লেনে এবং একই জেলায় অন্যরা রামধন মিত্র লেন, সিকদার বাগানে একই বছরে ঘটা করে প্রথম বারোয়ারী পূজার আয়োজন করে।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে দুর্গা স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে জাগ্রত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই পূজা ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারী বা কমিউনিটি পূজা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর স্বাধীনতার পর এই পূজা পৃথিবীর অন্যতম প্রধান উৎসবের মর্যাদা পায়।

ঢাকার দুর্গাপূজার সবচেয়ে পুরনো তথ্য পাওয়া যায় অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্তের আত্মজীবনী থেকে। ১৮৩০ সালের সূত্রাপুরের একটি পূজার উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রায় দোতলা উঁচু ছিল দুর্গা প্রতিমাটি। সে সময়ে নন্দ লাল বাবুর মৈসুন্ডির বাড়িতে পূজাটি হয়েছিল। তবে এরপর আর কোনো বিস্তারিত বর্ণনা নেই সে পূজার। এ ছাড়াও ইতিহাস বলে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের পূজাও এক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সে সময়ে গোটা বাংলাতেই ব্রাহ্মণদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ করা যেত। তবে কিছুকাল পরেই অন্য শ্রেণির মানুষের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ব্রাহ্মণদের আধিপত্য। অনেকে পুরোহিত ছাড়াই শুরু করে দেন পূজা।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper