ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ইলিশ ঘিরে নানা উদ্যোগ

কমছে না দাম, ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ, জেলেদের জন্য ১১ হাজার মেট্রিক টন চাল, সস্তায় ভারতে রপ্তানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১

ইলিশ ঘিরে নানা উদ্যোগ

ইলিশ ঘিরে সরকারের নানা উদ্যোগ অব্যাহত। প্রতি বছরই এমন উদ্যোগ বাড়াচ্ছে ইলিশের উৎপাদন। তারপরও দেশের বাজারে কমছে না দাম। যদিও সস্তায় ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে বলে রয়েছে অভিযোগ। এদিকে এবার আবারও ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হওয়ায় আগামী ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় খাদ্য সহায়তার অংশ হিসেবে জেলেদের জন্য ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

গতকাল সোমবার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে এ সংক্রান্ত মঞ্জুরি আদেশ জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে চাল পরিবহন ব্যয়ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে মঞ্জুরি জ্ঞাপন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের মানবিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩৭ জেলার ১৫১টি উপজেলায় মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ২৭ হাজার ৬০২টি বেশি জেলে পরিবারকে এই বরাদ্দের আওতায় আনা হয়েছে। এর আওতায় প্রতিটি জেলে পরিবার ২০ কেজি করে চাল পাবে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই এ বছর ভিজিএফ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ভিজিএফ চাল ২৫ অক্টোবরের মধ্যে উত্তোলন ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিতরণ সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা নিবন্ধিত ও প্রকৃত জেলেদের মধ্যে এ ভিজিএফ বিতরণ নিশ্চিত করতে বরাদ্দপত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’ এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী এ বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারা দেশে মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত সপ্তাহ থেকে ইলিশ রপ্তানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। এরপর থেকেই দেশে ইলিশের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বিক্রেতারা বলছেন, রপ্তানির জন্য স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ইলিশের দাম বেড়েছে। ভারতের কাছে প্রতি কেজি ইলিশ ১০ ডলার বা প্রায় ৮৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ দাম বাংলাদেশের পাইকারি বাজারের তুলনায়ও অনেক কম।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের মহিপুর মৎস্যবন্দরব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, সেখানে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১২০০ টাকায় এবং এক কেজির কম ওজনের ইলিশ ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশে ইলিশের একটি বড় উৎস এই মহিপুর মৎস্যবন্দর। বন্দরের মাছ বিক্রেতা ফজলু জানান, গত বুধবার থেকে রপ্তানি শুরু হওয়ার পর ইলিশের দাম মণ প্রতি (৪০ কেজি) ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়েছে।

বরিশাল পাইকারি মৎস্য বাজারের সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুলের কাছ থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বরিশালের বাজারে ৯০০ গ্রাম ওজনের একেকটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৯০০ টাকায়। আর ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের একেকটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকায়।

বেনাপোল মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক আশহাদুল ইসলাম জানান, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মোট ৪৮৮ টন ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে।

মৎস অধিদফতরের একটি সূত্রে জানা যায়, ভারতে রপ্তানি করা বেশির ভাগ ইলিশের ওজন এক কেজির বেশি। কম রপ্তানি মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ভেঞ্চার লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী নিজামউদ্দীন বলেন, তার প্রতিষ্ঠান প্রত্যন্ত এলাকার বাজার থেকে কম দামে ইলিশ কিনছে। ইউনিয়ন ভেঞ্চার লিমিটেড ভারতে ৪০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ‘ইলিশের দামের বিষয়ে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করছি।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ২ হাজার ৮০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। এই সিদ্ধান্তের কারণে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দামে প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হলেও, সরকার গত বৃহস্পতিবার আরও ৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ২ হাজার ৫২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়।

গত বছর দুর্গাপূজার সময় সরকার ভারতে ১ হাজার ৪৭৫ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। চলতি বছর মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ৩ অক্টোবরের মধ্যে এই রপ্তানি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কারণ, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

 
Electronic Paper