ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঋতুর পালাবদলে বাড়ছে জ্বর সর্দি কাশি

জ্বর এলে নিজেকে আলাদা করে চিকিৎসা শুরুর পরামর্শ, ডেঙ্গু ও করোনা থাকায় জ্বর নিয়ে অবহেলা নয়, নেই আতঙ্কেরও কিছু, সব পরীক্ষা স্বল্পমূল্যে নির্ধারণের পরামর্শ

আরিফুল ইসলাম
🕐 ২:৩৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১

ঋতুর পালাবদলে বাড়ছে জ্বর সর্দি কাশি

ঘরে ঘরে দেখা দিচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশি। কারো কারো হালকা গলাব্যথা। শিশু বৃদ্ধ মাঝ বয়সী কমবেশি সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। কারো হালকা জ্বর এসে কমে যাচ্ছে। কারো জ্বরের তীব্রতা বেশি। জ্বরের সঙ্গে কারো কারো সর্দি-কাশি। কাশি বেশ কয়েকদিন ভোগাচ্ছেও। পরীক্ষা করালে কারো ডেঙ্গু, কারো করোনা আবার কারো ডেঙ্গু বা করোনা কোনোটাই না। তবে এই সংখ্যাই অনেক বেশি। সাধারণ জ্বর।

বেশ কিছুদিন ধরে আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই গরম, এই ঠান্ডা। এই রোদ, এই বৃষ্টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জ্বর সর্দি কাশিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশে করোনা এবং ডেঙ্গুও রয়েছে। তাই কারও জ্বর বেশি হলে ডেঙ্গু-করোনা বা সিজনাল জ্বর ধরে নিয়ে বসে থাকা যাবে না। জ্বর ১০০ ডিগ্রি হলেই পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে ডেঙ্গু বা করোনা কিনা। যদি অল্পে জ্বর কমে যায়, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। পরীক্ষায় শুরুতে ডেঙ্গু করোনা ধরা পড়লেও ঝুঁকি অনেক কম।

পূর্ব জুরাইন এলাকার বাসিন্দা রোজিনা আক্তার বলেন, প্রথমে আমার মেয়ের জ্বর আসে। তার একদিন পর আমারও জ্বর আসে। আমার একদিন পরেই কমে যায়। কোনো ওষুধও খাওয়া লাগেনি। কিন্তু মেয়ের জ্বর কমে গেলেও সর্দি কাশি এখনো রয়ে গেছে। পরীক্ষা করাইনি। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে খাওয়াচ্ছি। ভাবছিলাম পরীক্ষা করাতে যাব, তার মধ্যে দেখলাম একটু কম পড়েছে। তাই যাইনি। তাছাড়া পরীক্ষা করাতে যাওয়া, টাকারও ব্যাপার আছে। গেলেই তো হবে না, ডাক্তার দেখাতে হবে। দুই তিনদিন দৌড়া দৌড়ি করতে হবে। অনেক টাকার ব্যাপার। তাই অপেক্ষা করছিলাম, দোকানের ওষুধ খেয়ে কমে কি না।

রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা উলফাতুন্নেসা বলেন, আমার একদিন হালকা জ্বর এসে কমে যায়। সর্দি আসেনি। হালকা গলাব্যথা মনে হচ্ছিল। তাও কমে গেছে। শুধু কাশি আমাকে ভুগিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বরে খুসখুসে কাশি হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। জ্বর, গলা খুসখুস করা মানেই করোনা নয় বা তীব্র জ্বর মানেই ডেঙ্গু নয়। মৌসুমি জ্বরের পরেও বেশ কয়েকদিন সর্দি কাশি দুর্বলতা থাকে। তারা বলছেন, তবে নিজে নিজে চিকিৎসা করা যাবে না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক যদি মনে করেন ওই রোগীর ডেঙ্গু বা করোনা পরীক্ষা প্রয়োজন আছে তাহলে তিনি সেই সেই পরামর্শই দেবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই ওষুধ সেবন বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ঋতুর পালাবদলে প্রতি বছরই জ্বর সর্দি কাশি বেড়ে যায়। এবারও ঋতুর পালাবদলে বেড়েছে। কিন্তু এবার যেটা তাহলো করোনা এবং ডেঙ্গু আছে। তাই অবহেলা করা যাবে না। আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। অবহেলা করা যাবে না, কারণ আপনি সাধারণ জ্বর মনে করে বসে রইলেন কিন্তু আপনার সাধারণ জ্বর না। তাহলে তো বিপদ হয়ে যাবে। তাই জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে হবে। তারপর চিকিৎসা।

তিনি আরও বলেন, আপনি চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হলেন। হয়তো দুটি পরীক্ষা করতে হতে পারে। চিকিৎসক দুটি পরীক্ষা দিতে পারেন। কিন্তু আপনি শুরুতে চিকিৎসকের কাছে গেলে ঝুঁকিটা আর থাকল না বা তুলনামূলক কম ঝুঁকি রইল। পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত অন্যদের আলাদা থাকতে হবে। বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর আসলে পানিতে কিছু ভিজিয়ে ঘন ঘন গা মোছাতে হবে। কারণ, জ্বরে বাষ্প হয়ে শরীরের পানি উড়ে যায়। তাই বেশি করে তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ থাকছে।

তিনি বলেন, ধরুন আপনার ডেঙ্গু হয়েছে। কিন্তু আপনি অবহেলায় পরীক্ষা করালেন না, বুঝতেও পারলেন না। এই অবহেলা মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কখন হঠাৎ করে প্লাটিলেট কমে যাবে তা বোঝা মুশকিল। রোগী বুঝতেই পারবেন না, প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। আর প্লাটিলেট একেবারে নেমে গেলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর প্লাটিলেট কাউন্ট করাতে হয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, জ্বর হলে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। ১০০ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে। তবে প্লাটিলেট কাউন্টের ফিস নির্ধারণসহ অন্য সব পরীক্ষা সরকারিভাবে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে নির্ধারণের পরামর্শ দেন তিনি।

 
Electronic Paper