ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লোকে লোকারণ্য গণটিকার কেন্দ্রে

ছয় দিনে ৩৫ লাখ টিকাদানের আশা, এসএমএস পেলেই কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ, গণটিকার নামে গণতামাশা হচ্ছে : বিএনপি, টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে, কাউকে টিকার বাইরে না থাকার আহ্বান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৯, ২০২১

লোকে লোকারণ্য গণটিকার কেন্দ্রে

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। লোকজনের আনাগোনা দেখে ছয় দিনে প্রথম ডোজ ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সব জায়গায় টিকা কর্মসূচি নিশ্চিত করতে দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে টিকা পাঠানোর কথা ভাবছে সরকার। এদিকে এসএমএস না পেলে টিকা কেন্দ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর বিএনপি বলছে, ‘গণটিকার নামে গণতামাশা হচ্ছে।’ অন্যদিকে টিকা বাণিজ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত হুইপের পোষ্য রবিউলের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডয়েরি (জিডি) হয়েছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন কেন্দ্রগুলোতে বরাদ্দ ভ্যাকসিনের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আসায় অনেককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় দিন সিটি করপোরেশন এলাকায় এ কর্মসূচি চলেছে, এছাড়া প্রথম দিন যেসব এলাকায় টিকা দেওয়া যায়নি সেসব এলাকার মানুষও গতকাল রোববার টিকা পেয়েছেন।

কোভিড মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে ১৪ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে টিকা পেয়েছেন পৌনে দুই কোটির বেশি মানুষ। ভারত থেকে টিকা না আসায় চীন থেকে টিকা কিনছে সরকার। পাশাপাশি টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে মডার্না ও সিনোফার্মের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের কেনা, উপহার পাওয়া এবং কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া টিকা মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ টিকা। নতুন করে টিকা আসতে থাকায় বড় পরিসরে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করে বিরাট জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতেই পরীক্ষামূলক ধাপ হিসেবে এবার ৬ দিনের টিকা কর্মসূচি গত শনিবার থেকে চলছে।

সরকারের টিকাদান টাস্কফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা। বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে, তাতে এ বছর ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে টাস্কফোর্সের অনুমান।

কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ‘যে টার্গেট ছিল, আমরা তার কাছাকাছি চলে এসেছি। ২৯ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন। আমাদের ধারণা এটা ৩৫ লাখের উপরে চলে যাবে।’

এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় গতকাল রোববার সকাল থেকেই টিকা কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। সকাল ৯টায় টিকাদান শুরু হলেও এর আগেই দীর্ঘ লাইন দেখা যায় ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে। প্রতি ওয়ার্ডে দিনে ৩৫০ জনকে দেওয়ার মতো টিকা বরাদ্দ থাকায় অনেক মানুষকে টিকা না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘গণটিকাদানে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আসলে গণজাগরণ মনে হচ্ছে। মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তো দেখাই যাচ্ছে। আমাদের একটা কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩৫০ জনকে টিকা দিচ্ছি। কিন্তু মানুষ আসছে তার চেয়ে অনেক বেশি।’

কেউ টিকার বাইরে থাকবে না মন্তব্য করে উত্তর সিটি করপোরেশনের কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন কমিটির এই সদস্য সচিব বলেন, ‘যারা টিকা পাচ্ছে না, আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি। তারাও টিকা পাবে। আজকে না পেলে কালকে পাবে। কালকে না পেলে পরশু পাবে। এভাবে ছয় দিন চলবে। তারপর আগামী সপ্তাহেও তো হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বলেন, ‘জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা দিতে আসছে। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমাদের টার্গেট, আমরা ছয় দিনের প্রতি দিন প্রতিটি ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ৩৫০ জনকে টিকা দিতে পারব। ৭৫টি ওয়ার্ডে আমরা টিকা দিতে পারব।’

গণটিকাদানের প্রথম দিনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৩ হাজারের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন কমিটির এ সদস্য সচিব। সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে শনিবার যেসব এলাকার মানুষ টিকা পাননি, তাদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে।

ডা. শামসুল হক বলেন, ‘প্রত্যেক এলাকা যেন টাচে আসে সে চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। অনেক বড় এলাকা আছে যেগুলো গতকাল কাভার হয়নি, আবার বরিশাল, খুলনা, কক্সবাজার এলাকায় প্রচ- বৃষ্টি হয়েছে; তাদের জন্য আমরা অপশন রেখেছি।’

হেলিকপ্টারে টিকা যাবে দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় : স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৮ ও ৯ আগস্ট টিকা দেওয়া হবে দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায়। আর ১০ থেকে ১২ অগাস্ট পর্যন্ত ৫৫ বছরের বেশি বয়সী রোহিঙ্গাদের মধ্যে টিকা কর্মসূচি চলবে। শামসুল হক বলেন, ‘হেলিকপ্টার দিয়ে আমরা আগামীকাল টিকা পাঠাবো। একেবারে প্রত্যন্তের প্রত্যন্ত এলাকা, থানচির ভিতরে। হেলিকপ্টারে টিকা নামবে, কর্মীরা কাজ করে চলে আসবে।’

‘গণটিকার নামে গণতামাশা হচ্ছে’ : সরকার পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ না করেই গণটিকার নামে গণতামাশা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রোববার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সরকারের গণটিকা কার্যাক্রমকে গণতামাশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, চরম অব্যবস্থাপনা এবং দলীয়করণের কারণে এই লোক দেখানো গণটিকা অভিযান গণসংক্রমণ অভিযানে পরিণত হয়েছে। শনিবার সারা দেশে এই গণটিকার নামে একটা গণতামাশা শুরু করেছে। সরকারের হাতে টিকা এসেছে ১ কোটি ৬০ লাখ। অথচ শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে হলে প্রয়োজন হবে ২৬ কোটি টিকা। এছাড়া প্রথম এক সপ্তাহে এক কোটি টিকাদানের কথা বলে এখন একদিনে ৩০ লাখ করে তিনদিন দেওয়ার কথা বলছে। সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রমাণিত হয়েছে টিকাদানের ক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

এসএমএস পেলেই কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ : মোবাইলে এসএমএস না পেলে করোনাভাইরাসের টিকাদান কেন্দ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। গতকাল কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়ালি স্বাস্থ্য বুলেটিনে বক্তব্যকালে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ক্ষুদে বার্তা না পেয়ে অনেকেই টিকাদান কেন্দ্রে ভিড় করছেন। অনেক কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

হুইপ পোষ্য রবিউলের বিরুদ্ধে জিডি : হুইপ সামশুল হকের সম্মতিতে টিকাবাণিজ্য ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা প্রদানের অভিযোগে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এমটি) রবিউলের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ পটিয়া থানায় জিডি করলেও শনিবার জিডি বিষয়টি প্রকাশ পায়। জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেন পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেন। যেহেতু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই কোল্ড স্টোরে সংরক্ষিত কোভিড-১৯ টিকার সংখ্যা এবং সরবরাহকৃত টিকার সংখ্যার গড়মিল পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ থানায় জিডি করেন। জিডি নম্বর-১৮৫।

 
Electronic Paper