ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর হানা

বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা, এক দিনে ১০৪ রোগী, শুধু জুলাইয়ে ১২০২ জন, তিনজনের মৃত্যু সন্দেহ

আরিফুল ইসলাম
🕐 ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২১

করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর হানা

করোনার মধ্যে দিন দিন বেড়ে চলছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা। করোনার মধ্যে এভাবে ডেঙ্গু বাড়লে সামনে বড় রকমের বিপদ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না আসলে বড় রকমের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সবশেষ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ জন হাসপাতালে ভর্তির তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ এমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্টোল রুম। এই ১০৪ জনই রাজধানী ঢাকায়। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৮৫ জনও ছিলেন ঢাকায়।

চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং জুলাই মাসের এই ২৪ দিনে ১ হাজার ২০২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুলাইয়ে গড়ে ৫০ জনের বেশি করে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুলাইয়ের প্রথম সাতদিনে গড়ে ২৭ জন করে হাসপাতালে ভর্তি হন। আড়াই সপ্তাহের ব্যবধানে তার বেড়ে গড়ে ৫০ জনের উপরে উঠে গেছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৫৭৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এক হাজার ১৪৯ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাসায় ফিরেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৪২২ চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে তিনজন ঢাকার বাইরে। ডেঙ্গু সন্দেহে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনায় রয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটে (আইইডিসিআর)। এখন পর্যন্ত একটিরও পর্যালোচনা সমাপ্ত হয়নি। শেষ হলে জানা যাবে এই তিনজনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত কারণে কিনা?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনার মধ্যে ডেঙ্গু বাড়তে পারেÑএটা আমরা গত বছর থেকেই ধারণা করে আসছিলাম। বৃষ্টির এই মৌসুমে দেখছি ক্রমামত আক্রান্তের হার বাড়ছে। পরীক্ষা করালেই বেশির ভাগ পজিটিভ আসছে। আমাদের সামনে এখন বড় দুটি বিপদ। করোনার এই মহামারীর মধ্যে যদি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে বড় রকমের বিপর্যয় নেমে আসবে। আমরা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবরও পাচ্ছি। এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।

মাঠপর্যায়ে মশা মারা ওষুধ কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ল্যাবে কাজ করে। কিন্তু এডিস মশা নির্মূলের জন্য যে কিটনাশক ছিটানো হয় সেটি মাঠপর্যায়ে কার্যকর কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। কারণ অনেকেই বলে থাকেন, মাঠপর্যায়ে ছিটানোর পরও মশা মরে না। তাহলে কি মাঠপর্যায়ে কাজ করে না?

সিটি করপোরেশের উপর অনেকেরই ক্ষোভ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকেইর ধারণা তারা ঠিকমত কাজ করে না। সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে মানুষের যাতে এ অভিযোগ না থাকে, সেজন্য আমি বলব, তারা এডিস নির্মূল কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করুক। এডিস নিমূল করে মানুষের আস্থায় জায়গায় যাতে স্থান করে নিক।

করোনাকালীন ডেঙ্গু উপেক্ষা না করার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিভাগের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনাকালীন ডেঙ্গু উপেক্ষা করলে আমাদের জন্য আরও বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে।

জ্বর হলে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষারও তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেরকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত কীট সরবরাহ করার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেক মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমীন।

তিনি বলেন, দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে শিশু বৃদ্ধ সবাইকে শরীর ঢেকে রাখে, এমন পোশাক পরতে হবে। বাসা বাড়ির ফুলের টবে বা যে কোনো জায়গায় জমা পানি তিন দিনে একদিন ফেলে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে।

 
Electronic Paper