ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্থানীয় লকডাউনের পথে সরকার

তুষার আহসান
🕐 ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২১

স্থানীয় লকডাউনের পথে সরকার

দেশজুড়ে থাবা বসিয়েছে করোনার চার ভ্যারিয়েন্ট। বেশি মাত্রায় শনাক্ত হচ্ছে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে। সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে এ ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার আশঙ্কাজনক বলে আগে থেকেই জানিয়ে আসছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল সোমবার প্রথমবারের মতো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে বন্দরনগরী চট্টগ্রামও আক্রান্ত হলো। এদিকে করোনার মধ্যে ব্লাক ফাঙ্গাসের আক্রমণের যে শঙ্কা করা হচ্ছিল তাও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এমন এক রোগীর চিকিৎসাও চলছে। অন্যদিকে সোমবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদন বলছে, আরও তিন হাজার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে করোনা রুখতে স্থানীয় লকডাউনের পথে হাঁটছে সরকার। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনো ঝুঁকি না নিতে পুনরায় নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা সংক্রমণ বাড়লে সেই স্থান ব্লক (লকডাউন) করে দিতে বলেছেন তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দেওয়া তথ্য
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কথা তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনা আছে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উনি বলছেন যে, এখন থেকে বলে দাও সবাইকে। লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সবাইকে অথরিটি দিয়ে দেওয়া হলো। অলরেডি আমরা চিঠিতে বলে দিয়েছি। উনি আবার রিমাইন্ড করে দিতে বলেছেন। কোনো রকম রিস্ক না নিতে। যেখানে যারা কমফোর্টেবল মনে করবেন তারা সেখানে যেন ব্লক করে দিয়ে এটাকে থামানোর চেষ্টা করে।

কেন্দ্রীয় লকডাউন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা নেই। এটা আরও দুই দিন সময় আছে। এটা কি বৃদ্ধি করা হতে পারে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, দেখা যাক কী হয়।

লকডাউনে সরকারি সব অফিস খোলা আছে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা (লোকবল) ভাগ করে নিয়েছি। আমাদের অর্ধেকের বেশি আসে না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, করোনা নিয়ে মোটামুটি আলোচনা হয়ে গেছে। মিটিং ছাড়াও আলাপ হয়। অলরেডি আমরা লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা লোকাল গভমেন্ট যারা আছেন বা আর্মড ফোর্সেস বা ‘ল’ এজেন্সিজ সবাইকে বলে দিয়েছি তারা স্থানীয়ভাবে বসে, যদি দেখেন কোনো এলাকায় বেশি হচ্ছে (সংক্রমণ) সেই এলাকায় ইমফোর্স করা, ট্রিটমেন্ট বেশি দেওয়া বা লকডাউন; যেটা তারা কমফোর্টেবল ফিল করবে সেভাবে। কারণ পুরো দেশ তো এখন একভাবে স্প্রেড করছে না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নর্থবেঙ্গলের দিনাজপুরের একটু বেড়েছে, যশোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটু কমেছে। প্রধানমন্ত্রীসহ এটা সরকারেরই সিদ্ধান্ত, যদি উনারা মনে করেন কোনো এলাকা ব্লক করে দেবেন সেটা স্থানীয়ভাবে সবাই মিলে আলোচনা করে ব্লক করে দিতে পারবেন।

চট্টগ্রামে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট
প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ৪২ করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষায় দুজনের মধ্যে এ ধরন পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ এবং আইসিডিডিআরবি’র এক যৌথ গবেষণায় ভারতীয় ধরন পাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। এ গবেষণায় অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)।

গতকাল তথ্য নিশ্চিত করেছেন গবেষণা দলের সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা। তিনি বলেন, আমাদের গবেষণা চলমান। ৪২ করোনা রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করেছি। এতে চারটি ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। দুজনের মধ্যে এ ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, ৩৩ জনের মধ্যে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকান ধরন (বিটা ভ্যারিয়েন্ট) ধরন শনাক্ত হয়েছে। তিনজনের মধ্যে নাইজেরিয়ান ধরন (ইটা ভ্যারিয়েন্ট) এবং চারজনের যুক্তরাজ্যের ধরন (আলফা ভ্যারিয়েন্ট) শনাক্ত করা হয়েছে।

ঢামেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগী
ঢামেক হাসপাতালে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত এক রোগী ভর্তি আছে। তিনি একজন পুরুষ (৪৫)। গতকাল বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ জানান, এই রোগী ২৮ দিন আগে করোনায় আক্রান্ত ছিল। কোভিড পরবর্তী জটিলতা নিয়ে ঢামেকে আনুমানিক এক সপ্তাহ আগে ভর্তি হয়। তার মাথা ব্যথা, সাইনোসাইটিস এবং ডান চোখে দেখতে সমস্যা হচ্ছিল।

তিনি বলেন, আমি তাকে ফাঙ্গাস ইনফেকশন সন্দেহ করি এবং নাক কান গলা বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে সাইনাস অপারেশন করি। তারপর ওখানকার স্যাম্পল নিয়ে ফাঙ্গাস টেস্ট করতে দিই। রোগীর হিস্টোপ্যাথলজি, মাইক্রোস্কপি আর কালচার তিনটাতেই মিউকর মাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়। মানে তিনটি পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আছে। রোগী এখন অস্ত্রোপচারের পরে অক্সিজেন ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসে নিচ্ছে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, ফাঙ্গাস রোগের আক্রান্ত এক রোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি আছে। চিকিৎসকরা বোর্ড গঠন করে তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে। তার অস্ত্রোপচারের করা হয়েছে। এখন তিনি ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

 
Electronic Paper