ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সেই ঝুঁকি নিয়েই ঈদফিরতি যাত্রা

মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
🕐 ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ, মে ১৭, ২০২১

সেই ঝুঁকি নিয়েই ঈদফিরতি যাত্রা

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে আবারো গাদাগাদি করে ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ফিরতে শুরু করেছে দক্ষিণ জনপদের কর্মজীবী মানুষ। যদিও ঈদের ‘ফিরতিযাত্রা’ বিলম্বিত করার সুপারিশ করেছিল স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক। যদিও তা আমলে নিতে দেখা যায়নি গতকাল রোববার প্রকাশিত বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপনে। ঈদ করতে যেভাবে মানুষ রাজধানী ছেড়েছিল, অনেকটা সেভাবেই ফিরছেন তারা। এতে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। যদিও দৌলতদিয়া ঘাটে সে তুলনায় কম ছিল যাত্রীদের উপস্থিতি। এদিকে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের দেখা দেওয়ায় ঈদ ফিরতি যাত্রা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আমাদের মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, রোববার সকাল থেকেই বাংলাবাজার ঘাট হয়ে হাজার হাজার মানুষ মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে আসতে শুরু করে। লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় গন্তব্যে ফিরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া গুণে বিভিন্ন যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে ফিরছেন।

বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জরুরি পরিষেবার যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু জরুরি যানবাহনের সঙ্গে কর্মস্থলে ফেরা মানুষও ফেরিতে উঠে পড়ছে এবং গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছেন। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।’ শিমুলিয়ায় ঢাকার দিক থেকে আসা যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে বলে জানালেন শফিকুল।

বাগেরহাট থেকে আসা কমল মণ্ডল নামের এক যাত্রী বললেন, নিজের জেলা থেকে তিনি ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে মাইক্রোবাসে করে বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছেছেন। অন্যসময় এই ভাড়া থাকে ৩০০ টাকা। আর বরিশাল শহর থেকে আসা ফাতেমা রহমান বলেন, আমার বাংলাবাজার ঘাট পর্যন্ত আসতেই ৮০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। না এসে উপায়ও নেই, অফিস খুলে গেছে।

কাঁঠালবাড়িতে বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ম্যানেজার ভজন কুমার সাহা জানান, এই নৌরুটে এখন চলাচল করছে ১৫টি ফেরি। ভোর থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। ফেরিতে করেই তারা পার হচ্ছে। আমরা পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘাটের পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছেন।’

ঘাট সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে ঘরমুখো মানুষ ফেরিতে পার হচ্ছেন। সবগুলো ঘাট চালু থাকায় শিমুলিয়া থেকে একযোগে তিন/চারটি ফেরি যাত্রী ও হালকা যানবাহন নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটে আসছে। বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রী নামিয়ে দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে ঢাকামুখী যাত্রীদের নিয়ে ফেরিগুলো শিমুলিয়া চলে যাচ্ছে।

চাপ নেই দৌলতদিয়া ঘাটে : আমাদের রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, ঈদ পালন শেষে এখনো কর্মস্থলমুখী মানুষের চাপ দৌলতদিয়া ঘাটে তেমনভাবে শুরু হয়নি। ফলে রোববার বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে ছিল না যানবাহনের সিরিয়াল। স্বস্তিতে ফেরির নাগাল পাচ্ছে যাত্রী ও যানবাহন। দেখা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে রোববার প্রথম কর্মদিবস হলেও কর্মস্থলগামী মানুষের স্রোত শুরু হয়নি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। এই রুটে চলাচলকারী সব ফেরি চালু থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী কোনো যানবাহনকে সিরিয়ালে আটকে থাকতে হচ্ছে না। এমনকি কোনো পণ্যবাহী ট্রাকের সিরিয়ালও নেই।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট অফিসের ব্যবস্থাপক মো. ফিরোজ শেখ জানান, অতিরিক্ত যানবাহন ও যাত্রীর চাপ না থাকায় দৌলতদিয়া ঘাটে নদীপারের জন্য কোনো যানবাহনকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। রুটের সব ফেরি সচল থাকায় আগত যানবাহনগুলো সরাসরি ফেরিতে উঠার সুযোগ পাচ্ছে।

সর্বশেষ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল বিধিনিষেধের মেয়াদ। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তার ওপর করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের সন্ধান পাওয়ায় দেশে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও উদ্বিগ্ন।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ : ঈদযাত্রার সঙ্গে ভাইরাস যেন আরও ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য ছুটিতে সবাইকে কর্মস্থলের এলাকায় থাকতে বলেছিল সরকার। কিন্তু ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই লাখো মানুষ যে যেভাবে পারেন সেভাবে গ্রামের বাড়ি গেছেন। ঘরমুখো মানুষ ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে সে সময় বাড়িতে গেছে। ফেরিতেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না কোথাও।

ভিড়ের চাপে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিতে প্রাণহানিও ঘটেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে ভ্রমণ, বিভিন্ন বিপণিবিতানে মানুষের ভিড়ের কারণে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

ঝুঁকি নিয়ে সেই ঈদযাত্রা ঠেকানো না গেলেও এখন মানুষের ফিরতি যাত্রা বিলম্বিত করা যায় কীভাবে, সেই পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

তিনি বলেছিলেন, ‘এই লকডাউনের মধ্যে আবার যদি লোকজন এভাবেই ফেরে তাহলে এটা অবশ্যই বিপজ্জনক হবে। এ কারণে এই ফেরাটা যদি একটু বিলম্বিত করা যায় ভালো হয়। এ ছাড়া যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করা যায় সেটাও বিবেচনা করা যেতে পারে।’

 
Electronic Paper