ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রেলকে প্রধান গণপরিবহন করার মহাপরিকল্পনা

সাজেদ রোমেল
🕐 ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২১

রেলকে প্রধান গণপরিবহন করার মহাপরিকল্পনা

রেলপথকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের প্রধান গণপরিবহন করতে দেশের বিদ্যমান ৪৪ জেলা থেকে ৬৪ জেলাতেই রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্তের আওতায় নতুন ২০ জেলায় রেলপথ নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি যেখানে রেলপথ আছে, সেখানে ডাবল রেললাইন ও ব্রডগেজে উন্নীত করা হবে। সেই সঙ্গে ঢাকার নির্মাণাধীন মেট্রোরেল বা প্রস্তাবিত বৃত্তাকার রেলপথের আদলে চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোর ভেতরে রেলসেবা বাড়ানো যায় কি না, তার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৫০ বছরে গ্রাম ও শহরের সম্ভাব্য চাহিদার হিসাব করেই এ মহাপরিকল্পনা ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলে রেলওয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সব জেলায় যাবে রেল, হবে দূরযাত্রার মূল বাহন : বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে নেওয়া হয়েছিল ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) মহাপরিকল্পনা। সেই অনুযায়ী এগোচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে দেশের ৪৪টি জেলায় রেলপথ আছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নতুন করে আরও ২০টি জেলায় রেলসংযোগ হবে। এসব জেলার মধ্যে আছে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মেহেরপুর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বান্দরবান, কক্সবাজার, নড়াইল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও মানিকগঞ্জ। দ্বীপজেলা ভোলায়ও হবে রেলপথ।

তিন রুটে ব্রডগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ : ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-সিলেট রুটে পুরো পথজুড়েই ডাবল লাইন করা হবে, যাতে স্টেশনে থেমে যাত্রাবিরতি করে ক্রসিংয়ের জন্য সময় নষ্ট না হয়। আর পদ¥া সেতু হয়ে গেলে এটির ওপর দিয়ে যে রেলপথ যাবে যশোর পর্যন্ত সে পথের পুরোটাই ডাবল লাইন নির্মাণ এবং বড় পরিসরের ব্রডগেজ লাইন করার চিন্তা করছে সরকার। তবে এসব পথে আপতত মিটার গেজকে রেখে ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করে ডুয়েল গেজে উন্নীত করা হবে। কারণ বিদ্যামান মিটার গেজ ইঞ্জিন ও কোচ সব বাদ দিয়ে শুধু ব্রডগেজের ট্রেন আনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। এমন পুরো পরিকল্পনার পাসের আগে ঢাকা-জামালপুর ডাবল লাইন ও ব্রডগেজে উন্নীত যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের লাভ-ক্ষতি যাচাই করে নেওয়া হবে বলে রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ ও জামালপুরে সিঙ্গেল লাইন রেলপথ বিদ্যমান। ফলে আমরা এ রুটে অতিরিক্ত ট্রেন পরিচালনা করতে পারছি না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর রুটে দ্রুতগতির ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ করবো। এখন যদি ৬ জোড়া ট্রেন চলে, ডাবল লাইন হয়ে গেলে ১২ জোড়া ট্রেন পরিচালনা করতে পারবো।’

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজধানীর সঙ্গে আশপাশের জেলা সদরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে সময় কমানোর লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ। যেন যানজট ছাড়াই ঢাকার আশপাশের জেলা শহরে স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারেন যাত্রীরা। প্রকল্পের মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সেকশন ক্যাপাসিটি এবং অপারেশন ব্যবস্থাও উন্নত হবে।

পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্প:
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণে প্রকল্প নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দেবে চীন। বাকি ১৮ হাজার ২১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেতু:
বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে সেতুটি। এ সেতুর নির্মাণকাজ চলমান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতুটি নির্মাণ হলে রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী ট্রেনগুলোকে ক্রসিংজনিত কারণে অপেক্ষা করতে হবে না। ট্রেনগুলোর যাত্রার সময় গড়ে ২০ মিনিট কমবে। ব্রডগেজ লাইনে ট্রেন ১২০ কিলোমিটার এবং মিটারগেজে ট্রেন ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। বর্তমানে যেখানে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে, সেতু নির্মাণ হলে সেখানে ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে।

আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন:
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইন করতে এক দশকে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। রেলপথটি ডুয়েলগেজে উন্নীত করতে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। তাতে ব্যয় হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। ২০৩৫ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-লাকসাম রুটের ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন ডুয়েলগেজের নির্মাণকাজ চলছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৫০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

প্রকল্পের পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজ ৭৪ ভাগ এগিয়েছে। লাকসাম-লালমাই অংশে পরীক্ষামূলক ট্রেন পরিচালনা শুরু হবে শিগগিরই।
চলমান প্রকল্পের সুফল পেয়েই নতুন প্রকল্পে হাত

জানা গেছে, নানা সম্ভাব্যতা যাচাই করে মেট্রোরেলের চালুর পর চট্টগ্রামসহ এমন প্রকল্পে হাত দেবে সরকার। এরই মধ্যে ঢাকা-সিলেট রেলপথ ডাবল লাইন করার কাজ আটকে আছে। ঢাকা-জামালপুর রেলপথ ডাবল লাইন করার সম্ভাব্য খরচ অনেক বেশি হওয়ায় এমনটা হয়েছে, বলছে একটি সূত্র।

 
Electronic Paper