ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তের ভিড়

তুষার আহসান
🕐 ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২১

টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তের ভিড়

নিত্যপণ্যের বাজার অনেক দিন থেকেই বেসামাল। চালের দাম বাড়তে বাড়তে তা এখন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। সবজির দামও হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এরই মধ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশে চলছে লকডাউন। ফলে বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও। মাসিক খরচ কমাতে তাই তারাও এখন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) লাইনে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে পাশের এলাকায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন লাইনে।

মাস্কের মধ্যেও যেন তারা লজ্জার আগুনে হচ্ছেন দগ্ধ। সাধারণত টিসিবির পণ্য কেনার লাইনে আগে হতদরিদ্র থেকে শুরু করে নিম্নআয়ের মানুষকেই দেখা যেত। এ বছর দ্বিতীয় দফার লকডাউন যেন সব পাল্টে দিয়েছে। পকেট সামলাতে টিসিবির পণ্য নিতে লাইনে ভিড় করছেন এখন মধ্যবিত্তরা। এদের অধিকাংশই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। অনেকে পাননি গত মাসের বেতন। ‘করোনার দোহাই দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সরকার দ্বিতীয় দফায় যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান-অফিস বাদে সব বন্ধ। ফলে আমাদের এখন চাকরি নিয়ে টানাটানি’, বলে জানালেন একটি বেসরকারি কোম্পানির সহকারী হিসাবরক্ষক।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রান্সপোর্ট ও লজিস্টিক সাপোর্ট অফিসার বলেন, ‘হঠাৎই বলা হলো ব্যাংক বন্ধ। ব্যাস হয়ে গেল। অফিস থেকে বলা হলো, বেতন দেওয়া হবে পরে। তারপর অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর কী করা। এখন পকেট সামলাতে টিসিবির লাইনে এসে দাঁড়াতে হয়েছে।’

এদিকে নিজের এলাকা ছেড়ে পাশের এলাকা আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের সামনে টিসিবি পণ্যের ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এক গৃহিণী। তিনি বলেন, ‘মাস্ক বাধ্যতামূলক বলেই দাঁড়াতে পারছি, যদিও নিজ এলাকা ছেড়ে পাশের এলাকায় এসে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি। স্বামীর চাকরি থাকবে কি থাকবে না ঠিক নেই। তাই জমানো টাকা খরচ করতে চাচ্ছি না।’

শুক্রাবাদ, মিরপুরেও একই অবস্থা দেখা যায়। ওই দুই এলাকার ক্রেতারা বলছেন, ভোগ্যপণ্যের বাজারে দাম চড়া হওয়ায় তারা টিসিবি থেকে পণ্য কিনছেন। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ এবং লকডাউনে কাজকর্ম নেই, আয় নেই। ফলে টিসিবি ছাড়া উপায়ও নেই।

জানা গেছে, রমজান মাস উপলক্ষে ছয় ধরনের পণ্য মিলছে টিসিবির ট্রাকসেলে। এগুলো হচ্ছেÑ চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন, পেঁয়াজ এবং খেজুর। সারাদেশে মোট ৫০০টি ট্রাকের মাধ্যমে এই পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, যার মধ্যে রাজধানীতেই ১০০টি ট্রাক ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছে। রমজান মাসজুড়ে শুক্রবার বাদে প্রতিদিনই চলবে এ কার্যক্রম। ট্রাকসেল থেকে একজন ক্রেতা দিনে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৫০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ২০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি পেঁয়াজ, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি ছোলা এবং ৮০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ১ কেজি খেজুর কিনতে পারছেন।

এদিকে যারা বাসায় গিয়ে টিউশনি করে হাজার হাজার টাকা রোজগার করতেন, এখন তাদের পকেট পুরোই ফাঁকা বলে জানালেন অনেকে। মিরপুরের টিসিবি পণ্যের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এক বছর ধরে শিক্ষাখাত পুরোই বন্ধ। মাঝে একজন কোচিং খুলেছিলেন। সেটাও এখন নেই। অথচ ৬ মাসের ভাড়া প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বাকি। বাড়িতে গিয়ে টিউশনি করতেন, এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাইরে বের হতে পারছেন না তাদের কেউ।’

একজন টিউটর বলেন, ‘আমার বাইক আছে। কিন্তু বাইরে বের হলেই বিপত্তি। অন্যদিকে অভিভাবকদেরও মনে ভয় ঢুকে গেছে। ফলে টিউশনিতে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন।’ এমন অবস্থায় আগামী দিনগুলো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কীভাবে চলবেÑ এটাই তাদের কাছে এখন বড় প্রশ্ন।

 
Electronic Paper