গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাট পেতে হয়রান মালিকরা
তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২১
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মোহাম্মদপুর এফ ব্লকে ১৫টি ভবনের নির্মাণকাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বরাদ্দপ্রাপ্ত মালিকরা। জানা গেছে, ১০০০ বর্গফুটের সর্বসাকুল্যে ১৩৯০ বর্গফুট ফ্ল্যাট সংখ্যা ৫৪০টি আর ৮০০ বর্গফুটের সর্বসাকুল্যে ১১৯০ ফ্ল্যাট সংখ্যা ৩৬০টি। সব মিলিয়ে ৯০০টি ফ্ল্যাট প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ১৫তলা দুটি বিল্ডিং বিশেষ করে ১ও ২নং ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দুটি ভবনে ১২০টি পরিবার বসবাস করার কথা; সেখানে মাত্র বুঝে নিয়েছেন ৮০ জনের মতো। বাকি প্রায় ৪০ জন ফ্ল্যাট বুঝে পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সরকার কর্তৃক বৃদ্ধি করা টাকা কমানোর দাবিতে আদালতে মামলা চলমান তাদের হয়রানি আরও বাড়ছে।
এদিকে ৩ ভবনের ২০ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই প্রায় ১৯টি পরিবারকে বাস্তব দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০ শতাংশ কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টালবাহানা করছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকা ডিভিশন-২ মোহাম্মদপুর অঞ্চলের কর্মকর্তারা অসমাপ্ত কাজ হচ্ছে কিনা তার কোনো খবরও দিচ্ছেন না। আর ৪-নং ভবনে কাজ শেষ করা হলে বরাদ্দপ্রাপ্ত মালিকরা মাত্র ৩ শতাংশ বাস্তব দখল বুঝে নিয়ে বসবাস করছেন। ১৫-নং ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। তবে মামলা থাকায় সব ফ্ল্যাট মালিক বাস্তবদখলে যেতে পারেনি। কারণ ২০১০ সালে ১০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের জন্য ৩৫০০০ লাখ টাকা এবং ৮০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের জন্য ২৮ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় গৃহায়নের সঙ্গে যোগসাজশে ৩৫ লাখ টাকার স্থলে ৬১ লাখ ১৬০০০ টাকা করা হয়েছে। আর ২৮ লাখের স্থলে ৫২ লাখ টাকা করা হয়েছে।
একটি ফ্ল্যাটে ২৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা বৃদ্ধি করায় বরাদ্দপ্রাপ্তরা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে দাম কমানোর দাবি তোলেন। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা মাফিক দাম বাড়ানোয় কিছু বরাদ্দপ্রাপ্ত মালিক আদালতে মামলা দায়ের করেন। প্রায় ছয় বছর মামলা চলমান থাকায় বরাদ্দপ্রাপ্তরা তাদেও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুত এই মামলা নিষ্পত্তি করার দাবি জানান বরাদ্দপ্রাপ্তরা।
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত তথ্য
প্রকল্পে মোট ভবন সংখ্যা = ১৫টি। (ভবন নম্বর: ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫)। প্রকল্পে মোট ফ্ল্যাট সংখ্যা ৯০০টি। টাইপ-১ (৯টি ভবন): ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯)। টিপিক্যাল ফ্লোর (১ম হতে ১৫-তম ফ্লোর) = ১০০০ বর্গফুট (নীট আয়তন)। টিপিক্যাল ফ্লোর (১ম হতে ১৫-তম ফ্লোর) = ১৩৯০ বর্গফুট (গ্রস আয়তন)। প্রতিটি ভবনে ফ্ল্যাট সংখ্যা ৬০টি। টাইপ-১ মোট ফ্ল্যাট সংখ্যা ৫৪০টি। টাইপ-২ (৬টি ভবন) : ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫)। টিপিক্যাল ফ্লোর (১ম হতে ১৫-তম ফ্লোর) ৮০০ বর্গফুট (নীট আয়তন)। টিপিক্যাল ফ্লোর (১ম হতে ১৫-তম ফ্লোর) ১১৯০ বর্গফুট (গ্রস আয়তন)। প্রতিটি ভবনে ফ্ল্যাট সংখ্যা ৬০টি, টাইপ-২ মোট ফ্ল্যাট সংখ্যা ৩৬০টি।
এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হায়দার গতকাল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘মানুষের কল্যাণকর কাজ করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’ তবে আদালতের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।’
দেলোয়ার হায়দার আরও বলেন, জাতীয় গৃহায়নের দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকার এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী প্ল্যানিং বিজয় কুমর গতকাল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘১৯৯৭ সালে প্লটের জন্য আবেদনপত্র চেয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল। ২০১০ সালে প্লটের পরিবর্তে ৯০০ জনকে লটারি করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়। আপাতত পাঁচটি ভবনের ৩০০ ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বাকি ৬০০ জনকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ভবনে ৬০টি ফ্ল্যাট থাকলেও গাড়ির গ্যারেজ রয়েছে মাত্র ১২টি। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা রয়েছে। আয়তনে ১০০০ ও ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম হচ্ছে প্রতি বর্গফুট সাড়ে তিন হাজার টাকা। বড়টি ৩৫ লাখ এবং ছোট আয়তনের ফ্ল্যাট ২৮ লাখ টাকা। জানা গেছে, এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের জন্য অনেক গ্রাহকই এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন।
আদাবর থানার বিপরীতে সাত একর জায়গা নিয়ে এফ ব্লক প্রকল্প এলাকা। ১৫টি ১৬ তলা ভবন নির্মাণ করার কথা।
নির্মাণস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শুধু এক থেকে পাঁচ নম্বর ভবনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে এক থেকে তিন নম্বর ভবনের ১৮০টি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে ঠিকাদারদের লোকজন জানান। এরপর চার ও পাঁচ নম্বর ভবনের কাজ শেষ করা হবে। ৬ ও ১২ নম্বর ভবনের শুধু ফাউন্ডেশনের কাজ হয়েছে। ঠিকাদার পরিবর্তনের পর বাকি কাজ শেষ পর্যায়ে। এক কথায় সবগুলো ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভবনের কাজ টুকিটাকি শেষ হতে আরও এক বছর সময় লাগবে। এ কারণে ৩ নম্বর ভবনের ১৫-বি ফ্ল্যাট মালিক দুঃখে অবশেষে ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হলেন। তিনি সরকারের একজন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। তার সংসারে মাত্র দুটি মেয়ে সন্তান। একজনকে বিবাহ দিয়েছেন। আরেকজনকে বিবাহ দিয়ে এই ফ্ল্যাটে বাকি জীবন কাঠানোর ইচ্ছা ছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালির জন্য বিক্রি করে দিতে হলো। ফ্ল্যাট নির্মাণের অগ্রগতি দেখতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত আসেন। ঘটনাস্থলে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়। তারা দেড় যুগ অপেক্ষায় রয়েছেন। এখনো জানেন না কবে থেকে এখানে বসবাস করতে পারবেন। বিদ্যুৎও পানির সংযোগের বিষয়ে সমস্যা না থাকলেও গ্যাস-সংযোগ কীভাবে হবে- এ নিয়েও তারা শঙ্কিত।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না কার শর্তে বলেন, কিছু ভবনে মামলাজনিত সমস্যা রয়েছে। কিছু ভবনে ঠিকাদার পরিবর্তন হওয়ায় নির্মাণকাজে দেরি হচ্ছে। তবে যে ভবনেরই কাজ শেষ হবে। গ্যারেজ কম বিধায় লটারিতে সমাধান করা হবে।