ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সব অফিস আদালত বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০৯, ২০২১

সব অফিস আদালত বন্ধ

অগ্নিঝরা ৯ মার্চ আজ। স্বাধিকার আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী বন্ধ থাকে সচিবালয়সহ সারা দেশে সব সরকারি ও আধাসরকারি অফিস, হাইকোর্ট ও জেলা কোর্ট। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টের বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী টিক্কা খানকে শপথ বাক্য পাঠ করাতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে এ জন্য নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয় পাক সরকার। 

পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সর্বত্র তীব্র প্রতিরোধ, আক্রমণ আর সর্বক্ষেত্রে অসহযোগ আন্দোলনের ফলে পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আস্তে আস্তে বাংলার মানুষের মন থেকে মুছে যেতে শুরু করে। সব কিছুর ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাকিস্তান সরকারের সামরিক প্রশাসন বাঙালিদের দমন করার জন্য জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যার পথ বেছে নেয়। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করতে থাকে আন্দোলনরত ছাত্র-যুবক, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষকে। প্রতিশোধ আর প্রতিরোধ স্পৃহায় ফুঁসে ওঠে সারা দেশ। দেশের বহু স্থানেই শুরু হয়ে যায় সশস্ত্র সংগ্রাম। পথে পথে ব্যারিকেড আর মিছিলে গোটা দেশই অচল হয়ে পড়ে।

দেশের প্রতিটি কর্মকা- চলতে থাকে বাংলার গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদেশ-নির্দেশে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের প্রতিরোধ যুদ্ধ, বিক্ষোভ আর আন্দোলনের তীব্রতা লক্ষ্য করে ঢাকায় অবস্থানরত জাতিসংঘ মিশনসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অবস্থানকারী বিদেশিরাও পূর্ব পাকিস্তান ছাড়তে শুরু করে। মার্চের এই দিনই বাঙালির আরেক অবিসংবাদিত নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ন্যাপের বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। পল্টন ময়দানের এ সমাবেশে তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে ২৫ মার্চের মধ্যে সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতা দানের আলটিমেটাম দেন।

নতুবা তিনিও শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে এক হয়ে বাঙালির স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক সংগ্রাম শুরু করবেন বলে হুঁশিয়ার করেন। তিনি পাকিস্তানিদের উদ্দেশে লাকুম দীনুকুম ওয়াল ইয়া দীন উচ্চারণ করে বলেন, তোমরা পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনা কর, আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র রচনা করব। সাত কোটি বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার আন্দোলন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে পাকিস্তান সরকার দাবি মেনে না নিলে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে এক হয়ে তিনি স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করবেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকায় এলে শেখ মুজিবের সঙ্গে আপস করবেন, এ ধারণাকে অমূলক আখ্যায়িত করে মওলানা ভাসানী বলেন, এখন আর আপসের পথ খোলা নেই। সেদিন চলে গেছে। আমি সন্তোষের কাগমারী সম্মেলনে পাকিস্তানিদের ওয়ালাইকুম আসসালাম জানিয়েছিলাম। শেখ মুজিবসহ সমগ্র বাঙালি ১৩ বছর পর আমার সে কথা মূল্যায়ন করতে পেরেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

একাত্তরের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় গৃহীত স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। একই দিনে বন্ধ ঘোষণা করা হয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে আন্দোলনের নতুন ১৬টি নির্দেশ জারি করেন। ওদিকে ইসলামাবাদে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসবেন। সামরিক কর্তৃপক্ষ রাজশাহী শহরে প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে আট ঘণ্টার কারফিউ জারি করে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কারফিউ জারির প্রতিবাদ নিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণার পর রাজশাহীতে হঠাৎ সান্ধ্য আইন জারির কারণ বোধগম্য নয়। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হলে সরকার এখনো সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়নি।

 
Electronic Paper