ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর এই ভাষণ বাজাতে দেয়নি: তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:২৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৭, ২০২১

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর এই ভাষণ বাজাতে দেয়নি: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির মনের মণিকোঠায় চিরঅম্লান, ইতিহাসবিকৃতিকারীরাই মুছে গেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের আবেদন পঞ্চাশ বছর পরও মানুষের মনের মণিকোঠায় অম্লান, উদ্দীপনাময়। ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টায় কোনো লাভ হয়নি। বঙ্গবন্ধু তার স্বমহিমায় নতুন প্রজন্মের মনের গভীরে প্রোথিত। বরং ইতিহাস বিকৃতিকারীরাই মুছে গেছে।’

তথ্যমন্ত্রী আজ দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: বাঙালির মুক্তির সড়ক’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এ ভাষণ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর এই ভাষণ বাজেনি। রাষ্ট্রীয় সমস্ত অনুষ্ঠানে এই ভাষণ এমনকি বঙ্গবন্ধুর নামটিও নিষিদ্ধ ছিল। তরুণ বয়সের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘৭৫ সালের পর আমার ছাত্র জীবনে যখন ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, চট্টগ্রাম শহরে মাইকিংয়ের সময় আমরা ট্যাক্সিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজাতাম, মানুষ তা শোনার জন্য দাঁড়িয়ে যেতো।’

ড. হাছান বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে বহু কালজয়ী ভাষণ আছে। মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা, আব্রাহাম লিংকন, জন এফ কেনেডি, জর্জ ওয়াশিংটন, আলেকজান্ডার দি গ্রেট, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং তাদের মতো অনেকের কিছু ভাষণ বিশ্ব ইতিহাসে অন্যতম সেরা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এই সমস্ত ভাষণ থেকে অনন্য। কারণ এটি লিখিত ভাষণ ছিল না। অতীতে অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন, তিনি এই কথা লিখে দিয়েছিলেন বা বলতে বলেছিলেন, এভাবে কৃতিত্ব জাহিরের অপচেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোনোটা দেখে বলেননি।’

বঙ্গবন্ধু একনাগাড়ে ১৯ মিনিটে ১০১টি বাক্যে যে ভাষণ দিয়েছেন তার ভাষা ছিল সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষা, বই বা সভা সেমিনারের ভাষা নয় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের সাথে যোগাযোগের জন্য শরীরের যে অঙ্গভঙ্গি এবং যে ভাষা, যে বাক্য, যে শব্দ চয়নের প্রয়োজন, সেগুলো ছিল বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের অনন্য মাধ্যম। তিনি তার ভাষণে সবাইকে সবচেয়ে আপন ‘তুমি’ সম্বোধন করেছেন, অর্থাৎ জাতির সাথে তার সেই সম্পর্কটি তখন দাঁড়িয়ে গেছে।’

ড. হাছান তার বিশ্লেষণী বক্তৃতায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কার্যত সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছেন এবং শুধু স্বাধীনতা ঘোষণাই নয়, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি’ তাহলে কি করতে হবে, কিভাবে লড়াই করতে হবে- সেটিও বলে দিয়েছেন। কিন্তু এমনভাবে বলেছেন যে, স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য তাকে অভিযুক্তও করা যাচ্ছে না। এখানেই ৭ মার্চের ভাষণের মাধুর্য এবং সবচেয়ে বড় দিক।’

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক অর্থবহ ভাষণ আছে। কিন্তু হাজার বছরের ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তকারী ১০ লাখ মানুষের সামনে দেয়া ৭ মার্চ এই ভাষণ যেভাবে মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে, এমন আর কোনো ভাষণ আছে কি-না আমার জানা নেই, বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

ড. হাছান বলেন, ‘আজকে দেখতে পেলাম, যারা এই ভাষণকে নিষিদ্ধ করেছিল, ইতিহাসকে বিকৃত করেছিল, বঙ্গবন্ধুর নামটাও নিষিদ্ধ করেছিল, তারা ৭ মার্চ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সম্ভবত আজকে তারা পালন করছে। এটি কোন দূরভিসন্ধি নিয়ে পালন করছে কিনা আমি জানি না, তবে তাদেরকে বলবো, ইতিহাস বিকৃত করে কোনো লাভ হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে মানুষের মনের মণিকোঠা থেকে মুছে ফেলা যায়নি। বিকৃত ইতিহাসও ইতোমধ্যেই মুছে গেছে। শুধুমাত্র পুস্তক বা অন্য জায়গা থেকেই নয়, মানুষের মনের মণিকোঠা থেকেও বিকৃত ইতিহাস মুছে গেছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন ‘৭ মার্চের এই দিনে আসুন আমরা জিঘাংসা, হিংসা, ইতিহাসবিকৃতি, খল নায়ককে নায়ক বানানো চেষ্টা পরিহার করে সত্য ইতিহাস ধারণ ও লালন করে যার যার অবস্থান থেকে রাজনীতি করি। তাহলেই নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানবে। নইলে, ইতিহাস বিকৃতিকারীরা যে কাঠগড়ায় আজকে দাঁড়িয়ে আছেন, সেই ইতিহাসের কাঠগড়া থেকে তাদেরও মুক্তি মিলবে না’।

প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে ও আইয়ুব ভুঁইয়ার পরিচালনায় গণমাধ্যম গবেষক অজিত কুমার সরকারের মূল প্রবন্ধ ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: বাঙালির মুক্তির সড়ক’ এর ওপর আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, স্বপন সাহা, শাহেদ চৌধুরী এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।

 
Electronic Paper