ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিতে উত্তাল রাজপথ

৬৬ লেখকের বিবৃতি

প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০৫, ২০২১

ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিতে উত্তাল রাজপথ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে সপ্তাহজুড়েই উত্তপ্ত রয়েছে ঢাকার রাজপথ। গতকাল বৃহস্পতিবারও এ দাবিতে রাস্তায় দাঁড়ায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। আইনটি বাতিলের দাবিতে ৬৬ জন লেখক গণমাধ্যমে বিবৃতিও দিয়েছেন। তবে সরকারপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘কয়েকজন মিলে প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে বললেই আইন বাতিল করতে হবে তা কিন্তু নয়।’ ডিজিটাল পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫

ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবিতে
নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলায় কারাগারে থাকাকালীন লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল না বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। একই মামলায় গ্রেফতার কার্টুনিস্ট কবির কিশোর জামিন পাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

উত্তাল রাজপথ : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও কারাগারে লেখক মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয়তাবাদী যুবদল। সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকে ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় পুলিশের সাঁজোয়া যান, রায়ট কার, জলকামানের গাড়ি। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা ১২টার দিকে ওই কর্মসূচি শেষ হয়। এরপর নেতাকর্মীরা সেখান থেকে চলে যান। একই দিন প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ইসলামী যুব আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার ডিজিটাল আইনসহ নানা রকম আইন করে দেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের পরিবর্তে কর্তৃত্বমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও জনগণের কণ্ঠরোধ করার মতো আইন যে সরকার করে, তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। যে কোনো দেশে আইন তৈরি করা হয় জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানুষের বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যারা সুচিন্তিত মতামত লিখতে চায়, এর মাধ্যমে তাদের কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা চলছে।’

এর আগে গত সোমবার এই আইন বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে যায় ছাত্রদল। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে। গত বুধবার ‘নাগরিক সমাজ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে এ আইন বাতিলের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হয়। ওই কর্মসূচি থেকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয় আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা না হলে তারা ‘কঠোর আন্দোলন’ গড়ে তুলবেন।

সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা : ফখরুল : প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত যুবদলের সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই আইনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। এ আইনে গত ৫ বছরে গৃহবধূসহ প্রায় ৭০০ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লেখক মুশতাক আহমেদকেও এ আইনেই গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রেখে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম এই হত্যাকা- রাষ্ট্রীয়ভাবে হয়েছে। আমরা এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার সম্পূর্ণ একটা অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকার। তাদেরকে জোর করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে এবং টিকে থাকার জন্য এ ধরনের সম্পূর্ণ গণবিরোধী আইন তৈরি করেছে। সেই আইনের মাধ্যমে, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে তারা জনগণের কথা বলার অধিকার, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।’

এ সময় এই আইনে গ্রেফতার সবার অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

৬৬ লেখকের বিবৃতি : লেখক মুশতাকের মৃত্যুর বিচার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিলোপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের স্বনামধন্য ৬৬ লেখক। তারা বলেন, ‘লেখক ও উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদের মৃত্যু সারা দেশবাসীর মতো আমাদেরও মর্মাহত করেছে, বিক্ষুব্ধ করেছে।

ইন্টারেনেটের সামাজিক মাধ্যমে কেবল একটি কার্টুন শেয়ার করার জন্য ও কিছু স্ট্যাটাস লেখার জন্য তার বিরুদ্ধে কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এরপর টানা নয় মাস তিনি বিনাবিচারে কারাগারে বন্দি ছিলেন। ছয়বার তার জামিন নাকচ হয়েছে। অবশেষে ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারেই তার মৃত্যু হয়।’ বিবৃতিতে চারটি দাবি জানান লেখকরা, সেগুলো হলোÑ১. সরকারকে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তি দিতে হবে। ২. কার্টুনিস্ট কবির কিশোরের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, একইসঙ্গে এই আইনে এ যাবৎ গ্রেফতার সব বন্দিকে শুধু জামিনে নয়, স্থায়ীভাবে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং তাদের প্রত্যেকের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটা চরম গণবিরোধী ও নিপীড়নমূলক আইন। তাই এর কোনো সংস্কার নয়, আমরা এ আইনের দ্রুত বিলোপ দাবি করছি। ৪. মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদকারী কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

মুক্ত কার্টুনিস্ট কিশোর : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার ১০ মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে কিশোরকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেল সুপার আবদুল জলিল বলেন, তার জামিনের কাগজপত্র আমরা ১১টার দিকে পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে কিশোরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিশোরের মুক্তির সময় তার কয়েকজন আত্মীয়-বন্ধু কারাগারের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। কারাফটক থেকে বেরিয়ে আসার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একটি সাদা রঙের গাড়িতে করে কিশোর চলে যান। এ সময় কারাগারের বাইরে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কোনো কথা বলেননি।

মুশতাকের মৃত্যু স্বাভাবিক : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গাজীপুরের ডিসি ও কারা কর্তৃপক্ষের পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব তদন্ত কমিটির অভিমত এই যে মুশতাক আহমেদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাথরুমে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে গেলে পরে তাকে হাসপাতাল নেওয়া হয়। সুরতহাল রিপোর্টে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।

তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম। গাজীপুরের ডিসি, তিনিও একটি কমিটি করেছিলেন, আইজি প্রিজন তিনিও তাৎক্ষণিকভবে একটি কমিটি করেন। সবগুলো কমিটির অভিমত একরকম। তারা ভিডিও ফুটেজ ও কারাগারে যারা তার সঙ্গে অন্তরীণ ছিলেন, তার রুমে যে কয়জন ছিলেন, কর্তব্যরত চিকিৎসক যারা ছিলেন, হাসপাতালে যখন নিয়ে গেছেন- তাদের সবার অভিমত নিয়ে যে রিপোর্টটি দিয়েছেন, সেই রিপোর্টে বলেছেন, এটা একটা ন্যাচারাল ডেথ হয়েছে। এর বাইরে যদি কিছু থাকে সেটা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলে আপনাদের জানাব।

 
Electronic Paper