রক্তে ভাসল টঙ্গীর রাজপথ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০৫, ২০২১
অগ্নিঝরা মার্চের পঞ্চম দিন আজ। মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণার আগে ৪ মার্চ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে হরতালের সমর্থনে বের হওয়া মিছিলে গুলি চালায় পাকবাহিনী। এ ঘটনার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ৫ মার্চ সারা দেশে সর্বাত্মক হরতাল পালন করা হয়।
১৯৭১ সালের এদিনে পূর্ণ দিবস হরতাল পালনের সময় পুলিশ পুনরায় গুলি চালায়। টঙ্গী শিল্প এলাকায় পুলিশের গুলিতে ৪ শ্রমিক নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আরও প্রবল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে টঙ্গীর হাজার হাজার শ্রমিক। তারা টঙ্গী ব্রিজে আগুন ধরিয়ে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায়।
এভাবেই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। দেশের সর্বস্তরের মুক্তিকামী জনতা পাকিস্তান সরকারের এ ধরনের বর্বরতার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে। দিনব্যাপী হরতাল পালনে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল বের হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকসমূহ খোলা রাখা হয়। পাশাপাশি রেশন দোকানসমূহ এ সময়ে খোলা রাখা হয়।
আজকের দিনেই বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। চট্টগ্রামে দুদিনের সংঘর্ষে এবং সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা ২২২ বলে দাবি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা বিবৃতি দেন। বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। উত্তাল বিক্ষোভে এদিন রাজশাহী এবং রংপুরেও গুলির ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর সেনাবাহিনীর গুলির প্রতিবাদে ডাকসুর নেতৃত্বে বের হয় ঢাকায় বিশাল লাঠিমিছিল।
ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখনের নেতৃত্বে মিছিলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, ছাত্র-জনতা যোগ দেয়। পূর্ব বাংলার লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরাও শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদ এবং হত্যার নিন্দা জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন ড. আহমদ শরীফ।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাযহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, কবি শামসুর রাহমান, সাংবাদিক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শিল্পী মহিউদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তারা পূর্ব বাংলার স্বাধিকারের জন্য সবাইকে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশের মানুষ এর সমুচিত জবাব দেবে। একই ধরনের বিবৃতি দেন ন্যাপের মোজাফফর আহমেদ ও সৈয়দ আলতাফ হোসেন।