ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মানবঢাল রক্ষা করেছিল শেখ হাসিনাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের রাস্তায় একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। বিকাল ৩টায় শুরু হয় সমাবেশ।

ঘণ্টা খানেক পরে যোগ দেন দলটির প্রধান ও তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তিনিই ছিলেন প্রধান অতিথি। কিন্তু তার বক্তৃতা শেষ হতেই পরিস্থিতি একদম বদলে যাবে কে জানত?
ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের তৎকালীন সদস্য ও বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আমির হেসেন আমু। ওই হামলার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘নেত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনলাম। প্রথমে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, এদিক-ওদিক তাকালাম। তখন চারপাশে চিৎকার শুনতে পেলাম।’
‘দফায় দফায় বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। গ্রেনেড হামলা শুরু হতেই মঞ্চে বসা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনার চারপাশে ঘিরে মানবঢাল  তৈরি করেন-যাতে তার গায়ে কোনো আঘাত না লাগে।’  
‘যেসব নেতা শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানবঢাল তৈরি করেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। তার মাথায় গ্রেনেডের আঘাত লেগেছিল। ২০০৬ সালের শেষদিকে তিনি মারা যান।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার (ফিজিক্যাল প্রটেকশন) দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আপা বক্তৃতা শেষ করার ঠিক আগমুহূর্তে তার পেছন দিকে গা ঘেঁষে অবস্থান নিই। ‘জয়বাংলা’ বলে উনি বক্তৃতা শেষ করতেই একটা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তাৎক্ষণিক তাকে বসানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি বসতে চাচ্ছিলেন না। বরং ‘কী হলো, কোথায় আওয়াজ’-এরকম কিছু একটা বলে তিনি আশপাশ দেখার চেষ্টা করলেন। তবে পরক্ষণেই তার কাঁধে ধরে অনেকটা জোর করেই ট্রাকের পাটাতনের ওপর বক্তৃতা মঞ্চ হিসেবে রাখা টেবিলটির আড়ালে বসিয়ে দিই। প্রথম পর্যায়ে আমি ও মোহাম্মদ হানিফ এবং পরে আরও কয়েকজন নেতা আপাকে ঘিরে রাখি।
আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ট্রাকের ওপর আপাকে আমাদের শরীর দিয়ে ঘিরে রাখা অবস্থায় আরও চার-পাঁচটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ শুনি। অবস্থার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে উনাকে হামাগুড়ি দিয়ে নামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সিঁড়ির কাছে যেতেই একটি গ্রেনেড ট্রাকের ডালায় পড়ে তা গড়িয়ে নিচে বিস্ফোরিত হয়। ট্রাকের নিচে বিস্ফোরিত গ্রেনেডের আঘাতে তেলের ট্যাংক
ফেটে যাওয়ায় আগুন লাগতে পারে আশঙ্কা করে সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়ানো আমার সহকর্মী অপর নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) শোয়েব আপাকে দ্রুত নামানোর জন্য বলেন।
তখন দ্বিতীয় চেষ্টায় তাকে নিরাপদে গাড়িতে ওঠাতে সমর্থ হই।
আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গ্রেনেডের আঘাতে চাকা পাংচার হলেও গাড়িটি মার্সিডিজ বেঞ্জ হওয়ায় প্রায় ৮০ মাইল বেগে ভাসানী স্টেডিয়াম, জিপিও, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার, পলাশী, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত মোড়, বিডিআর তিন নম্বর গেট ও জিগাতলা হয়ে সুধা সদনে পৌঁছাই।
হামলার পর এক সাক্ষাৎকারে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীরা সবাই আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল যে অনেকেই আহত হয়েছে। তাদের রক্ত এখনো আমার কাপড়ে লেগে আছে। আমার নেতাকর্মীরা তাদের জীবন দিয়েই আমাকে বাঁচিয়েছে।’
ওই হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে।
শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, আহতদের সাহায্যে এগিয়ে না এসে পুলিশ উল্টো তাদের হেনস্তা করেছে।

 
Electronic Paper