ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জয়বাংলা ধ্বনিতে টিকাযজ্ঞ শুরু

ফাহিয়ান হামিম
🕐 ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২১

জয়বাংলা ধ্বনিতে টিকাযজ্ঞ শুরু

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নির্বাচিত নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। একই সঙ্গে টিকার মাধ্যমে করোনা মহামারী মোকাবিলার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার বিকালে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এই টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। টিকা নিয়ে রুনু ভেরোনিকা কস্তা বলেন ‘জয়বাংলা’। প্রধানমন্ত্রীও তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলান।

এরপর একে একে টিকা নেন এ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, মতিঝিল বিভাগের ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মো. দিদারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।

সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সেই সঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে, আল্লাহর কাছে এটুকু শুকরিয়া আদায় করি যে, আমরা সময়মতো এই ভ্যাকসিনটা ক্রয় করতে পেরেছি, আনতে পেরেছি এবং তা আজকে প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষকে আমরা সুরক্ষা দিতে সক্ষম হব।’

তিনি বলেন, এরপর সারা দেশে টিকা দেওয়া শুরু করা হবে, যাতে দেশের মানুষ তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্য সুরক্ষা পায়। উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের জন্য একটা, আমি বলব এটা একটা ঐতিহাসিক দিন হলো। কারণ বিশ্বের অনেক দেশও এখনও শুরু করতে পারেনি। সেখানে আমাদের মতো একটি দেশ, ঘনবসতিপূর্ণ দেশ সীমিত অর্থনৈতিক শক্তি নিয়েই আমরা কিন্তু মানুষের কল্যাণে যে আমরা কাজ করি সেটাই আজকে প্রমাণ হলো।’

প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেওয়া শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও কনফারেন্সও শেষ হয়।

পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, যাদের প্রথম টিকা দেওয়া হয়েছে, তারা ভালো আছেন। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। তারা সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরুর জন্য ৪২ হাজার কর্মী মাঠে কাজ করছেন।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, কোনো ধরনের ব্যথা পাননি বা খারাপও লাগছে না তার। সুযোগ পেলেই যেন সবাই ভ্যাকসিন নিয়ে নেয় সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল হাসপাতালে ওই পাঁচজনসহ মোট ২৬ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার পর সপ্তাহখানেক তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। এ ছাড়া টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে করোনার টিকাদান কত দিন চলবে, তা এখনো কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

এদিকে করোনা ভ্যাকসিনের জন্য নির্ধারিত সময় এলেই ভ্যাকসিন নেবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

গতকাল বিকেলে অর্থনৈতিক ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একা নিলেই তো হবে না। আমি এখনো সবার আগে টিকা নিতে চাই। যেদিন আমি নেব সেদিন আমি সবার আগে থাকব এটা আশ্বস্ত করতে পারি। এখন ডেটসহ (তারিখ) অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। সমাজের বিভিন্ন এলাকা ধরে আমরা এগুলো (টিকা) বিতরণ করব, সেভাবেই এগুচ্ছে। সেজন্য বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া এবং বিভিন্ন বয়স বিবেচনায় নিয়ে এগুলো করা হবে। আমার জন্য নির্ধারিত সময় কখন আসবে আমি এখনো জানি না, যেদিন আসবে আমি নিশ্চয়ই সেদিন ভ্যাকসিন নেবে।’

সম্প্রতি ওয়েবিনারে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক জারিপে দেখা যায় দেশের বেশির ভাগ মানুষ করোনার টিকা নিতে আগ্রহী। তবে বড় অংশ এখনই নয়, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষার পর টিকা নিতে চায়। এতে বলা হয়, ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এখনই পেলে টিকা নেবেন ৩২ শতাংশ, অপেক্ষার পর নিতে চান ৫২ শতাংশ, আর কখনোই টিকা নেবেন না ১৬ শতাংশ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকা প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করে।

এ ছাড়া দেশের মানুষকে টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারাও টিকাদানকেন্দ্রে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন। করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ নামক ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd)। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও করা যাবে নিবন্ধন।

 
Electronic Paper