কারাগারের কারসাজি!
প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২১
ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদের সঙ্গে কারাগারে যে নারী একান্ত সময় কাটিয়েছেন তার নাম আসমা শেখ সুইটি। তিনি তুষারের দ্বিতীয় স্ত্রী। ওই নারীর পাসপোর্টে উল্লেখিত তথ্য যাচাই বাছাই করে জানা গেছে অজ্ঞাত কারণে তিনি সেখানে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। আসমার পাসপোর্টে অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ১৪৮ সেন্ট্রাল বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা। তবে রোজ গার্ডেন নামে ওই ভবনটিতে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, আসমা বা তার পরিবারের কেউ ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন না। এমনকি পাসপোর্টে তার যে মোবাইল নম্বরটি উল্লেখ করা আছে, সেটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
ওই ফ্ল্যাটের মালিক ফেরদৌস আক্তার লিজা জানিয়েছেন, গত তিন মাস ধরে ফ্ল্যাটটি খালি রয়েছে। এর আগে এ ফ্ল্যাটে এক দম্পতি তাদের ১৮ মাসের সন্তান নিয়ে থাকতেন। তারা চলে যাওয়ার পর ফ্ল্যাটটি খালি হয়। এখানে আসমা নামের কেউ ছিল না।
তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দি তুষারের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে ২০১২ সালে তুষার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকায় তার প্রথম স্ত্রী নাজনীন সুলতানা সন্তানদের নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যান। এরপর কারাগারে থাকা অবস্থায়ই মুঠোফোনে আসমার সঙ্গে পরিচয় হয় তুষারের। গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। এক পর্যায়ে মুঠোফোনেই তুষার ও আসমার বিয়ে হয়। আগে প্রায়ই তুষারের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন আসমা। করোনা পরিস্থিতির কারণে সে সময় তাদের সাক্ষাৎ একেবারেই কমে এসেছিল।
কারাগারে তুষার ও আসমার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ পাওয়ার পর ঘটনার তদন্তে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটির সদস্যরা এরই মধ্যে তুষারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তুষার নিজেই তদন্ত কর্মকর্তাদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, কারাগারে তাদের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হতে একাধিক কারাবন্দি ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এর আগেও বহুবার কারাগারে আসমার সঙ্গে একান্ত সময় কাটিয়েছেন তুষার। মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তুষার এ কাজ চালিয়ে আসছিল বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, আসমা শেখ সুইটি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন। গুলশানের পুলিশ প্লাজা কনকর্ড শপিং সেন্টারে তার একটি ফ্যাশন হাউসও রয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ওই ঘটনায় তদন্ত চলছে, প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ৬ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগার-১-এর প্রবেশদ্বারের ভেতরে কারা কর্মকর্তাদের কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় কালো রঙের জামা পরে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকেন কয়েদি তুষার আহমেদ। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে দুই যুবকের সঙ্গে বাইরে থেকে কারাগারে প্রবেশ করেন বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ পরা এক নারী। ওই নারীকে অভ্যর্থনা জানান ডেপুটি জেলার সাকলাইন। পরে তাকে একটি কক্ষে নিয়ে যান। ১০ মিনিট পর সেখান থেকে সাকলাইন বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর বন্দি তুষার ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। ১০ মিনিট পর জেল থেকে বেরিয়ে যান জেল সুপার রত্না রায়। পরে তুষার ও ওই নারী রত্না রায়ের কক্ষের দিকে যান। যাওয়ার সময় তুষার জড়িয়ে ধরেন নারীকে। কিছুক্ষণ পর আবারও তারা আগের কক্ষে ফিরে যান। ওই কক্ষের ভেতরে তারা ৪৫ মিনিট সময় কাটান। ওই ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেল সুপার রত্না রায়, জেলার নুর মোহাম্মদ মৃধা, ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইনসহ ৫ জনকে প্রত্যাহার করে কারা অধিদফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।