ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

থামছে না স্বর্ণ চোরাচালান

কে এম জাহেদ
🕐 ১২:৪৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২১

থামছে না স্বর্ণ চোরাচালান

সিট, টয়লেট, লাগেজ এমনকি যাত্রীর জুতার সুকতলায়ও মিলছে স্বর্ণের বার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, মাস্কাটের ওমান, সৌদি আরবের জেদ্দা, কাতার থেকে আসছে স্বর্ণের চোরাচালান। কী পরিমাণ স্বর্ণ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তা হিসাবের বাইরে। এমন বাস্তবতা অবশ্যই উদ্বেগজনক।

দেশে স্বর্ণ চোরাচালানের বহু সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে, যাদের আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। স্বর্ণ চোরাচালান দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। এসব স্বর্ণ বৈধ পথে আমদানি কিংবা রপ্তানি হলে সরকারের রাজস্ব খাত আরও মজবুত হতো। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত বছর যেমন চোরাচালানের প্রচুর স্বর্ণ আটক হয়েছে, তেমনি এসব ঘটনায় থানায় হওয়া মামলাগুলোর প্রায় সব আসামিই জামিন পেয়েছেন। এ ছাড়া এসব মামলার তদন্তেও তেমন অগ্রগতি নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকার শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী এ তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই দেশে অবৈধভাবে স্বর্ণ প্রবেশ বলা যায় নিয়মিত ঘটনা। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিমানবন্দরে অবৈধভাবে আসা স্বর্ণ আটক হচ্ছে। গতকাল বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতার থেকে আসা নজরুল ইসলাম নামে এক যাত্রীর কাছ থেকে ৩০টি স্বর্ণের বার ও ৯৮ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়েছে। যার আনুমানিক
বাজারমূল্য ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবু হানিফ মোহাম্মদ আবদুল আহাদ। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে অভিযান চালিয়ে কাতার থেকে আসা ফ্লাইট নম্বর কিউআর-৬৩৮ এর যাত্রী নজরুলের শরীর তল্লাশি করে এ স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়। অভিযানের জব্দ করা ৩০টি স্বর্ণে বারের প্রতিটি ১১৬ গ্রাম ওজনের। যার মোট ওজন ৩ হাজার ৪৮০ গ্রাম। জব্দ বার ও স্বর্ণালঙ্কার পরবর্তীকালে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কাস্টম হাউস, ঢাকায় পাঠানো হয় এবং আটক যাত্রীকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বর্ণ আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে ভারত সরকার। ফলে দেশটিতে স্বর্ণ আমদানি ৯৫ শতাংশে কমে আসে। তা ছাড়া স্বর্ণ আমদানিতে শুল্কহার ৬ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এতে স্বর্ণ আমদানিতে আরও ধস নামে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বর্ণ ব্যবহারকারী দেশ ভারতে স্বর্ণ পাচার অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। তাই দুই বাংলার চোরাকারবারিদের কাছে স্বর্ণ পাচার এখন অধিকতর লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই থেকে অবৈধভাবে স্বর্ণ চোরাচালান হয়ে বাংলাদেশে আসছে। আবার বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারতে ঢুকছে। চক্রের মূল হোতারা সিঙ্গাপুর, দুবাই, পাকিস্তান ও ভারতে বসেই চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৩ কেজি স্বর্ণসহ (১০৪টি বার) দুবাই থেকে আসা যাত্রী মাসুদ রানা আটক হয়েছিলেন গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। মামলা হওয়ার এক মাস ২৮ দিনের মাথায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। ২০২০ সালে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭৩৭ কোটি ৯৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সম্প্রতি বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, জব্দকৃত অন্যান্য চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ৮৭ কেজি ৭৬৬ গ্রাম স্বর্ণ, ২১৬ কেজি ৭১৭ গ্রাম রুপা।

ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার জাকিয়া সুলতানা বলেন, গত বছর বিমানবন্দরে ১০৫টি চালানে আসা ৪১৫ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়। এসব ঘটনায় থানায় ২৯টি মামলা ও ৩৯টি বিভাগীয় মামলা হয়েছে। দুই কেজির ঊর্ধ্বে ৩১টি ঘটনায় ৩৫৮ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়। দুই কেজির নিচে স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় জরিমানা করে সেগুলো দাবিদারের কাছে দেওয়ার বিধান রয়েছে। এগুলো সেভাবে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনে হওয়া মামলার আসামিরা কীভাবে জামিনে মুক্তি পান, তা আমাদের বোধগম্য নয়। কাস্টমসের নিজস্ব প্রসিকিউশন বিভাগ না থাকায় এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পুলিশের মতো কাস্টমসকে যদি এসব মামলার তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো এ সমস্যাটা দূর হতো।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত ও তথ্য প্রসিকিউশনের অতিরিক্ত কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, স্বর্ণ চোরাচালান মামলার অধিকাংশ আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। তিনি জানান, পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

 
Electronic Paper