ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আবার জাগছে আশা

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ৮:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আবার জাগছে আশা

চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকের পর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আশা করছে বাংলাদেশ। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয়ে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে দুপুর ২টা থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মাসুদ বিন মোমেন। চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুও জাওহুইয়ের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উপমন্ত্রী হাউ দো সুয়ান। এ ইস্যুতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীন ৯০ মিনিট ধরে আলোচনা করে।

এর আগে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দৃশ্যত কোনো লাভ হয়নি। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কূটনীতিতে প্রকৃতপক্ষে কোনো অগ্রগতিই হয়নি।

বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এখন অনেক ফ্যাক্টরস আছে, এসব ফ্যাক্টরস মাথায় রেখে, ইতোপূর্বে যেহেতু দুইটা ডেট দিয়ে আমরা সফল হতে পারিনি, এখন সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে সফল হওয়া যায়, সেই চেষ্টাই থাকবে আমাদের। আমরা সিনসিয়ারলি এঙ্গেজড থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কশাসলি অপটিমিস্টিক, আমাদের ডিপ্লোমেটিক ভাষায় বলে- আমরা চেষ্টা করে যাব, উইথ অল আওয়ার হার্ট অ্যান্ড সউল। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি আছে, তা যদি অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়, সেখানে ১০ লাখের বেশি মানুষকে নিয়ে যেতে বছরের পর বছর লেগে যাবে। গত তিন বছরে ৯০ হাজার নতুন বাচ্চাও জন্মগ্রহণ করেছে। সুতরাং এই টোটাল নম্বরটা বাড়তে থাকবে, অনেক জটিলতা আসতে থাকবে। দ্রুত শুরু করাটার বিকল্প নাই।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ৬ সিদ্ধান্ত
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর রূপরেখা তৈরির জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ছয়টি সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সচিব পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে পরারাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। বৈঠকে নেওয়া ছয়টি সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি জানান, ১. আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ২. এরপরে এই তিন দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। ৩. এই বছর মার্চ মাস নাগাদ হবে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। ৪. এসব বৈঠকের পর আবারও মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসবে বাংলাদেশে, তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। ৫. এরপর বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী, গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা রয়েছে। তবে মিয়ানমার বলছে, যে ৪২ হাজার রোহিঙ্গা তারা চিহ্নিত করেছে, তাদের দিয়ে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগামী বৈঠকগুলোতে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ৬. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে- বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করা হবে।

বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিংটা হবে এবং সেটার ব্যাপ্তি কিছুটা বাড়বে। আগে আমাদের ডিজি লেভেলের সঙ্গে চীন ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত থাকতেন। এটাকে বড় করে মিয়ানমারের নে পি দোতে ডিজি আছেন এবং বেইজিংয়ে ফরেন মিনিস্ট্রিতে যে যে ডিজি আছেন, উনারাও সংযুক্ত হবেন। দুই দেশের ডিজিদের মধ্যে একটা হটলাইন চালু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এটা হবে। যাতে করে যে কোনো ধরনের ছোটখাটো চ্যালেঞ্জ থাকলে, তারা নিজেরা কথা বলে ঠিক করে নিতে পারবে।

ছয় দফায় মোট ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সরকার, যার মধ্যে ৪২ হাজারের ভেরিফিকেশন করেছে মিয়ানমার। এ বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভেরিফিকেশেনর যে ইস্যুটা আছে, সেটা যাতে আরও ত্বরান্বিত হয়, সেটা বলেছি। এটা সাইড বাই সাইড চলতে থাকে। গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, শেষের দিকে একটা ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিংয়ে পাইলট আকারে (প্রত্যাবাসন) করার কথা ছিল। আমরা সেটার ভিত্তিতে গ্রামভিত্তিক বা এলাকাভিত্তিক ব্যাচ বলি, সেটার আলোকে শুরু হবে। যদিও তাদের দিক থেকে কিছুটা ভিন্নতা হয়ত থাকতে পারে, প্রস্তাবের। তারা বলেছে যে নমনীয়তা দেখাবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থে নমনীয়তা দেখানো উচিত। রাখাইনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গঠনমূলক অংশগ্রহণে চীনের দিক থেকে বক্তব্য এলেও মিয়ানমার এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেনি বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ক’দিন আগেও বলেছিলেন, আলোচনা চালিয়ে গেলেও মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে না। প্রত্যাবাসন আটকে থাকার মধ্যে মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে নিয়ে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার কথা বলে আসছে দুই দেশের ‘ভালো বন্ধু’ চীন।

 
Electronic Paper