ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্মৃতিময় মাটির চুলার কদর কমছে দিনে দিনে

আরিফ শাওন
🕐 ৩:৩৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০২০

দুই ঘরের মাঝের সরু পথ। একেবারে পেছনে হাসেমদের ঘর। একটি থাকার ঘর, আরেকটি রান্নার। রান্নার ঘরটি বসত ঘরে প্রবেশে ডান পাশে। পাশেই ছোট্ট এক চিলতে উঠোন। রান্না ঘর থেকে বসত ঘরে যেতে আঙিনায় বানানো মাটির চুলা। চলছে রান্না। সূর্য তখন ডোবে ডোবে। দস্তার কড়াইয়ের নিচে আগুনের লেলিহান শিখা। জ¦লছে দাউ দাউ করে। হাসেমের মা মোসা খয়েরন বেগমের লক্ষ্য সূর্য ডোবার আগেই রান্না শেষ করা।

হাসেমদের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাতিয়া গ্রামে। তার বাবা নাম ময়েন উদ্দিন। রান্না ঘরের আঙিনায় এমন মাটির চুলা এখন আর সচরাচর দেখা যায় না। আগে শুকনোর সময় অর্থাৎ বর্ষার মৌসুম চলে গেলেই গ্রামের অনেকে রান্না ঘরের সঙ্গে বাইরে সুবিধাজনক স্থানে মাটিতে রান্নার জন্য চুলা বানাতেন। অনেকেই আবার মাটি দিয়ে আলগা চুলা বানাতেন। শীতের মধ্যেই বৃষ্টি নামলে যাতে চুলা না ভেজে, সেজন্যই আলগা চুলা। সহজেই ধরে ঘরে নিয়ে যাওয়া যায়। এখন আর এসব তেমন একটা নেই।

তখন অনেক গ্রামেই বিদ্যুৎ ছিল না। জীবন-যাত্রার মানও এত উন্নত ছিল না। গ্রামের মানুষের ছিল না এত আর্থিক সচ্ছলতাও। রাতে কেরোসিনের ল্যাম্প (প্রদীপ) বা হারিকেনের আলোই ছিল গ্রামের মানুষের ভরসা। প্রদীপে তেল পোড়া কমিয়ে খরচ বাঁচাতে গৃহিণীরা চেষ্টা করতেন অন্ধকার নামার আগে আগে রান্না শেষ করার।

বাইরের চুলায় রান্না প্রসঙ্গে হাসেম বলেন, আমাদের এলাকায় এমন সময় অনেকে বাইরে চুলা করে রান্না করেন। তবে অনেক বাড়িতেই বর্ষা ছাড়া সব সময়ই বাইরের চুলায় রান্না করে। হাসেমের মা মোসা খয়েরন বেগম জানান, তিনি বাইরে খোলা জায়গায় রান্নাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাছাড়া রাতে রান্না করাও ঝামেলা।

একই এলাকার অদুদ হোসেন জানান, রাতে রান্না করতে গেলে ঢাকনা তুলে ভাত তরকারি নাড়াচাড়া করার সময়ে পোকা পড়ার ভয়ও থাকে। তাছাড়া যাদের ঘরে ছোট ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের রেখে রাতে রান্না করাও সমস্যা। এসব নানা কারণে অনেকেই চেষ্টা করে দিনের আলো থাকতে থাকতে বাইরের চুলায় রান্না শেষ করার। পরে সন্ধ্যায় গৃহিণীদের অনেকেই সন্তানদের লেখাপড়া করাতে বসেন। আর যাদের ছোট ছেলেমেয়ে নেই তারা বিশ্রাম নেন বা পরিবার-প্রতিবেশীর সঙ্গে গল্প করেন। অন্য কাজও করেন।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার আঠারোগাতি গ্রামের রোকেয়া বেগম বলেন, আগে আমাদের এলাকায় অনেকেই রান্না ঘরের পাশে চুলা করতেন। রান্না করে ঘিরে নিতেন। ছাউনি দিতেন না। শুকনোর সময়ই বাইরের চুলায় রান্না করতেন। বর্তমানে অনেকেই সিলিন্ডার, গ্যাসের চুলায় রান্না করেন। বাইরের চুলার ব্যবহার কমে গেছে।

 
Electronic Paper