ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দখলদারমুক্ত হয় অনেক এলাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০২০

একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর আসতে থাকে। দখলদারমুক্ত হয় দেশের অনেক এলাকা। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর শেষ মরণপণ লড়াই চলে। বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশে পাকবাহিনীর প্রায় সব বিমান। দুপুরের মধ্যেই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশে আগে থেকে মজুদ করা পাকিস্তানের সব জঙ্গি বিমান ধ্বংস হয়। হত্যা ও ধ্বংসের বিভীষিকায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় মুক্তিপাগল বাঙালি। চারদিকে বিজয়ের রণধ্বনি।

ভারতীয় জঙ্গিবিমানগুলো সারা দিন আকাশে উড়ে পাক সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। ভারতের বিমানবাহিনীর হিসাবে, ১২ ঘণ্টায় ২৩২ তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটিতে ৫০ টনের মতো বোমা ফেলা হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর কনভয়ের ওপর ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো আক্রমণ চালায় একে একে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর ৯০টি গাড়ি ধ্বংস হয়।

এ ছাড়াও পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যবোঝাই কয়েকটি লঞ্চ এবং স্টিমার ধ্বংস হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে আসতে থাকেন। সম্মুখযুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও হারতে থাকে পাকিস্তান। যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে বাংলার মুক্তিসেনাদের সম্মুখযুদ্ধ দেখে বিস্মিত হয় বিশ^। সাবমেরিন ‘গাজী’ ছিল পাকিস্তানি নৌবহরের গর্বের ধন।

বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর যৌথকমান্ডের সফল আক্রমণে তা ধ্বংস হয়। সাবমেরিনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তান ধার হিসেবে পেয়েছিল। নৌবাহিনীর যৌথ কমান্ড চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সব নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে বন্দর ত্যাগের পরামর্শ দেয়। তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতেও অপারগতা প্রকাশ করে। বিশ্বের সব দেশ বুঝতে পারে বাংলাদেশের বন্দরগুলো রক্ষা করার ক্ষমতা আর পাকিস্তানি বাহিনীর নেই। লে. আরেফিনের নেতৃত্বে চালনা নৌবন্দরে বড় ধরনের আক্রমণ পরিচালিত হয়। এ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীসহ সব সৈন্য বন্দর ত্যাগ করে।

কোস্টাল গানসহ প্রচুর গোলাবারুদ হস্তগত হয় মুক্তিবাহিনীর। একাত্তরের এই দিনে মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট স্থলপথে এগিয়ে আসতে থাকে। প্রধান সড়ক দিয়ে না এগিয়েও মিত্রবাহিনী বিভিন্ন সেক্টরের প্রধান প্রধান সড়কের কতগুলো এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে। ফলে ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের, নাটোরের সঙ্গে ঢাকা ও রংপুরের এবং যশোরের সঙ্গে নাটোর ও রাজশাহীর যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভারতের ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশন আখাউড়ার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়।

ভারতীয় সেনাবাহিনী আখাউড়ার দক্ষিণ এবং পশ্চিমাংশ দিয়ে অবরোধ করে। এখানে পাকিস্তানি বাহিনী মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে অবশেষে আত্মসমর্পণ করে। আখাউড়া সম্পূর্ণরূপে শত্রুমুক্ত হয়।

এ যুদ্ধে সুবেদার আশরাফ আলী খান, সিপাহি আমীর হোসেন, লেফটেন্যান্ট বদিউজ্জামান, সিপাহি রুহুল আমীন, সিপাহি সাহাব উদ্দীন, সিপাহি মুস্তাফিজুর রহমান শহীদ হন। আখাউড়ামুক্ত হওয়ার পর কিছু পাকিস্তানি সৈন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে পালিয়ে যাওয়ার সময় মিত্রবাহিনীর হাতে নিহত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে। কিন্তু রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা বরবাদ হয়ে যায়।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধে বিভিন্ন দেশ নিজেদের কোন পক্ষে জড়াবে- তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয় বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারণী মহলে। চীনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সীমানা মেনে ভারতীয় বাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে অত্যন্ত কড়া ভাষায় জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনের পক্ষ থেকে ভারতকেই দায়ী করা হয় স্পষ্টভাবে।

অন্যদিকে রাশিয়াও জাতিসংঘে উত্থাপিত এক প্রস্তাবে জানায় যুদ্ধবিরতির আগে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে। পাকিস্তান রক্ষায় বঙ্গোপসাগরে কেউ কোনো নৌজাহাজ পাঠালে তারাও ভারতের আক্রমণের শিকার হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

 
Electronic Paper