ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্কুল ফিডিংয়ের মেয়াদ বাড়ছে ছয় মাস

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৪, ২০২০

করোনাকালীন পরবর্তী শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া ও অপুষ্টি রোধ করতে চালু করা ‘দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের’ মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যয় বাড়নো হবে না। জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯ অনুযায়ী প্রস্তাবিত ‘প্রাইমারি স্কুল ফিডিং প্রকল্প’-এর ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুমোদন না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ২০ নভেম্বর দারিদ্র্যপীড়িত স্কুল ফিডিং প্রকল্পের ৩৩তম প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় চলমান প্রকল্পের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত ‘প্রাইমারি স্কুল ফিডিং প্রকল্প’ এর ডিপিপি অনুমোদনের পর পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী বিস্কুট উৎপাদনাকরী ফ্যাক্টরি, বাস্তবায়ন সহযোগী বেসরকারি সংস্থা ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান নির্বাচন, স্কুল পর্যায়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর জন্য কমপক্ষে ছয়মাস সময় দরকার। এ সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বিস্কুট উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরি, বাস্তবায়ন সহযোগী বেসরকারি সংস্থা ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকিউরমেন্ট কার্যক্রমের জন্য চার মাস ও বিস্কুট উৎপাদন ও বিতরণের জন্য দুই মাস দরকার হবে। অর্থাৎ আগামী জুনের আগে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ সম্ভব হবে না। ফলে শিশু শিক্ষার্থীদের ক্ষুধা নিবারণসহ অপুষ্টির অভাব পূরণের চলমান প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। যা শিশুর স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সভায় চলমান প্রকল্পের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম বলেন, করোনার কারণে প্রস্তাবিত ‘প্রাইমারি স্কুল ফিডিং প্রকল্প’ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন আটকে গেছে। তাই আপাতত স্কুল ফিডিংয়ের কার্যক্রম আরও আরও মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, ১০৪টি উপজেলায় চলমান দারিদ্র্যপীড়িত স্কুল ফিডিং প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এই সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিস্কুট বিতরণ শেষে প্রকল্পের ৭০৫ কোট টাকা থেকে যাবে। অপর দিকে প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী বিশ^ খাদ্য কর্মসূচির কারিগরি সহায়তাসহ ১০টি উপজেলায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। সংস্থাটিও আরও ছয় মাস কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।

দারিদ্র্যপীড়িত স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি প্রথম দফায় ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প সংশোধন করে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১১৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৫৯৭ কোটি ৭০ লাখ ৫৭ হাজার ও প্রকল্প সাহায্য ৫৪৫ কোটি নয় লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের স্কুল বন্ধ রয়েছে। তার মধ্যেও শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিস্কুট বিতরণ করছেন শিক্ষকরা। চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৬হাজার ৩৪৮ টন বিস্কুট বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বিতরণ শেষ করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যে সব এলাকায় স্কুল মিল (দুপুরের খাবার) চালু রয়েছে সেক্ষেত্রে ১৫৯ দশমিক ৩৭ টন চাল শিশুদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ৩৩ লাখের মতো শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে। বিভিন্ন কারণে তারা স্কুলে যাচ্ছে না। খাবার বিতরণের ফলে শিশুরা স্কুলে যাবে এবং তাদের পুষ্টিগত সমস্যা নিরসন হবে বলে বলে নতুন প্রকল্পের ডিপিইতে বলা হয়েছে। ১৯ হাজার ২৮২ কোটি ৭২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ের এই কর্মসূচির মাধ্যমে এক কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে খাদ্য সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় সপ্তাহে তিন দিন শিক্ষার্থীদের দুপুরে খিচুড়ি-ডিম ও সবজি দেওয়া হবে। বাকি তিন দিন দেওয়া হবে পুষ্টিকর বিস্কুট। প্রকল্পটি ৫০৯টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে।

 
Electronic Paper