দেশে করোনা প্রথম পর্যায়েই রয়ে গেছে
আরিফ শাওন
🕐 ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০২, ২০২০
কোনো দেশে করোনার দ্বিতীয়, কোথাও তৃতীয় আবার কোনো দেশে চতুর্থ-পঞ্চম শেষে চলছে ষষ্ঠ-সপ্তম ঢেউ। ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া করোনার ঢেউ কোন পর্যায়ে চলছে? বেশ কিছুদিন আগে দেশে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। সে আশঙ্কা থেকেই নেওয়া শুরু হয় করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি। এরই মধ্যে শীতের শুরুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় অনেকেই মনে করছেন যে, দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- দেশে এখনো দ্বিতীয় ঢেউ আসেনি। প্রথম ঢেউই কমে গিয়ে ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত একমাসের সংক্রমণের প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংক্রমণ কমছে আবার বাড়ছেও। শনাক্তের হার ১০ থেকে ১২, ১৩, সর্বোচ্চ ১৬.৪৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, ‘দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বলা যাবে না। আমাদের প্রথম ঢেউই শেষ হয়নি। শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামেনি। এপিডেমোলজিক্যালি আমরা বলতে পারি না যে- আমাদের দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছে। বলা যায় প্রথম ঢেউ শেষ না হয়ে এটা রাইজ করছে।’
ঢেউয়ের বিষয়টি কীভাবে বিবেচনা করা হয় জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘একেবারেই কমে যাবে। শনাক্ত হবে না। আবার এক দুই মাস পর শনাক্ত হলে তখন তাকে পুনঃসংক্রমণ বা পুনঃঢেউ বলা হয়। অর্থাৎ সংক্রমণের গ্রাফটা হবে ঠিক ঢেউয়ের মতো। একটা শেষ, আরেকটা শুরু। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন। সেসব ক্ষেত্রে জিরো শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশের কম ধরে পুনঃসংক্রমণ বা পুনঃঢেউ হিসাব করা হয়।
ড. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, ‘ঘনবসতি, দরিদ্র দেশ বা যেখানে খুব ভালো ব্যবস্থা নেই- সেসব জায়গায় আমরা ধরি ‘অ্যাটলিস্ট লেস দ্যান ফাইভ পারসেন্ট। কিন্তু আমাদের কি ৫ শতাংশে নেমেছে। লেস দ্যান ফাইভ পারসেন্ট তো নেই; ফাইভ পারসেন্টেও নামেনি। দশের নিচেও কি নেমেছে? নামেনি। আর এখন সংক্রমণ ১৫ শতাংশের উপরে। দ্বিতীয় ধাক্কা না; এটা হচ্ছে কমে আবার শার্প রাইজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, সাউথ কোরিয়া; ইতালি-ওখানেও এক-দুই মাস শনাক্ত হয়নি। পরে একটা-দুটো করে আবার বাড়ছে। ওদের দেশে আমরা বলতে পারব সেকেন্ড ওয়েব।’
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাক হোসেন বলেন, প্রথম ধাক্কা শেষ না হলে দ্বিতীয় ধাক্কা হবে না-এমনও কথা নেই। আমাদের শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নামেনি বরং এখন একটু উঠেছে। কিন্তু এটাকে দ্বিতীয় ঢেউ বলা যাবে না। এটা আবার নেমেও যেতে পারে। সর্বনিম্ন যেখানে ছিল দুই সপ্তাহের মধ্যে সেখান থেকে যদি দেড় গুণ বাড়ে এবং দেড় গুণ বৃদ্ধিটা যদি অব্যাহত থাকে অন্তত চার সপ্তাহ। তাহলে আপনি দ্বিতীয় বড় ধাক্কা বলতে পারেন। গত রোববার থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, গ্রাফটা হতে হবে ঢেউয়ের আকারে। ওঠানামা করলে সেটা তো ঢেউ হবে না। তা তরঙ্গ ওয়েভের মতো বা হার্টের ইসিজি করার মতো হতে পারে।
যেসব দেশে জিরোতে নেমে আবার শুরু হয়েছে- সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওদের ওখানে বলতে পারেন আদর্শ ঢেউ। সব জায়গায় তো আদর্শ ঢেউ হয় না। প্রথম ঢেউ শেষ না হতে, দ্বিতীয় ঢেউ হতে পারে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রথম ঢেউ হলো। সেই ঢেউয়ের তুলনায় এখন অনেক বড় ঢেউ হচ্ছে। ওটা নেমেছিল কিন্তু জিরো হয়নি। নিউইয়র্কে হয়তো জিরো হয়েছিল কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়েছিল। সেখানে এখন তৃতীয় ঢেউ হচ্ছে, জাপানে এখন তৃতীয় ঢেউ হচ্ছে। শ্রীলংকায় ছয়-সাত নম্বর ঢেউ হচ্ছে। অনেক জায়গায়ই ৫ শতাংশের নিচে যায়নি।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার কমেও যেতে পারে। ওঠা-নামা করছে। তবে আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। বয়স্কদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।