স্ট্যাম্প জালিয়াতিতে সরকারি কর্মকর্তারাও জড়িত
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:৩০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২০
জাল-জালিয়াতি নতুন কিছু না। সারা দেশে বিছানো জালিয়াত চক্রের জালে চলছে নানা কান্ড। জালিয়াতি করে এর সম্পদ ওকে পাইয়ে দেওয়ার চুক্তিও চলে তাদের মধ্যে। লেনদেন হয় লক্ষ লক্ষ টাকার। এ কাজে সাপ্লাই দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প, ডাক টিকিটও। সঙ্গে যোগ হয়েছে কোর্ট ফি জালিয়াতি। আর এই জালিয়াত চক্রে জড়িয়ে আছেন সরকারি কর্মকর্তারা। আদালতেরও বেশ কয়েকজন অসাধু কর্মচারীর তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ।
নজরদারিতে রাখা হয়েছে তাদের। তথ্যের সত্যতা মিললে ওই সব কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে স্ট্যাম্প ও দলিল আসল নকল যাচাই করার জন্য আলাদা লেজার মেশিন দিয়ে তা নির্ণয় করতে হয়। অন্য কোনো প্রক্রিয়া নেই। আর তাই স্ট্যাম্প ও ডাক টিকিট ডিজিটালাইজেশন করার জন্য টাকশালের কাছে আবেদন করবে গোয়েন্দা পুলিশ।
সম্প্রতি ১৮ কোটি টাকা মূল্যের জাল স্ট্যাম্প, ডাকটিকিট, কোর্ট ফি জালিয়াত চক্রের কয়েক সদস্য গ্রেফতারের পর তাদের সঙ্গে একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশ পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ১৯ নভেম্বর ওই জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে ডিবির রমনা বিভাগ। গোয়েন্দা রমনা বিভাগের জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মিশু বিশ্বাসের নেতৃত্বে পল্টন ও আশুলিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় জাল স্ট্যাম্প প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত একটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার, দুটি বড় ইলেকট্রিক সেলাই মেশিন ও একটি ভারী সেলাই মেশিন উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, জাল স্ট্যাম্প, ডাকটিকিট, কোর্ট ফি প্রস্তুতের কারখানায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই জাল স্ট্যাম্প, ডাকটিকিট, কোর্ট ফিগুলো কিছু অসৎ ভেন্ডরদের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হতো। এ কাজে সহায়তা করত অসাধু তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা। পেপারগুলোর প্রস্তুত থেকে শুরু করে বিতরণ, ব্যবহার পর্যন্ত পুরো বিষয়টিই তারা জানতেন।
ডিবি পুলিশ আরও বলছে, আদালতেরও বেশ কয়েকজন অসাধু কর্মচারীর তথ্য পেয়েছি আমরা। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তথ্যের সত্যতা মিললে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাঁচ হাজার টাকার কোর্ট ফি’র একটি বড় জাল স্ট্যাম্প বানাতে তাদের খরচ হয় দশ থেকে পনেরো টাকা। সেই দশ টাকার কাগজে স্ট্যাম্পের প্রচ্ছদ ও ভুয়া নম্বর দিয়ে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তারা। পাঁচশ’ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত স্ট্যাম্প জাল করার তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এই চক্রটির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অসাধু উকিল, ভে-র ও দলিল লেখকও। তারাই সুকৌশলে আসল স্ট্যাম্পের মধ্যে জাল স্ট্যাম্প ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।
জালিয়াত চক্র গ্রেফতারের ওই অভিযানের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘তারা দীর্ঘদিন ধরে জাল স্ট্যাম্প কিছু অসৎ ভেন্ডরদের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কারা কারা জড়িত আছে তা আমাদের তদন্তে বের হয়ে আসবে এবং অনতিবিলম্বে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সিভিল মামলার আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মিঠু গণমাধ্যমকে বলেন, জাল স্ট্যাম্পযুক্ত কোনো চুক্তি করলে, সাধারণত চুক্তির কোনো সমস্যা হয় না। তবে নানাবিধ জটিলতা থাকে। স্ট্যাম্প জাল এটা প্রমাণিত হলে আবার সমমূল্যে নতুন স্ট্যাম্প সেখানে সংযুক্ত করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে যিনি ইচ্ছা করে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছেন, তার নামে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। তাছাড়া কোনো বৈধ ভেন্ডর হয়েও যদি বেশি লাভের আশায় জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিশু বিশ্বাস আরও বলেন, আমরা শিগগিরই টাকশালের কাছে স্ট্যাম্প ও দলিল ডিজিটালাইজেশন করার জন্য আবেদন করব। এতে সহজে মানুষ যাতে জাল স্ট্যাম্প ও ডাকটিকিট নির্ণয় করতে পারে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন জাল স্ট্যাম্প তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারিয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষও প্রতারিত হয়েছে। এ ধরনের অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব।